Friday, August 4, 2017

হস্তশিল্প বনাম পরম্পরার ছোট উতপাদক - বিতর্ক

Biswendu Nanda Pinaki Guha এবং অন্য অন্যান্য 61- এর সাথে.
উপনিবেশ বিরোধী চর্চা
হস্তশিল্প বনাম পরম্পরার ছোট উতপাদক
আমরা যাকে হস্তশিল্প বা হ্যান্ডিক্র্যাফট বলছি সেই বলাটা কতটা সামাজিক, বাস্তবসম্মত সেটা ভাবা দরকার। এ বিষয়ে উইভার্স আর্টিজান এন্ড ট্রাডিশনাল আর্টিস্টস গিল্ডের(ওয়াটাগ) একজন হয়ে কিছু কথা বলার অনুমতি চাইছি। লেখাটা একটু বড় হবে -
১৮০০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৭০টি শিল্প দ্রব্য(সোরা, লোহা পিণ্ড, দস্তা, জং ছাড়া ইস্পাত মণ্ড ইত্যাদি) আর ১০০টির বেশি কৃষি দ্রব্য(কাপড়, নীল, আফিম, চাল, নুন, মোম, সুপুরি, তামাক, ভোজ্যতেল, অন্যান্য বনজ দ্রব্য, পান, কাঠ, হাতি ইত্যাদি) প্রায় একচেটিয়া রপ্তানি করত বৃহত বাংলা - আজকের পোকায় কাটা বাংলা নয়, সে ছিল পূর্বের মায়ানমারের প্রান্ত থেকে পশ্চিমে উত্তরপ্রদেশের প্রান্ত, উত্তরে তিব্বতের সীমা থেকে দক্ষিণে ওডিসা পর্যন্ত অঞ্চল - কিন্তু এর পশ্চাদভূমি আরও বড় ছিল - পশ্চিমে রাজস্থান পর্যন্ত আর দক্ষিণ পশ্চিমে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত - তো ভারতে, এশিয়, আফ্রিকার বাজারে কয়েক হাজার বছর ধরে এই জিনিসগুলি সরবরাহ করেছে গ্রামের ছোট উতপাদকেরা, যাদের আমরা হস্তশিল্পী বলে আসছি উপনিবেশের অনুসরণে।
ঔপনিবেশিক অর্থনীতিবিদেরা মনে করত, এবং আজও করে, গ্রামীন এই উতপাদকেরা প্রান্তিক, এরা উতপাদন না করলেও অর্থনীতির ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। এরা জাদুঘরের সামগ্রী, এরা যদি না বাঁচে তাহলেও খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। এই অর্থনীতি মৃত। এদের রাষ্ট্রীয় সহায়তার বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এই ভাবনার বেলুনটির গ্যাস নির্গত হয়ে গিয়েছে ২০০৮-১১ সালে। আমরা আজও মনে রাখি না যে এই মানুষেরাই -গ্রামের বংশ পরম্পরার ছোট উদ্যোগীরা - এখনও ভারতের অর্থনীতির ৮০%র অংশিদার, এখনও তারা বড় পুঁজির ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার বাইর্‌ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলেই ২০০৮ সালের ইওরোপ আমেরিকার অর্থনীতির মন্থনে উদ্ভুত বিষকে গলার্ধকরণ করেছিল এই উতপাদকেরা, অথচ নাম কিনেছিল, ভেঙ্গে পড়তে পড়তে বেঁচে ওঠা রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি, পিঠ চাপড়ানি পেয়েছিল ব্যাংক ব্যবস্থার অর্থনীতির মৌলিক চলকগুলির (বেসিক ফান্ডামেন্টালস) ভিত্তিগুলি।
আমরা এখনও মনে করি, সেটাই বাস্তব, গ্রামের আর্থব্যবস্থার জোরে টিকে রয়েছে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা - ব্যাংক ব্যবস্থা খুব বেশি হলে ১৫-১৭ শতাংশ মানুষকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের ব্যবস্থায় - উচ্চমধ্যবিত্তের বাইরে কত শতাংশ মধ্যবিত্তের জীবনের কতটা ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে তা কিন্তু গবেষণাযোগ্য; তার বাইরে রয়েছে বিশাল বিপুল গ্রামীন অর্থিনীতি, যার পরিমাপ আমরা বুঝেশুনে করিনা, করতে গেলেই রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির কঙ্কালসার চেহারাটা উলঙ্গ হয়ে দাঁড়াবে, বড় পুঁজির বাহ্বস্ফোটকে প্রকাশ্যে এনে ফেলবে।
এবং সেই গ্রাম্য আর্থব্যবস্থার মূল ভারসাম্য বজায় রাখছে কৃষক আর গ্রামের ছোটবংশপরম্পরার উদ্যমীরা।
যদি আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে স্থিতিশীল ভারতবর্ষ চাই, তাহলে শহরের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের অর্থিনীতির সবলীকরণ করার দিকে এগোতে হবে, শহরের অর্থ গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে, গ্রামের অর্থনীতিকে আঘাত না করে তাকে জোরদার করতে হবে - যে কাজটা আজ বাংলা শুরু করেছে - আর আমরা করতে যাচ্ছি।
