বংশলতিকা/বংশগল্প সূত্রে শোনা যায় বসুক/বসাকেরা এই বাংলায় এসেছিল গুজরাট থেকে। ১৬০০র কাছাকাছি সময় সুরাটে মন্বন্তর(গণহত্যা) হয়, মন্বন্তর এড়াতে এক দল তাঁতি/তাঁত ব্যবসায়ী পূর্ব দিকে রওনা হন। রাস্তায় একটি গোষ্ঠী বেনারসে বসে যান আরেকদল তখন বাংলার আন্তর্জাতিক ব্যবসা অঞ্চল হুগলি/আদিসপ্তগ্রামে বাস করতে থাকেন।
পলাশীর পর বহু পেশাদারকে(যেমন কাঁসা/পিতলের কারিগর) আদিসপ্তগ্রামের বাস তুলিয়ে কলকাতায় নিয়ে চলে আসেন ইংরেজ বাহাদুরেরা। সেই পেশাজীবিরা এক সময় আজকের ফোর্ট উইলিয়াম/গড়ের মাঠ এলাকায় বসেন। কিছু তাঁতি উত্তর কলকাতায় বসবাস করতে থাকেন।
এই শেঠ আর বসাকেরা বাংলার বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে যান। তো বাংলা ভাগ হওয়ার পরে টাঙ্গাইলের কিছু তাঁতি এপার বাংলার খুব গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ফুলিয়ায় বাস করতে শুরু করেন। পাশেই ঐতিহাসিক শান্তিপুর। তার পরম্পরার কুহক এড়িয়ে হরিপদবাবু তাঁর বাবা, এবং আরও কিছু তাঁতি ফুলিয়াকে বাংলার মানচিত্রে তুলে ধরতে প্রাণপন চেষ্টা করতে থাকেন।
ক্রমশ ফুলিয়া হয়ে ওঠে বাংলার অন্যতম গর্ব।
হরিপদবাবুরা শুরু করেন তিনটে সমবায়। বাংলায় প্রবাদ কোন সমবায়ই নাকি লাভে চলে না। ফুলিয়ার তিনটে প্রাথমিক সমবায় তাঁতিদের ঘাম রক্ত জল করা শ্রমে শুধু বাংলার নয় বিশ্বে দরবারে স্থান পায়। জার্মানি, জাপান, ইংলন্ডে যেতে শুরু করে ফুলিয়ার পরিধেয়। আজ ফুলিয়ায় সব থেকে বেশ্বি তাঁতি কাজ করেন। ফুলিয়ার হাতে চালানো তাঁতের বার্ষিক বাজার হল ন্যুনতম ৬০০ কোটি টাকা। এক্কেবারে শূন্য থেকে শুরু করে কয়েক দশকে এই সম্পদ বানিয়েছেন হরিপদবাবুরা।
কারা যেন বলে বাঙ্গালি উদ্যমী নয়, বাঙ্গালি ব্যবসা করতে পারে না?
হরিপদবাবু কয়েকটা বই লিখেছেন মনোহর বসাক ছদ্মনামে, তার একটা নীলাম্বরীর নকশা। বইটা তার সংগঠন কলাবতী মুদ্রা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও তিনি এক দশক ধরে টানাপোড়েন নামক একটা উচ্চশ্রেণীর মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছেন ফুলিয়া থেকে। অসাধারণ সে কাজ। বাংলায় তাঁত নিয়ে একমাত্র পত্রিকা ছিল সেটি। বাংলার এক সময়ের ইতিহাস ধরা আছে সেই পত্রিকায়।
আজ আর ফুলিয়ার দুঃখের কথা আলোচনা করব না। সেটা আগামী দিনের জন্য তোলা রইল।
No comments:
Post a Comment