তাঁতিদের গরীবির
অভিযোগ
তাঁতিদের রোজগার
যাই হোক না কেন, অষ্টাদশ শতকের
প্রথমার্ধের আমাদের আলোচ্য সময় ধরে এবং সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধেও তাঁতিদের আর্থিক
অবস্থা শুধু খারাপই ছিল না, নিরবিচ্ছিন্নভাবে তথ্য বলছে তারা গরীবও ছিল এমন অভিযোগ
রয়েছে(S.
Chaudhuri, Trade
and Commercial Organization, pp. 237-38 প্রবন্ধ দেখুন
সেখানে আমি ভুলভাবে বলেছি 'the lot
of the poor weavers' remained the same 'despite the increase in production
and competition amongst buyers'.)। weavers·
are too poor to be trusted with
[advance] money' বা none of the weavers worth any money বা necessitous
circumstances of the weavers বা the poverty
of the weavers obliges the gomastah to be very careful in
the advance of money' এইসব লব্জগুলি বিভিন্ন ইওরোপিয় তথ্যসূত্রে বলা হয়েছে (BPC, vol. 11, f. 289, 28 Aug. 1736; Fact. Records,
Kasimbazar, vol. 6, 12 June 1743, 2 July 1743, 1 Marc,:h 1744; Fact. Records,
Dacca, vol.~.
~ilnex to Cons1,dt., 17
Nov.
1754;
FV(IHC,
vol.
I, pp. 811,
824, 919)। এই লব্জগুলি
লেখা হত আদতে ব্যবসায়ি বা গোমস্তাদের বেশি কাপড়ের দাম দাবি করার প্রেক্ষিতে। তবে
কোম্পানি আমলারা তাঁতিদের দারিদ্রের কথা কয়েকবার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিপুল
পরিমান তাঁত বস্ত্র উৎপাদন, তাঁতিদের দরকষাকষি করার ক্ষমতা আর দক্ষতার প্রেক্ষিতে
তাঁতিদের চরম দারিদ্রের অভিযোগের বয়ানটা কিছুতেই খাপ খায় না। এই প্রেক্ষিতে ওর্মের
ভাবনাটা গুরুত্বপূর্ণ, ...
the dread of extortion or violence from the officers of the district
to which he [the weaver] belongs, makes it prudence in
him to appear; and to be poor; .s. o that the chapman who sets
him to work, finds him destitute of every thing
but his loom, and is
therefore obliged to furnish him with money, ... in order to purchase
materials, and to subsist him until his work
is finished .... (Orme,
Historical Fragments, p. 9)। এই দৃষ্টিভঙ্গীটা যদি সত্য হয়, তাহলে তাঁতিদের দারিদ্র্য
কি সত্যি না ওপর ওপর দেখানোর?
আজকে যেখানে
দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে এই বিষয়ে বলা খুব সহজসাধ্য কাজ নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষক বলেছেন,
the
poverty of the weavers remains an unidentified
historical concept, আমার মনে হয় এই দৃষ্টিভঙ্গীটাই আপাতত ঠিক(K.N. Chaudhuri, Trading
World, p. 270.
Also
see his general argument on the subject, pp. 268-71)।
তাঁতিদের দারিদ্রের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধাচরণ করে কোন কিছু নতুন
সিদ্ধান্তে আসা খুবই সমস্যার, যদিও সেসময় বাংলার তাঁতিরা বিপুল বস্ত্র উৎপাদন করেছেন।
কোম্পানির মহাফেজখানায় যে সব তথ্য রাখা আছে তার থেকে এটা প্রমান হয় যে তাঁতি আর
কারিগরেরা বুঝতেন, জানতেন যে তাদের তৈরি বস্ত্রের একটা বিশ্ব এবং বিপুল বাজার আছে
বা যখন দাম দস্তুর করা হচ্ছে তারা যুক্তি দিচ্ছেন, afford them a sustenance স্তরে পারবেন
না বা নানান ধরণের সামগ্রীর দাম বাড়ার দরুণ তারা বলছেন যে পণ্যের দাম না বাড়ালে এই
কাজ করা সম্ভব নয় ইত্যাদি(উদাহরণস্বরূপ দেখুন see BPC, vot 16, f. 371, 14 Dec: 1743; Fact. Records,
Kasimbazar; vol. 6, 6 Dec. 1743; Fact. Records, Dacca; vol. 3, 17
Nov. 1754)। এমন কি এটাও আমরা পাচ্ছি যে কোন একটা বিশেষ কাপড়,
সামগ্রীর দাম বাড়ার দরুণ উতপাদন করা যাচ্ছেনা তখন, অথবা আরও বেশি ভাল দাম পাওয়ার
জন্যে তাঁরা পরিকল্পনা করে নতুন ধরণের কাপড় তৈরি করছেন ইত্যাদি(BPC, vol. 17,
f.129, 11 June 1744; f.
151,
12 July 1744)। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁতিকে যেহেতু শুধুই দাদন
দেওয়া হত, ব্যবসায়ী বা কোম্পানি তাঁতিকে সুতো দিত না, তাই তার পক্ষে বাজার থেকে
নানান ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সুতো দিয়ে কিছুটা নিজের রোজগারের হেরফের করা
সম্ভব ছিল (এবং সেই জন্যে হয়ত, তাঁতি জানে সে কেমন করে তাঁত বুনবে লব্জটার উদ্ভব
হয়েছে? - অনুবাদক), আগেই আমরা দেখিয়েছি জন টেলারের হিসেব অনুযায়ী দামি কাপড় তৈরিতে
তাঁতির ৪১ টাকা থাকত, কিন্তু সে এমন সুতো ব্যবহার করত যে তার লভ্যাংশ আরও ৬টাকা
বাড়িয়ে নিয়ে ৪৭টাকা করে নিতে পারত (Home Misc., vol. 456 F, 'ff. 145-49)। ১৬৮৯
স্যর জন চাইল্ড বলছেন, তাঁতিরা যদি এতই গরীব হয়, যে তারা দাদন ছাড়া পণ্য উৎপাদন
করতে পারবে না, তারা আদতে সত্যই গরীব নয়, কারণ তারা নগদে খদ্দেরদের পণ্য বিক্রি
করে(DB,
vol. 92, f. 69, 11 Sept. 1689)। এটা বাস্তব যে পাইকারি খরদদারেরা, বিশেষ করে এশিয়
বণিকেরা যেমন কোম্পানির হয়ে অগ্রিম দিয়ে কাপড়ের বরাত দিতেন, তেমনি নিজেদের ব্যবসার
জন্যে কিন্তু নগদ দিয়েই কাপড় কিনতেন।
আমাদের আলোচ্য
সময়ে এই বিষয়ে এত পরস্পর বিরোধী তথ্য আছে তাঁতিদের নিয়ে, তা দিয়ে কি করে আমরা
তাঁতিদের দারিদ্র্য বিশ্লেষণ করি, যদিও সেটা সতিই হয়! আমাদের মনে রাখতে হবে
চাষীদের মত তাঁতিরাও এক জাতি নয় – এবং এই সমাজে স্তরীভবন সম্ভব ছিল। বিভিন্ন তথ্য
থেকে পরিষ্কার যে সে সময় নানান স্তরের তাঁতি ছিল, এক দিকে যেমন প্রধান তাঁতি ছিল
তেমনি ছিল সাধারণ তাঁতি আর তার সহায়ক, ছিল গ্রামস্তরে পরিবার ভিত্তিক পুরো সময়ের
তাঁতি।
No comments:
Post a Comment