কাটরার দক্ষিণ-পূর্বদিকে দুইটি অশ্বত্থতরুর, অথবা একটি অশ্বথতরুর দুইটি সংলগ্ন কাণ্ডের মধ্যস্থলে এক বিশাল কামান অবস্থিতি করিতেছে। এই কামানের নাম জাহানকোষা বা জগজ্জয়ী। এই স্থানে মুর্শিদকুলী খাঁর কামানাদি রক্ষিত হইত বলিয়া কথিত আছে। সেইজন্য এই স্থানটিকে আজিও সাধারণে তোপখানা কহিয়া থাকে। এই তোপখানার উত্তর দিয়া একটি ক্ষুদ্র নদী সর্পগতিতে আপনার ক্ষুদ্র কলেবরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গ তুলিয়া আপন মনে বহিয়া যাইতেছে। জাহানকোষা অনেকদিন পর্যন্ত ধরণীবক্ষে স্বীয় বিশাল বপু বিস্তার করিয়া অবস্থিতি করিতেছিল; ইহার পার্শ্বে অশ্বত্থ বৃক্ষ জন্মিয়া জাহানকোষাকে ভূতল হইতে কতকটা উর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছে।
কামানটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২ হাত হইবে। বেড় ৩ হাতের অধিক, মুখের বেড়টি ১ হাতের উপর। অগ্নিসংযোগ-ছিদ্রের ব্যাস ১৷৷ ইঞ্চি হইবে। কামানের গাত্রে ফারসী ভাষায় খোদিত ৯ খণ্ড পিত্তলফলক আছে। ৩ খণ্ড অশ্বত্থবৃক্ষের কাণ্ড মধ্যে প্রবিষ্ট, অবশিষ্ট কয়েকখানিও অস্পষ্ট হইয়া পড়িয়াছে।
পিত্তলফলকে বাঙ্গলার শাসনকর্তা ইসলাম খাঁর গুণবর্ণনা ও কামানের নির্মাণাব্দাদি খোদিত আছে। এইরূপ লিখিত আছে যে, এই জাহানকোষা সাজাহানের রাজত্বকালে ও ইসলাম খাঁর বাঙ্গলাশাসনের সময়, জাহাঙ্গীরনগরে দারোগা শের মহম্মদের অধীন হরবল্লভ দাসের তত্ত্বাবধানে জনাৰ্দন কর্মকার(এই জনাৰ্দনকে বেভারিজ প্রভৃতি জর্নাজন বলিয়া লিখিয়াছেন। পিত্তল-ফলকের লেখা এক্ষণে অস্পষ্ট হইয়াছে, ভাল করিয়া পড়িবার সুবিধা নাই; কিন্তু উহা জনাৰ্দন হওয়াই সম্ভব।- পাদটিকা) কর্তৃক ১০৪৭ হিঃ(১৬৩৭ সাল) ১১ই জমাদিয়স্ সানি মাসে নির্মিত হয়। ইহা ওজনে ২১২ মণ; ইহাতে ২৮ সের বারুদ লাগিয়া থাকে।
জাহানকোষাকে এক্ষণে হিন্দু-মুসলমান উভয় জাতিই সিন্দুরাদি লেপন করিয়া পূজা করিয়া থাকে। ঢাকায় ইহা অপেক্ষা আরও একটি বিশাল তোপ ছিল; তাহা এক্ষণে নদীগর্ভে পতিত। বিষ্ণুপুর প্রভৃতি স্থানেও বৃহৎ তোপের কথা শুনা গিয়া থাকে।
আমাদের দেশে পূর্বে যেরূপ শিল্পের উন্নতি হইয়াছিল, অনুসন্ধান করিলে, এখনও তাহার অনেক চিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। বাঙ্গলার শিল্পের দিন দিন যেরূপ অবনতি হইতেছে, তাহাতে লোকে ইহার পূর্বশিল্পের কথা প্রবাদ বাক্য বলিয়া মনে করিবে।
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী; নিখিলনাথ রায়
কাটরার মস্জেদ
(জাহানকোষা তোপ)
কাটরার মস্জেদ
(জাহানকোষা তোপ)
No comments:
Post a Comment