একটা প্রশ্ন উঠবে, যদি গ্রামীন অর্থনীতি এতই সবল হয়, তা হলে আমাদের একে নতুন করে কাজ করার দরকার কি? আমাদের সহজ উত্তর আমাদের জন্য, ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো বিশ্বকে বাঁচাবার জন্য। আজ প্রমাণিত এই দুষণের রাজা, লুঠের সম্রাট শিল্পবিপ্লবীয় উতপাদন ব্যবস্থা বিশ্বকে ধ্বংস করার মুখোমুখি করে ফেলেছে - সেটা অনেকে বুঝলেও অন্তত মধ্যবিত্ত সমাজের কিস্যু করার নেই - কেননা তারা এই ব্যবস্থার চালকের আসনে। দিনের পর দিন এটি বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা এই গ্রাম্য অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বগুলি আলোচনা করার মাধ্যমে, এই অর্থনীতিকে জোরদার করার মাধ্যমে, ধ্বংস হতে বসা মধ্যবিত্ত, এই অর্থনীতি আর সর্বোপরি এই বিশ্বকে বাঁচাতে চেষ্টা অন্তত করতে পারি।
উইভার্স আর্টিজান এন্ড ট্রাডিশনাল আর্টিস্টস গিল্ডের(ওয়াটাগ) পক্ষ থেকে বন্ধুদের বিনীত নিবেদন, যাদের জোরে আজকের ভারত/ইন্ডিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের হস্তশিল্পী না বলে গ্রামভিত্তিক ছোট উতপাদক বলা চালু করি। অন্তত এই নবতম ভাষ্যটা চালু করার আমরা ভগীরথ হওয়ার সম্মান অর্জন করি।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
মন্তব্য করুন
11টি মন্তব্য
মন্তব্যগুলি
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
4 আগস্ট 2016, 09:58 AM-এ
পরিচালনা করুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
4 আগস্ট 2016, 09:58 AM-এ
পরিচালনা করুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
4 আগস্ট 2016, 10:00 AM-এ
পরিচালনা করুন
Sanjib Guharoy Ekhono Bristi kam bashir upar SHARE market othanama kare/.Temani khudra shilper upar nirvar karei brihat shilpa tilke thake- Esab jeneo Amra kichhu lok nyakami kari.
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
4 আগস্ট 2016, 10:19 AM-এ
পরিচালনা করুন
Dipankar Shibu একটা প্রশ্ন উঠবে, যদি গ্রামীন অর্থনীতি এতই সবল হয়, তা হলে আমাদের একে নতুন করে কাজ করার দরকার কি? আমাদের সহজ উত্তর আমাদের জন্য, ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো বিশ্বকে বাঁচাবার জন্য। আজ প্রমাণিত এই দুষণের রাজা, লুঠের সম্রাট শিল্পবিপ্লবীয় উতপাদন ব্যবস্থা বিশ্বকে ধ্বংস করার মুখোমুখি করে ফেলেছে - সেটা অনেকে বুঝলেও অন্তত মধ্যবিত্ত সমাজের কিস্যু করার নেই - কেননা তারা এই ব্যবস্থার চালকের আসনে। দিনের পর দিন এটি বিশ্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা এই গ্রাম্য অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বগুলি আলোচনা করার মাধ্যমে, এই অর্থনীতিকে জোরদার করার মাধ্যমে, ধ্বংস হতে বসা মধ্যবিত্ত, এই অর্থনীতি আর সর্বোপরি এই বিশ্বকে বাঁচাতে চেষ্টা অন্তত করতে পারি।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
5
4 আগস্ট 2016, 10:25 AM-এ
পরিচালনা করুন
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর4 আগস্ট 2016, 11:08 AM-এ
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal চিনেও আজকে লক্ষ লক্ষ ছোট উতপাদক আছেন এবং সারা বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তারকারী যে চিনা মাল তার অধিকাংশ উতপাদন এরাই করেন। বলিভিয়ায় ইন্ডিজেনাশ উতপাদকেরা ইভো মোরালেসের জনভিত্তির সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ অংশ। সফটওয়ার ইন্ডাস্ট্রির চলনটায় বড় পুজি আছে কিন্তু উতপাদন প্রক্রিয়াটা পুরনো ছোট উতপাদনের ধরনের সঙ্গে নানাভাবেই মেলে। অর্থনীতির সমগ্র ব্যবস্থায় ছোট উতপাদনের গুরূত্ব কখনো হারায় নি। আজকে জায়ান্ট পুজি যখন ছোট ছোট অ্যানিসিলারিকে আউটসোর্স করে তখন ছোট উতপাদনের কিছু গুণাগুণকেই সে আত্তীকৃত করতে চায়।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
3
4 আগস্ট 2016, 11:21 AM-এসম্পাদনা করা হয়েছে
পরিচালনা করুন
Kalyan Sengupta আমাদের দেশের কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান সমবায়ের দ্বারা ও ছোট উৎপাদকের মাধ্যমেই সম্ভব।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
1
4 আগস্ট 2016, 12:58 PM-এ
পরিচালনা করুন
Saikat Bhattacharyya kintu manush er je consumerism er proti akorshon seta jabe ki vabe?
