দাদনি ব্যবস্থা
বাংলার
বস্ত্রশিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থায় ভূমিপথ, আন্তদেশিয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মৌল
ভিত্তিটার বড় অংশই দাঁড়িয়েছিল বিভিন্ন ধরণের মধ্যস্থ যেমন দালাল গোমস্তা পাইকার
ইত্যাদি মার্ফত তাঁতিদেরকে অগ্রিম দাদন দেওয়ার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। অগ্রিম
দিয়ে বানানো উৎপাদিত পণ্যগুলিকে বলা হত পাটন বা পাটনি দ্রব্য। এছাড়াও একই সময়ে
আমরা আরেকটি শব্দবন্ধ, খুশ খরিদএর সঙ্গে পরিচিত হই, যার মাধ্যমে অষ্টাদশ শতকের
প্রথমার্ধে বোঝানো হত যে নগদ অর্থে যে পণ্য কেনা বোঝানো হত। এতদসত্ত্বেও, এটা
সহজেই হয়ত বলা যায়, যে সব বস্ত্র অন্তর্দেশিয় বা দূরবাণিজ্যের প্রয়োজনে উতপাদিত
হত, সেই উৎপাদনের সঙ্গে অগ্রিম দাদন দেওয়ার চুক্তি ব্যবস্থা অবশ্যই অঙ্গাঙ্গীভাবে
জড়িয়েছিল। এখানে বলা দরকার, স্বচ্ছল তাঁতিরা নিজেদের পুঁজিই ব্যবহার করতেন কাপড়
তৈরিতে যা আমরা সেই সময়ের অনেক লেখা সূত্র পেয়ে থাকি, যার একটা উদ্ধৃতি এই লেখার
সঙ্গে তুলে দিলাম যা আমরা মনে হয় ব্যতিক্রমই, নিয়ম নয় It was common
practice for respectable families of the weaver-caste
to employ their own capital in manufacturing goods, which they
sold freely on their o~n accounts. At Dacca in
one morning 800 pieces of muslin brought.by the weavers of
their own accord have been purchased at the door of one gentleman (Mss. Eur. D. 283,
f.21; William Bolts, Considerations,
pp.
193-94)।
দাদন ব্যবস্থার মৌলিক
কারণগুলি আমরা তিনটে মৌলিক সূত্রে ভাগ করতে পারি(K. N. Chaudhuri, Trading World, pp.
256-57, 260-61; T. Raychaudhuri, CambridgeE
conomicJ fzstoryo f India, vol. I, ·pp. 281-82; Om Prakash, Dutch Company, pp. 88-89; S.
Arasaratnam, 'Weavers, Merchants, and Company'., IESHR, vol. XVII, no. 3, pp. 268-69)। প্রথমত তাঁতির যে পুঁজির প্রয়োজন হত, দাদনি
ব্যবস্থা তাকে তার প্রয়োজনীয় নগদ পুঁজি জোগান দিত যাতে সে তার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল
যোগাড় করতে পারে এবং পণ্য উৎপাদনের সময় সে নিজে আর তার পরিবারের ক্ষুন্নিবৃত্তি
চালাতে পারে। দ্বিতীয়ত এই অগ্রিমের মাধ্যমে সে তার চুক্তির পরিমান সরবরাহের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তৃতীয়ত বণিকদের কাছে সে খুব বড় অগ্রিম অর্থ দাদন
নিয়ে যে ব্যবসায়ীকে প্রতিযোগিতাময় বাজার থেকে দূরে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারে –
যেহেতু আমরা যে সময়টি নিয়ে আলোচনা করছি, সপ্তদশ শতকের শেষ এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথম
পাদ, তাঁতের বাজারে প্রচুর উতপাদক, ব্যবসায়ী কোন এক তাঁতিকে বিশাল বড় অগ্রিম দিয়ে
গেলে সাধারণত তার পক্ষে অন্য কারোর কাছে যাওয়া কিছুটা হলেও বন্ধ হয়। পরম্পরাগত প্রথা
হিসেবে বলা যেতে পারে আমরা যে সময় নিয়ে আলোচনা করছি, সে সময় দাদন ব্যবস্থা বিপুলভাবে
বিস্তৃত হয়েছিল an expanded and expanding marketএর প্রয়োজনে এটা হয়ত কিছুটা ঠিকই। কিন্তু the need to operate through the system of contracts increased considerably এই বাক্যের সত্যতার দাবি সত্যই মেনে নেওয়ার কোন
যুক্তি নেই আজ(Om Prakash, Dutch
Company, p. 98)। বাংলা বহুকাল ধরে ভারতজোড়া বাজারের সঙ্গে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, পশ্চিম ও মধ্য
এশিয়া, পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং উত্তর আফ্রিকারমত তার পরম্পরাগত বাজারকে
নিয়মিত বিচিত্র ধরণের বিচিত্র আকারের বিচিত্র আঙ্গিকের বিচিত্র শিল্পসুষমার কাপড়
সরবরাহ করে আসছিল ফলে প্রমিতিকরণ খুব একটা নতুন শব্দ নয় তার কাছে। এর সঙ্গেও বলা
দরকার আমাদের আলোচ্য সময় ইওরোপিয়রা যে নতুন বাজার তৈরি করল সেই বাজার কোন অর্থেই
তার পুরোনো বাজারের থেকে খুব বড় ছিল না।
No comments:
Post a Comment