Saturday, February 24, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - ১৮৯০এর ভারতজোড়া প্লেগ মহামারী২ - কলকাতা চিকিৎসাবিদ্যার ঔপনিবেশিক বাধ্যবাধকতা - যেপথের প্রভাব পড়বে উপনিবেশপরবর্তী প্রশাসনে

কলকাতার পশ্চিম প্রদত্ত যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন ভদ্রলোকেরা সমস্যা হল, তারা পুণের প্রতিবাদীদের মত সরাসরি প্লেগ বিরোধী সরকারি উদ্যমের কোন বিরোধিতা করতে পারছে না। কারণ উপনিবেশ তাদের ক্ষমতার কেন্দ্রে টেনে নিয়েছে – বহুকাল ধরে তারা ক্ষমতার অংশিদার। যদিও পলাশীর পরে গোলাম হুসেন তবাতবাই বলছেন বাংলার অভিজাতরা মুন্সির বেশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে চাকরি পেত না, এখন কিন্তু তারা বেশ কিছু উচ্চপদে আরোহন করছেন – সত্যেন ঠাকুর আইসিএস হয়েছেন, বঙ্কিমচন্দ্র ডেপুটি হয়েছেন। কলকাতায় সরকারি মদতে এলোপ্যাথিক চিকিতসা শিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এখান থেকে পড়াশোনা করে বহু বাঙালি সারা ভারতে চিকিৎসক হিসেবে ছড়িয়ে গিয়েছে। তামিজ খান নিজে লাহোরে চিকিৎসকের চাকরি করেছেন।
অন্যদিকে বম্বে বা দিল্লি বা লাহোরে বহু পরে ঔপনিবেশিক প্রশাসন প্রকল্প হয়ে ঢুকছে। বহু এলাকা তখনও ঔপনিবেশিক নিগড়ের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ অন্যরকমকরে ভাবতে পারছে। দিল্লীতে অনেক পরে উপনিবেশ পৌঁছবে। তখনও কিন্তু দিল্লির পুরাতনি মহল্লার ইউনানি চিকিৎসক পরিবার, তাদের জ্ঞান নিশ্চিহ্ন হয়ে যান নি।
কিন্তু কলকাতার শিক্ষিত চিকিৎসকেরা এলোপ্যাথিক ওষুধকে রাষ্ট্রীয় চিকিতসা হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তাদের রাষ্ট্রীয় নিদানের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে ভদ্রলোক বাঙালি ডাক্তারদের প্রয়োজন হল দুটি রাস্তা বের করা, প্রথমটি আধুনিক পশ্চিমি চিকিৎসাবিদ্যা বিজ্ঞানের আওতার মধ্যে দাঁড়িয়ে কিভাবে প্লেগের সমস্যাকে সমাধান করা যায় সে পথ বার করা, এবং দ্বিতীয়টি ক্ষমতাকে না চটিয়ে প্লেগ নিয়ে সরকারি আয়োজনের যতটা পারা যায় অন্যপথ নির্ণিয় করা। তারপরে কি ভাবে কলকাতার বাঙালি এলোপ্যাথি চিকিৎসকেরা এই অবস্থাটা সামাল দিলেন সেটা এই লেখার অংশ নয়, কিন্তু সে সময়ের ঔপনিবেশিকতায় পশ্চিমি মুক্তবুদ্ধিতে প্রভাবিত শিক্ষিত বাঙালির রাজনৈতিক অবস্থাটা বুঝে ওঠা জরুরি।
ঠিক এই জন্যেই ১৯৪৭এর বাংলা ভাগের পরে যে সব ঔপনিবেশিক, আধা ঔপনিবেশিক ক্ষমতাচর্চা কেন্দ্র তৈরি হল নেহরুর জামানায় নানান বাঙালি প্রশাসক যেমন মেঘনাদ সাহা, প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ, অশোক মিত্র(আইসিএস) নেতৃত্ব, তারা ঔপনিবেশিক ইওরোপিয় বিজ্ঞানকেই নিজেদের পথ ধরলেন এবং রাষ্ট্রীয় পথ তাইই নির্দিষ্ট হল।
(প্রবন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের, কারিগরদের সংগঠনের, প্রজিতবিহারীর নয়)

No comments: