স্নাতক হওয়ার পরে প্রথম কুমায়ুন তার
পরে লাহোরে চাকরি পান তামিজ খান। ১৮৪৫-৪৬ সালে প্রথম ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধজে
হার্ডিঞ্জ শিখ প্রতিরোধ চূর্ণ করেন এবং এক দশকের মধ্যেই শিখ সাম্রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের
অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মহারাজা রঞ্জিত সিংএর প্রাক্তণ রাজধানী লাহোর তখনও
কিছুটা হলেও প্রতিরোধ খাড়া করছিল। ফলে যুবক তামিজের কাছে লাহোর বাস বিপজ্জনক সময়
হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু এখানেও তামিজ বিপুল সফলতা অর্জন করেন। দ্য ইংলিশম্যান
তার মৃত্যুর খবরে লিখছে, তিনি লাহোরে একটি দাতব্য চিকিতসালয় স্থাপন করেন এবং made European medicine highly popular among the Sikhs।
১৮৫২ সালে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালের হাউস ফিজিশিয়ান হিসেবে ফিরে আসেন। দেশিয় ভাষায় শারীরবিদ্যা আর দেহব্যবচ্ছেদের
চিকিৎসক-শিক্ষক মধুসূদন গুপ্তের মৃত্যুতে তিনি সেই পাঠ পড়ানো শুরু করেন। তার
কাছাকাছি সময়ে শিব চরণ কর্মকারের দীর্ঘ অসুস্থতার জন্যেও তাকে অতিরিক্তভাবে মেটিরিয়া
মেডিকার পাঠ দিতে হয়। প্রসন্ন কুমার মিত্রের মৃত্যুতে তামিজ খানকে চেয়ার অব
মেডিসিনে মনোনীত করা হয়। মেডিক্যাল কলেজ থেকে দেশিয় ভাষায় পাঠ আলাদা করে শিয়ালদায়
ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুল হিসেবে চালু করা গেলে সেখানকার প্রথম চিকিৎসক হিসেবে
যোগ দেন তামিজ খান।
তাঁর বন্ধুর মতই তিনি তার
চিকিৎসাবিদ্যার কাজ ছাড়াও বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন। ১৮৬৭ সালে
তিনি নিউ সিড্যানহ্যাম সোসাইটির করেস্পন্ডিং মেম্বার হন। এছাড়াও লন্ডনের
এপিডেমিওলজিক্যাল সোসাইটি এবং অস্ট্রেলিয়ান মেডিক্যাল জার্নালের সঙ্গেও যুক্ত
ছিলেন। কলকাতায় কনসেন্ট বিলে মেয়েদের বিবাহের বয়স নিয়ে বিতর্ক উঠলে যে সব ভারতীয়
ডাক্তার মেয়েদের বিবাহযোগ্য হয়ে ওঠার জন্যে বয়স বাড়াবার সুপারিশ করেন তামিজ খান
তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর সোসাল প্রোগ্রেস ইন ইন্ডিয়া নামক
সমিতির সদস্যও ছিলেন। ক্যালকাটা মেডিক্যাল সোসাইটির পত্রিকায় নিয়মিত ডাক্তারি
বিষয়ে লিখতেন। কানাইলাল যেমন ছাত্রদের সচিত্র এবং হাতে কলমে দানের জন্যে ওষধি
গাছের বাগান করেন, তামিজ খান তেমনি ক্যাম্পেল মেডিক্যাল তার ছাত্রদের জন্যে স্কুলে
দেহব্যবচ্ছেদ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গএর একটা জাদুঘর তৈরি করেন।
তবে তামিজ খানের প্রখ্যাতি ছাত্র
তৈরি এবং তাদের ওপর প্রভাব ফেলার জন্যে। প্রখ্যাত ডাক্তার-লেখক দুর্গাদাস করের পুত্র, রাধাগোবিন্দ কর তার
জনপ্রিয়তম বইএর মুখবন্ধে লিখেছেন তিনি তার প্রখ্যাত পিতার বই লেখা সূত্রে বই লিখতে
উৎসাহিত হন নি, তাকে উৎসাহ দিয়েছে তাঁর দুই শিক্ষক, কানাইলাল দে এবং তামিজ খান।
মৃত্যুর কিছু পূর্বে ছাত্ররা চাঁদা তুলে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের এসেম্বলি
হলে তাঁর একটি পুর্ণাবয়ব তৈলচিত্র স্থাপন করেন। খান বাহাদুর ছাড়াও সরকারি প্রচুর
খেতাব পান।
দুমাসের ঘুষঘুষে জ্বরে তাঁর মৃত্যু
হয়। অসুস্থতার সময় তার ছাত্র সূর্য কুমার সর্বাধিকারী চিকিৎসা করতেন। ঠিক যেমন করে
সূর্য কুমার প্রখ্যাত ডাক্তার গুডিভের নামে চিহ্নিত হন, ঠিক তেমনি তামিজ খানের
ছাত্র ১৮৭৯-৯৯ পর্যন্ত দেহব্যবচ্ছেদের শিক্ষক এবং পরে ভাইসরয়ের সাম্মানিক
সহচিকিতসক, মৌলভি জাহিরুদ্দিন আহমেদ তার গুরুর স্মৃতিতে একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা
বিষয়ক পত্রিকা চালু করেন।
চিকিতসাবিদ্যা, ঔপনিবেশিক চিকিৎসা, তামিজ খান, গুডিভ চক্রবর্তী,
(প্রজিতবিহারী মুখার্জীর ন্যাশনালাইজিং দ্য বডি, দ্য মেডিক্যাল মার্কেট,
প্রিন্ট এন্ড ডাক্তারি মেডিসিন থেকে)
No comments:
Post a Comment