Monday, August 21, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা ৩ শূদ্র-বৈশ্য-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের উদ্যোগী(ওয়াপাগ)দের দাবি- এমএসএমই নয় আলাদা পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক চাই

{এটা কয়েকটা কিস্তির ধারাবাহিক - এবারে তৃতীয় কিস্তি। Somnath Roy, Rouhin Banerjee চেয়েছিলেন এই ধরণের লেখা। এবং যারা মনে করছেন এই উৎপাদন ব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা দরকার তাদের জন্য।
বনেদিয়ানার ঢঙেই বলি, এটা তাত্ত্বিক তাথ্যিক লেখা হবে। সবার জন্য নয়। সুখপাঠ্য তো নয়ই। দাবিটি আপাদমস্তক রাজনৈতিক। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার ছাপ অনপনেয়ভাবেই পড়েছে। যাদের এই রাজনৈতিক বক্তব্য অস্বস্তির এবং এই বিশাল লেখাটি ঝামেলাদার মনে হবে স্বচ্ছন্দে এড়িয়ে যেতে পারেন।
এর আগে কয়েকবার এই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম - কিন্তু সাঁটে। এবারে বিশদে প্রেক্ষাপট এবং তার ঐতিহাসিক ভূমিকা তৈরি করে দেওয়া গেল।}
---
গত বিধানসভা ভোটের আগে, ভোটের পরেও বলেছিলাম, মমতা সরকার তৈরি হওয়ার পাঁচ বছর ছমাস পরে বিন্দুমাত্র রাখঢাক না করেই বলছি- ১৭৫৭র ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতে, ব্রিটিশ আর ইংরেজি শিক্ষিত চাকুরিজীবী বাঙ্গালির হাতে বাংলার বিশিল্পায়ন, ধ্বংস, লুঠের পরে এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একমাত্র সরকার, যারা বাংলার গ্রাম বিকাশকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা রূপায়িত করছে। বিশ্ববাংলা উদ্যম বিশ্বকে পথ নির্দেশ করছে। সরকারি নীতি সমূহ পরম্পরার বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান গ্রামীণ উদ্যোগীদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
সেটা হয়েছে সেটা বর্তমান সরকারের গ্রাম-প্রাধান্য নীতি নেওয়া এবং প্রয়োগ করার জন্যই। স্বাধীনতা পরবর্তী জাতিরাষ্ট্রীয় বড় পুঁজি এবং পশ্চিমী প্রযুক্তি নির্ভর ভারত এবং রাজ্যগুলির নীতি নির্ধারণের ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের গ্রাম-প্রাধান্যের নীতি নির্ধারণ এক্কেবারে নতুন ধরণের ভাবনা চিন্তা নয় সেগুলিকে মধ্যবিত্তের এবং তাঁর সঙ্গে কর্পোরেটদের সক্রিয় বিরোধিতা এড়িয়েও সাধ্যমত প্রয়োগ করে চলেছে। তাতে সরাসরি গ্রাম বাঙলার বিকাশ ঘটছে, সরাসরি গ্রামে সম্পদ যাচ্ছে, আড়াইশ বছর লুঠ আর নিপীড়নে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া গ্রামের মানুষ নতুন করে বাঁচতে চাইছেন, শহরমুখী না হয়েও। আমাদের সঙ্গঠনের অন্যতম সক্রিয় উদ্দেশ্য শহরের অর্থ গ্রামে পাঠানো – কন্যাশ্রী, যুবসাথী, সবুজসাথী,লোকপ্রসার প্রকল্পের মত হাজারো প্রকল্পে কিন্তু গ্রাম থেকে লুঠ হওয়া টাকা আবার গ্রামের সাধারণতম মানুষের হাতে পৌঁছাচ্ছে।
স্বীকার করা দরকার আমাদের মত গ্রামীন সংগঠকও অন্তত লোকপ্রসার প্রকল্পর মত বৈপ্লবিক কোন প্রকল্প ভেবে উঠতে পারতাম না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা নতুন বাংলায় আমাদের নতুন করে ভাবার নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
