এবারে ইওরোপিয় নির্মান
১৭৬৩ সালে ফরাসি প্রধান কুঠিয়াল জাঁ ল, স্মৃতিকথায় সিরাজের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। ইংরেজদের বাংলা দখলের কূটনীতি মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তিনি, নিজের এবং দেশিয় ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি পলাশী কাণ্ডের সমস্ত দায় সিরাজের ওপর চাপিয়েছেন। ইংরেজদের কলকাতা থেকে সিরাজ তাড়িয়ে যখন সিরাজ মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন, তিনি ব্যাঙ্গাত্মকভাবে লেখেন, স্বৈরাচারী(নবাব) এখন (যুদ্ধে) জয়ী হয়ে ফিরে এসেছে। সিরাজকে তিনি অদক্ষ মাথা গরম এবং রাজ্য শাসনের ক্ষমতাহীন বলেছেন। তিনি যে সিরাজের বিরোধী এটা স্পষ্ট হয়ে যায় তার এই মন্তব্যে, সিরাজকে পদচ্যুত করার জন্যে (পূর্ণিয়াতে) একটা ষড়যন্ত্র হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে রামনারায়ণ যোগ না দেওয়ায় তা সফল হতে পারে নি। তার লেখার ভঙ্গীতেই পক্ষপাতিত্ব পরিষ্কার হয়ে যায়। সিরাজ ইওরোপিয়দের চরম ঘৃণা করতেন এই তথ্য ভিত্তিহীন। সিরাজ চন্দননগরের ফরাসি কুঠিয়াল রেনঁকে লেখেন আহমদ শাহ আবদালির আগ্রগমন আটকানোর জন্যে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে আলিনগর(কলকাতা, ফেব্রুয়ারি, ১৭৫৭) সন্ধি করতে বাধ্য হন। ল' একে সিরাজের কাপুরুষতা ঢাকার প্রয়াস বলে মন্তব্য করেছেন। সিরাজ বিরোধী দরবারি চক্রান্তে মোহনলালকে পাশে টানতে না পারায় তিনি তাকে পাজি বদমায়েস উপাধিতে ভূষিত করেন। আর মির্জাফর সম্বন্ধে তাঁর মূল্যায়ন - সাহসী ও সৎ ব্যক্তি, এটি সর্বৈব ভুলে ভরা এবং ফারসি ঐতিহাসিকদের বিবরণে সম্পূর্ণ উলটো বর্ণনা পাচ্ছি।
একইভাবে ইংরেজ কুঠিয়াল লুক স্ক্রাফটন তার দেশিয় স্বার্থে সিরাজের কলকাতা আক্রমণকে নিন্দা করেছেন। স্ক্রাফটন নিজে পলাশী চক্রান্তের অন্যতম ষড়ী। তার উদ্দেশ্যই ছিল নবাবকে ভিলেন প্রতিপন্ন করা।
আজ আমরা সিরাজের মূল্যায়ন যে কটি লেখা ভিত্তি করে করি, সেগুলি বেশ ভুলে ভরা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
সিরাজ সিংহাসনে বসার আগে এক ধরণের চরিত্রের, সিংহাসনে বসে অন্য মানুষ, এই তথ্যটা মাথায় রাখলেই আমরা পলাশীর কারণের দিকে নির্মোহ দৃষ্টিতে এগোতে পারি।
No comments:
Post a Comment