rin grostho silpo somaj venge porar toto bastob obossoi
kintu vog er proti manush er akorshon er ki treatment? Biswendu Nanda
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর4 আগস্ট 2016, 01:37 PM-এ
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Saikat ভোগবাদে ডুবে রয়েছে শহুরে উচ্চবিত্তদের অনুকরণ করা হাতে গোণা মধ্যবিত্ত, এবং শহরের সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু অনুসরণকারী, যারা মধ্যবিত্ত হতে চায়। মধ্যবিত্তের কাজ হল মোটামুটি ভোগবাদে উৎসাহ দেওয়া এবং সেই পরিকাঠামো তৈরি করা। ফলে ভোগবাদ থাকবে, তার সঙ্গে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। মানুষ অল্পেতে খুশি, সে পথটা যদিও দালাল মধ্যবিত্ত পছন্দ করে না, তাই যাদের চাহিদা নেই, তাদের গরীব বলে দেগে দিয়েছে।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
4 আগস্ট 2016, 05:53 PM-এ
পরিচালনা করুন
Saikat Bhattacharyya Biswendu Nanda ami wb r grame ghure dekhechi
pramanik-jyoti surname er loke ra chash jomi te chash na kore kacha takar love sohor mukhi, computer business, quotay sorkari chakri korche.
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর4 আগস্ট 2016, 09:25 PM-এ
পরিচালনা করুন
Saikat Bhattacharyya Biswendu Nanda তাই যাদের চাহিদা নেই, তাদের গরীব বলে দেগে দিয়েছে।>> 100% correct
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর4 আগস্ট 2016, 09:26 PM-এ
পরিচালনা করুন
Ajay Datta আমিও কল্যান বাবুর সঙ্গে একমত। যদিও এ ব্যাপারে যারা এক্সপার্টরা তদের মতামত দেবেন। আমরা দেখেছি পশ্চিম বঙ্গে বড় শিল্প কিছুদিন লাভ জনক ভাবে চলে, তারপর ক্রমশ: পিছিয়ে পরে। দুর্গাপুরের শিল্পগুলির কথাই প্রমাণ হিসেবে বলা যায়।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর4 আগস্ট 2016, 05:07 PM-এ
পরিচালনা করুন
Biswendu Nanda Ajayদা কবে বড় শিল্প কবে লাভজনক হল? সরকারের কাছে বিনামূল্যে জমি, কর ছাড়, অবাধ জল ব্যবসারের পয়সা, পরিবেশ দূষণের কর ইত্যাদি না দিয়েই, শ্রমিককে প্রায় বিনামূল্যে ব্যবহার ক'রে, ব্যাঙ্কের ধার না শোধ করে সে লাভ করে। য়াপনি এ বিষয়ে আমার থেকে বেশি জানেন। ফলে ছোট পরম্পরার শিল্পের সাদাকলারের ভিক্ষের বালাই নেই, সে স্বয়ম্ভর, তার দায় মানুষ আর সমাজের কাছে।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
4 আগস্ট 2016, 06:00 PM-এ
পরিচালনা করুন
Souvik Ghoshal বিশ্বেন্দুবাবু ঠিক জায়গাটা ধরেছেন। ইদানীং বেসরকারীবড় শিল্প কেবল ব্যাঙ্ক লোনের বড় ডিফল্টার আর সরকারের কাছ থেকে বড় ইনসেনটিভ প্রাপক হিসেবেই খবরের কাগজে আসে।
লাইকআরও প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করুন
প্রত্যুত্তর
2
4 আগস্ট 2016, 10:37 PM-এ

No comments: