৬.২ উতপাদনের
ব্যবস্থাপনা
মুঘল প্রথা
জন টেলর(যতদূর সম্ভব সুশীলবাবু কোম্পানি ডাক্তার
জেমস টেলরের কথা বলছেন যিনি A sketch of the topography & statistics of Dacca বইটি লিখেছিলেন
- অনুবাদক) মুঘল আমলে সাম্রাজ্য পরিচালিত কারখানাগুলির, যেখানে উচ্চগুণমানের কাপড়
তৈরি হত অভিজাত এবং সম্রাটের আত্মীয়স্বজনদের জন্যে, সেগুলির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন
তিনি। সেখান থেকে আমরা অষ্টাদশ শতকের বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে অবহিত হতে পারি। তিনি বলেন মুঘল সরকারের অধীনে মালবুস খাস কুঠি(factories or
sheds for making 'royai
clothing') ছিল ঢাকা, সোনারগাঁও এবং জঙ্গলবাড়িতে। কুঠিগুলি দেখাশোনার
দায়িত্বে থাকতেন যে আমলা তার পদের নাম ছিল দারোগা, তার দায় ছিল সাম্রাজ্যের
প্রতিনিধিদের জন্যে যে সব কাপড় বানানো হত সেগুলোর নজরদারি করা। সোনারগাঁও আর
জুগদিয়ায় তাঁতি আর তার তাঁতের জন্যে কারখানার চালা তৈরি করা হয়েছিল। তাঁতিগুরুদের
বাছা হত, তাদের নাম পঞ্জীকরণ করা হত এবং কারখানাগুলিতে তাদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক
করা হত। দারোগার নেতৃত্বে মুকিম নামক পদাধিকারী দেখত তাঁতি যে সুতো আনত সেই সুতোটি
প্রাথমিকভাবে যে নমুনা হিসেবে বাছা হয়েছে সেটির অনুরূপ কি না এবং নমুনার সঙ্গে না
মিললে none
was permitted to be
used until it had been previously compared with। তাঁতিরা
কারখানায় আসছে কি না সেটা দেখার জন্যে পিয়ন লাগিয়ে রাখা হত এবং তারা পালিয়ে গেলে
তাদের সে শাস্তি দিত সে। টেলর বলেছেন কোন তাঁতিই স্বইচ্ছেতে কাজ করত না কারণ on account
of the inadequate profit which the cloths yielded them' এবং তারা যেহেতু নিয়মিত তাঁত বুনত, সেহেতু must have highly advanced
the skill of the weavers(Ibid.,
f. 163-169)।
টেলরের ওপরের বর্ণনা
থেকে বেশ কয়েকটি বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থাপনার চরিত্র আমরা আন্দাজ করতে পারি।
প্রথমটি হল, এমন কি সরকারি কারখানায় তাঁতিরা তাদের উতপাদনের একক, সুতো নিয়ে আসত।
টেলরের বর্ণনা যদি সত্য হয়, তাহলে অন্যান্য ব্যক্তিগত উদ্যমেরর কারখানাতেও তাঁতিরা
ঐ কাজ করত। এবং এর আগে যে আমরা দাদনি অগ্রিমের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছি,
অষ্টাদশ শতকে, সেখানেও এই ধরণের প্রথা আরও ব্যাপকতরভাবেই ছিল যে তাঁতিকে সুতো
অগ্রিম হিসেবে ধরিয়ে দেওয়া হত না, দেওয়া হত শুধু অগ্রিম অর্থ। দ্বিতীয়ত তাঁতিদের সরকারি
কারখানায় যে inadequate
profit হচ্ছে, সেখান থেকে আরেকটা বিষয় পরিষ্কার যে তারা সরকারি কারখানাতেও বাঁধা
মাইনের কর্মচারী ছিল না।
টেলরের বর্ণনাকে
যুক্তি সঙ্গতভাবে বিশ্লেষণ করলে একটা বিষয় পরিষ্কার কারখানায় অভিজাত এবং
রাজপরিবারের সদস্যদের জন্যে যে বস্ত্র উৎপাদন করত তাঁতি, সে সেই উৎপাদনের লাভ পেত
না, সেই উৎপাদনের লভ্যাংশ দারোগা, মুকিম ইত্যাদি ট্যাঁকস্থ করত। টেলর বলছেন
সিরাজের সময় জামদানির দাম ছিল ২৫০টাকা যার থেকে তাঁতিরা পেত ১৫০টাকা, বাকিটা আত্মস্যাত
করত আমলারা। টেলরের সমীক্ষায় আরেকটি বিষয় উঠে এল সেটা হল, এমন কি সদর মলবুস খাস
কুঠিতে রাজপরিবার এবং অভিজাতদের জন্যে যে কাপড় তৈরি হত, তার জন্যেও সরকারের পক্ষ
থেকে তাঁতিদের অগ্রিম দেওয়া হত(৩৬)। এই বয়ান থেকে প্রমান হয়, দাদনি বাংলা বস্ত্র
বয়ন শিল্পের বহুকালের প্রচলিত প্রথা – তাত্ত্বিকভাবে যা বলা হয় সপ্তদশ শতকের শেষ
এবং অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির অতিরিক্ত রপ্তানির চাহিদা
পূরণ করার জন্যে দাদনির উদ্ভব, সেটি সর্বৈব অনৃত, অসত্য।
No comments:
Post a Comment