তাই দুটি দাবি এই কয়েক কিস্তির প্রবন্ধে করছি -
১) বৈশ্য-শূদ্র-মুসলমান এবং অন্যান্য পরম্পরার গ্রমীন উদ্যোগীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্র এবং
২) ব্রিটিশ আর তার অনুগত শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের দেওয়া গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের হস্তশিল্পী তকমা মুছে ফেলা
***
এই সারকারের গ্রাম-প্রাধান্য নীতির সুযোগে বাংলা-সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বাংলার পরম্পরার গ্রামীন উদ্যোগের জন্য আলাদা মন্ত্রক আশু তৈরি হোক। বর্তমানে গ্রাম শহরের বাজারের প্রজ্ঞা, বংশপরম্পরার জ্ঞান আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত দক্ষতা, নিজস্ব বিদ্যুৎ বিহীন প্রযুক্তি আর স্থানীয় কাঁচামালের ওপর নির্ভর ছোট গ্রামীন উদ্যমীরা আজও সরাসরি নিজেদের কাজকর্মের চালিয়ে যাচ্ছেন সরাসরি নিজেদের পরিকল্পনায় এবং উদ্যমে। সেই উদ্যমকে সরকারি সিলমোহর দেওয়া প্রয়োজন, গ্রাম উদ্যমীদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
মুশকিল হল, আজও এই গ্রামীন পরম্পরার উদ্যমীদের নিজেদের কোন মন্ত্রক নেই – তাঁরা আজও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তর বা এমএসএমইর অধীনে। আমরা মনে করি, এই গ্রামবাংলা পুণর্গঠনের কাজটা এমএসএমই মন্ত্রক দিয়ে হবে না – স্বাধীনতার পর এত দিনেও সম্পন্ন হয় নি – শিল্প উতপাদনে বাংলা যেখানে ছিল তাঁর থেকে ক্রমাগত পিছিয়েছে। তাই পারম্পরিক বিশ্ববাংলা মন্ত্রক তৈরি করার পথেই এগোতে হবে। এমএসএমই উদ্যমী আর পরম্পরার গ্রামীন উদ্যমীদের স্বার্থ, চরিত্র দুটোই আলাদা। যদিও স্পষ্ট করে বলা যাক এই দুই আলাদা চরিত্রের উতপাদকেরা কিন্তু পরস্পরের প্রতিযোগী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীও নয়।
মনে রাখতে হবে, এমএসএমই মন্ত্রকের সৃষ্টি হয়েছিল বড় পুঁজির উদ্যোগীদের অনুসারী হিসেবে, গ্রাম উদ্যমীদের স্বনির্ভর, স্বনিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে তাড়িয়ে নিয়ে বড় পুঁজি নির্ভর, বিদ্যুৎ পশ্চিমী শিল্পের অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে। অনুসারী শিল্প বাংলায় বলা ভাল কলকাতার আশেপাশের শিল্পাঞ্চলে ছিল কিন্তু আজ সেগুলি অস্তমিত। তাদের উতপাদন, প্রযুক্তি, উদ্যমের নিজস্বতা ছিল না। ছিল বড় পুঁজির ওপর প্রগাঢ নির্ভরতা। ফলে বড় পুঁজির প্রযুক্তি, উতপাদনের চেহারা বদলাতে অনুসারী শিল্পগুলি হারিয়ে গিয়েছে বাংলার বড়পুঁজির শিল্প মানচিত্র থেকে। আমরা যারা বাঙলার গ্রামীন বৈশ্য শুদ্র মুসমমান এবং অন্যান্য পরম্পরার সমাজের ছোট উদ্যমীদের সংগঠন যাঁদের সদস্যদের মূল নির্ভরতা জ্ঞান, দক্ষতা আর নিজস্ব বাজার – পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষমতা বা ব্যাঙ্কেবিলিটি নয়, সরাসরি মনে করি লুঠেরা শিল্পবিপ্লবীয় বড় পুঁজি আদতে গ্রামীন ছোট উদ্যমের স্বার্থের সরাসরি বিরোধী – বাঙলার সরকার যে নীতি নিয়ে চলেছে, গ্রামনির্ভরতা বাড়ানো, সেই নীতির বিরোধী।

No comments: