আমরা এই আলোচনায়
যে সময়টি নিয়ে আলোচনা করছি, সেই সময়জুড়ে বাংলার বস্ত্র শিল্প ব্যাপক বৈচিত্রের
বিশেষীকরণ করতে পেরেছিল শুধু আড়ংগুলির আলাদা আলাদা পণ্য চরিত্র তৈরিতেই নয়, বরং
আড়ংএর কাপড়গুলির উৎপাদন বৈচিত্র্যেও। সাধারণভাবে প্রত্যেক আড়ংএ যেমন বিশেষ
চরিত্রের কাপড়ে উৎপাদন হত, তেমনি মাথায় রাখতে হবে শুধু আঞ্চলিক বৈচিত্রই নয়, যে সব
আড়ংএ একই কাপড় তৈরি করে তারা আলাদা আলাদা বৈচিত্রের কাপড় তৈরি করত। একই নামের কাপড়
তৈরি করা দুই আড়ংএর মধ্যে কাপড়ের গুণমানের মধ্যে যেমন পার্থক্য হত তেমনি সেগুলোর
আকারেও আলাদা হত। প্রত্যেক আড়ং অন্য আড়ংএর থেকে সচেতনভাবে একই কাপড় আলাদাভাবে তৈরি
করত। এই আলাদাত্ব নির্ভর করত কাপড়ের সূক্ষ্মতা, এবং তাঁতি আর অন্যান্য কারিগরের
দক্ষতার ওপর। বিভিন্ন জেলার আলাদা আলাদা আড়ং একইধরণের বস্ত্র যদি তৈরি করে, তাহলে
তাদের শুধু কাপড়ের নামের পার্থক্য দিয়ে তাদের চেনার কাজ করাত না, বরং তারা আরেকটাও
নাম জুড়ত। তালিকা ৬.১এ(১৫৪ পাতা) আমরা আমাদের বক্তব্যের সমর্থনে উদাহরণ দিয়েছি
১৭৪২ সালে ব্রিটিশদের কলকাতা কুঠির চাহিদা অনুযায়ী দুই ধরণের প্রধান মসলিন খাসা আর
মলমলএর।
যদিও ঢাকা জেলা
বিখ্যাত ছিল শুধুই বাংলার সূক্ষ্মতম কাপড় মসলিনের জন্যে, কিন্তু তার মধ্যে
ভালতমগুলি তৈরি হত জঙ্গলবাড়ি, বাজিতপুর এবং সোনারগাঁওতে। সুক্ষ্মতম, কাপড়ের জমিতে
কাজ ছাড়া মসলিন যার নাম ছিল মালবুস খাস(royal
clothing) এই তিন আড়ংএ তৈরি হত মুঘল আমলজুড়ে। এর সঙ্গে প্রত্যেক আড়ং
তাদের দক্ষতা দিয়ে উতপাদনগুলির মধ্যে তাদের আড়ংএর বৈচিত্র এঁকে দিতে পারত। এই কাজে
তাদের চরমতম দক্ষতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল বছরের পর বছর বংশ পরম্পরায় কাজের জ্ঞান আর দক্ষতা
আর্জনে। জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুরের আড়ংএর তাঁতিরা মসলিনের close texture, তৈরি
করতেন, সোনারগাঁওএর আড়ংএর তাঁতিরা আবার দক্ষ ছিলেন thin and clear muslins তৈরিতে(Home Misc., 456 F, f.135)। শুধু তাঁতির
বোনার দক্ষতাতেই এই বৈচিত্র তৈরি হয় না, এই বৈচিত্র তৈরি করতে হয় বিশদ পরিকল্পনা
করে বোনার অনেক আগে সুতো কাটা, ধোয়া ইত্যাদি কাজ থেকেই। এই পরিকল্পনা নির্ভর
বৈচিত্র্য তৈরি করার দক্ষতাতেই বিশ্ব জোড়া বিপুল বাজার তৈরি করতে পেরেছিল বাংলার
বস্ত্র শিল্প। সব থেকে ভাল সুতো কাটা হত জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুরে the fabrics of
which arangs, from 'the great
skill ,with which the thread is prepared, possess a
peculiar softness (Ibid.,
f.129)। ড্যানিশ সমীক্ষা আমাদের জানাচ্ছে certain washermen in all weaving
districts, whose washing can be imitated
nowhere(Ole
Feldbaeck, 'Cloth Production in Bengal', BPP, p. 132)। জন টেলর
লিখছেন, জামদানি তৈরি করার একচেটিয়া দক্ষতা ছিল ঢাকার আড়ঙের তাঁতিদের। যে সব তাঁতি
জামদানি তৈরি করত তাদের নাম ছিল জামদানি তাঁতি(Fact. Records, Kasimbazar, vol.
12, 20 Dec. 1753; NAI, Home Misc., vol. 16,
para. 61, ff. 183-84, Fort William Council to Court, :1 reb. 1751;
f.250, para. 70, Fort William Council to Court, 28 August. 1751)।
একইভাবে সিল্ক-পিস কাপড়, jamawars তৈরি করত বিশেষ এক দল তাঁতি তারা ঐ
কাজেই দক্ষতা অর্জন করেছিল(K.N.
Chaudhuri, Trading World, p.241)।
No comments:
Post a Comment