বাংলার বস্ত্র
শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল যে তাঁত চালানো কৃষির সঙ্গে করা হত, চাষীরা
বহুসময় চাষের কাজ শেষ হলে হাল ফেলে তাঁত ধরতেন এবং উল্টোটাও হত। উনবিংশ শতকের
শুরুতে জেমস টেলর লিখছেন রায়ত তার তাঁত বোনার মন্দা মাসগুলোয় চাষ করছে আবার চাষ
শেষ করে তাঁতও বুনেছে, সারা ভারতে যে তাঁতিরা মোটা কাপর বোনেন এটা তাদের সাধারণ
চরিত্র, কিন্তু ঢাকায় এটা হত না, তাঁত বোনা একটা খুব পরিচিত এবং সবসময়ের পেশা A ryot [peasant]
quitting his plough to work at the loom or leaving
the latter in order to resume the former is a common occurrence, especially
among those whd make coarser cloths in many parts of
India but in Dacca this is seldom the case, weaving being there a distinct
trade, to which those practicing it devote their whole-time attention(James Taylor, Topography
and Statistics of Dacca, p.73)।
কিন্তু অষ্টাদশ
শতকের শুরুতে এমন কি ঢাকায় তাঁতি বা কারিগরেরা সরাসরি কৃষি কাজে চলে গিয়েছেন তাঁত
ছেড়ে। ১৭৩৬ সালে ঢাকার এক কুঠিয়াল লিখছে বহু চরকা কাটনি এবং men that served
weavers তারা apply themselves
to agriculture in order to pay their rents এই সঙ্খ্যাটা ক্রমশঃ বেড়েছে(BPC, vol. 11,
ff.288vo-89, 28 Aug. 1.736)। ঢাকার কাপড় উৎপাদন শিল্প নিয়ে প্রতিবেদনে জন টেলর লিখছেন
অষ্টাদশ শতকের শেষে ঢাকায় কাপড়ের চাহিদা কমেছে, তারা তাঁত ছেড়ে অন্য পেশায়, বিশেষ
করে কৃষিতে চলে যাচ্ছে(Home
Misc., vol.
456
F; f.
219)। চাষী-কৃষক পরিবারের মহিলাদের হস্তশিল্পে জুড়ে থাকা বহুকালের প্রথা, সপ্তদশ
শতকের কবি মুকুন্দরাম বলছেন কৃষক পরিবারের মহিলারা তাঁতের জন্যে সুতো কাটতেন(T. Raychaudhuri, Cambridge
Economic History of India, vol. I, p.279)। অষ্টাদশ শতকের আগেই চাষী কৃষক তার নিজের কাপড় যেমন
বুনতেন তেমনি তিনি বাজারের জন্যেও কাপড় বুনতেন। সেই সময়ের সাহিত্য থেকে আমরা
স্পষ্ট বুঝতে পারি, যে কৃষক-চাষী তার উতপাদিত পণ্য বিশেষ করে কাপড় সাপ্তাহিক হাটে
বিক্রি করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছে। সে সময় যে সব ছোট/প্রান্তিক কৃষক ছিলেন, যারা নিজেদের
খাওয়ার জন্যেই চাষ করতেন, বাজারের জন্যে উদ্বৃত্তত হত না, তাদেরও কাপড়ও বুনে
বাজারে বিক্রি করা খুব বেশি ব্যতিক্রমী কাজ ছিল না। এটা হয়ত সত্যি যে সেই একই চাষী,
চাষও করে আবার রেশম উৎপাদনের প্রাথমিক কাজগুলি – তুঁত চাষ থেকে গুটি থেকে সুতো বার
করা পর্যন্ত কাজগুলি সম্পাদন করতেন – শুধু কাপড় বোনার কাজটা চরম দক্ষতার কাজ ছিল
বলে সেটা করতেন না।
ক্ষুদ্র চাষী-কৃষক
পরিবার কাপড় উৎপাদনের মৌল একক যেমন ছিলেন, তেমনি বহু তাঁতের দোকান (weaving shops) এবং
প্রধান তাঁতির উল্লেখ পাচ্ছি। ১৭৩৬ সালে ঢাকা কুঠিয়াল লিখছেন, এই ধরণের দোকান
যেখানে চরকা কাটনি এবং অন্যান্যরা তাঁতিদের কাজ করতে সাহায্য করতেন( BPC:, vol. 11,
ff.288 vo - 89, 28 Aug. 1736)। মধ্য অষ্টাদশ শতকে তাঁতিদের লাভের বিষয়টা আলোচনা করতে
গিয়ে জন টেলর কাপড় বোনার জন্যে প্রপধান তাঁতি সুতো আনছেন( Home Misc., vol.
456F, f.145)। ১৬৭০ সালে হুগলীতে প্রধান তাঁতির উল্লেখ পাচ্ছি, যিনি
তাঁতি দল আর মধ্যস্থদের মধ্যে যোগাযোগের কাজ করতেন, তিনি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে
প্রায় নেতৃত্ব দিতেন, তবে সেই সূত্ত্র থেকে তার বিস্তৃত কাজের এলাকা এবং তার
সামাজিক অবস্থানের কোনও কিছুই আজ আর জানা যায় না( Om Prakash, Dutch Company, p. l 07)। তবে
এটা পরিষ্কার যে করমণ্ডল উপকূলে তার যে ভূমিকা ছিল, বাংলার তাঁতি অধ্যুষিত গ্রামে এই
ধরণের মানুষের খুব বেশি দ্যাখা মিলত না( S. Arasaratnam 1' Weavers,
Merchants and Company', IESHR, vol. XVII, no. 3, pp.
265.-266, 277)। গ্রামে তার যদি কোপ্ন উপযোগিতা থাকত তাহলে তার মত
মানুষের উল্লেখ কোন না কোন সূত্রে পাওয়া যেত। টেলর লিখছেন ঢাকায় তাঁত বস্ত্র
উৎপাদনের কেন্দ্রে থাকতেন গুরুতাঁতি(master-weavers) যার দুটো তিনটে
তাঁত আছে যিনি শিক্ষানবিশ(নিকারি, apprentice) এবং কারিগর(a journeyman) নিয়োগ
করতেন(J
Taylor, Cotton
Manufacture, p.
78, quoted in D.B. Mitra, 'cotton Weavers, p. 39-40)। একই সময়ে এটাও
মাথায় রাখা দরকার, মধ্য অষ্টাদশ শতকে তাঁতি সম্প্রদায়ের স্বাবলম্বী এবং সম্ভ্রান্ত
পরিবার নিজেদের বিনিয়োগে উৎপাদন করে নিজেরাই বাজারে বিক্রি করতেন(Eur. Mss. D. 283,
f. 21; William Bolts, Considerations,
p.194)। ঢাকার
কিছু তাঁতি কিছু অতিদক্ষ চরকা কাটনি a number
of most skilful spinnersকে অগ্রিম দাদন ও বরাত দিয়ে রাখতেন অনেক সূক্ষ্ম সুতো
সরবরাহ করার জন্যে(Home
Misc., vol. 456F, f.
153)।
No comments:
Post a Comment