কলকাতা ডুবছে বলে বেশি বৃষ্টি চাই না, এটা গ্রাম-বিরোধী দাবি। কলকাতাকে ধ্বন্সের মুখোমুখি এনে দাঁড় করীয়েছেন বাংলার ভদ্র সমাজ। তাদের তৈরি কৃতকর্ম থেকে তাদেরই বাঁচাতে এ কেমন দাবি? এই বৃষ্টির জল না হলে ভদ্র সমাজের মুখে যে অন্ন উঠবে না।
এ বিষয়ে আমাদের গাঁইয়াদের বক্তব্য-
এ বিষয়ে আমাদের গাঁইয়াদের বক্তব্য-
কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গঙ্গা মজে গিয়ে(আজ যেটা টালির নালার অংশ) রাস্তার ধারে ধারে প্রচুর জলাশয় সৃষ্টি করেছে। অন্তত কয়েক দশক আগে এই জলাশয়গুলির সঙ্গে বেগোর খাল, মণিখাল, বাসন্তী খাল এরকম হাজারো খালের সংযোগ ছিল - যেখান দিয়ে কলকাতার বৃষ্টির জমা জল বেরোত।
আজ যেটা ক্রিক রো বৌবাজার, মলঙ্গা লেন, অক্রুর দত্ত লেন, তার পাশে আমতার বুজে যাওয়া দামোদরের জেলেরা বাস করতেন, তার আজও নাম জেলে পাড়া(অক্রুর দত্ত লেন - যেখানে হিন্দুস্থ্যান রেকর্ডসেরে দোকান ছিল, বালসারা বাবুর বাড়ি ছিল প্রখ্যাত ধনীদের বাস ছিল, মেদিনীপুর থেকে আসা বিদ্যাসাগর মশাই প্রথম থাকতেন বা রমানাথ কবিরাজ লেন যেখানে আজও কলকাতা কৈবর্ত সমিতির বিশাল বাড়িটা আছে কয়েক বছর আগে স্বাধীনতা সংগ্রামী শঙ্কর প্রসাদ দে, তাঁর সমাজ কৈবর্তদের ওপরে বই লিখে তাঁর কর্তব্য করে গিয়েছেন) পাড়া ১৮০০ সালে বুজিয়ে ফেলে রাস্তা করা হয়।
তো আজও কলকাতা থেকে গড়িয়া হয়ে কেউ যদি জয়নগর যান, জমি, জলাশয় চুরি করে বাড়ি তোলার সময়েও নেতাজী সুভাষ রোডের পাশে পাশে প্রচুর জলাশয় দেখতে পাবেন - এগুলো মূলত আদি গঙ্গার মরা খাত। জয়নগর মজিলপুরে আজও ঘোষ গঙ্গা, মিত্র গঙ্গা আছে - অর্থাৎ ঘোষেদের, মিত্তিরদের জায়গা দিয়ে যাওয়া মজা আদি গঙ্গার খাত - যার জন্য মজিলদহ নাম।
তো ঠিকই তো গোটা মণিখাল বা বেগোর খাল বা বাগজোলা খাল সব চুরি হয়ে গিয়েছে। মানুষ তার ওপরে বাস করছে। টালিনালার বা অদি গঙ্গার ওপরে হয়েছে আত্মঘাতী মেট্রো রেল। তার জলবহন ক্ষমতা শূন্যে এসে ঠেকেছে। একটু বেশি জল হলেই নাকতলা, রাণীকুঠি, গড়িয়া থই থই।
কলকাতা বা তার আশে এত মানুষ বাড়ি করেছেন গত কয়েক দশক যে প্রায় সব জলাশয় নেই হয়ে গিয়েছে। তাতে জলাশয়ের বা বিশ্বের কিছু এসে যায় না, কিন্তু গোটা মনুষ্য সমাজ যে ধ্বংসের দিকে তিলে তিলে প্রাণ দিয়ে এগিয়ে চলছে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment