সুতো তৈরি করা আর
কাটনা(
spinning), কাপড় তৈরিতে
দুটো আলাদা আলাদা বিষয় এবং এগুলি বস্ত্র উতপাদন ব্যবস্থায় আলাদা আলাদা কর্মকাণ্ড
হিসেবে এবং তাঁতি পরিবারের সদস্যদের এটি আনুষঙ্গিক পেশা হিসেবে পরিগণিত হত। তুলোও
চাষী-কৃষক তার জীবকানির্ভর ব্যবস্থা হিসেবে চাষ করত। তবে বেশ কিছু সূত্রে পাচ্ছি
যেখানে বলা হচ্ছে যে সব তাঁতি বাজারের জন্যে কাপড় তৈরি করে সে সাধারণত খোলা বাজার
থেকে সুতো কেনে। বাড়িতে তুলো কেটে তাঁতিদের জন্যে সুতো তৈরি করা একটি স্বাধীন পেশা
ছিল এবং সব শ্রেণীর পরিবারের মেয়েদের বাড়ির কাজ কর্মের মাঝখানে তুলো থেকে সুতো
তৈরি করার উদ্যম ছিল। এটা মজার যে বাংলায় তাঁত চালানো যদিও জাত ভিত্তিক বংশপরম্পরার
পেশা, কিন্তু সুতো কাটার জন্যে কোন থাকবন্দী ছিল না, এমন কি যুগি, তাঁতি, জুলুয়া
মহিলাদের মতই উচ্চবংশের ব্রাহ্মণ কন্যারাও সুতো কাটতেন চরকা দিয়ে অবারিতভাবেই। চরকা
কাটতে অসম্ভব দক্ষতা প্রয়োজন হত। যদিও সুতো সব কটা আড়ংএর তৈরি হত, কয়েকটি
ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকার জঙ্গলবাড়ি আর বাজিতপুরে সব থেকে ভাল চরকা কাটনি ছিল। এই আড়ংগুলিতে
বিশেষ করে খুব নরম সুতো তৈরি হত কারণ, the superior skill with which the
thread was spun। ঢাকার ১৮০০ চরকা কাটনির মধ্যে এই ধরণের দক্ষতাওয়ালী
কাটনির সংখ্যা ৩০এর বেশি ছিল না (Ibid., ff. 129-31)।
চরকা কাটার কাজ
ছিল অসম্ভব শ্রম নিবিড় উদ্যম। দীর্ঘ এবং শ্রমসাধ্য সময় ব্যয় করে সুতো কাটা যেত
কিন্তু নানান বিষয়ের জন্যে দীর্ঘ সময় কাজ করা চরকা কাটনির পক্ষে সম্ভব হত না।
সকালে কয়েক ঘন্টা এবং সন্ধ্যেয় কয়েক ঘন্টা চরকায় তুলো থেকে সুতো কাটা হত যখন
পরিবেশের তাপ খুব বেশি থাকে না; মধ্যদিনে সুতো কাটলে সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
প্রবল থাকে। জন টেলর বলছেন একজন ভাল দরের কাটনি যদি সারা মাসে সারা দিনের সব কটি
সময় ব্যয় করে সুতো কাটে আট আনা(আধ টাকা ওজনের) ওজনের বেশি সুতো কাটতে পারবেন না। কিন্তু
কাটিনি যেহেতু অন্যান্য পারিবারিক কাজকর্মতে নিযুক্ত থাকে, তাই তার পক্ষে দৈনন্দিন
৩ ঘণ্টার বেশি সুতো কাটার কাজে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে কোন সুতো কাটনির থেকে
এক মাসে এক সিক্কার(এক সিক্কা টাকার এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ ২/৫ আউন্স) বেশি ওজনের
সুতো কাটা সম্ভব হয় না(Ibid.,
ff. 131-35)। উপরন্তু
দীর্ঘ সময় ধরে চরকা কাটায় যেহেতু চোখের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, তাই ৩০ বছর পরে একজন
মহিলার চরকা কাটার কাজের ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। যেহেতু সুতো কেটে তার রোজগার
তুলনামূলকভাবে কম হত, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার কোন অতিরিক্ত উৎসাহ জাগত না
কাটনির অন্তরে। কিন্তু কাপড়ের চাহিদা বাড়ায় সুতোরও চাহিদা বাড়তে থাকল, কিন্তু সেই তুলনায়
রোজগার না বাড়ায় কাটনিরা দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে চাষের দিকে ঝুঁকতে হয়।
No comments:
Post a Comment