ঔপনিবেশিক সময়ের ডাক্তারি চিকিতসাবিদ্যা(পশ্চিমি চিকিতসাবিদ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত) প্রখ্যাততম চিকিৎসক-শিক্ষক ছিলেন খান মৌলভি তামিজ খান বাহাদুর(এখন থেকে তামিজ খান, (মৃ ১৮৮২)), কিন্তু চিকিৎসাবিদ্যার ঐতিহাসিকেরা তাঁকে উপেক্ষা করে গিয়েছেন। তাঁর সময়ের প্রখ্যাততম মধুসূদন গুপ্ত বা সূর্য কুমার গুডিভ চক্রবর্তীর মত তিনি বিখ্যাত হন নি।
তামিজ খানের জীবন সম্বন্ধে আমরা একমাত্র জানতে পারি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কর্মসঙ্গী এবং বিজ্ঞানের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব রায় কানাই লাল দে বাহাদুরের বক্তৃতায়। তিনি কলকাতা মেডিক্যাল সোসাইটিতে তার সম্বন্ধে বলেন। এটি পরে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেটে তাঁর স্মৃতি তর্পণ রূপে ১৮৮২ সালে ছাপা হয়। এই বক্তৃতায় তামিজ খানের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের ছবি প্রায় অনুপস্থিত বলা চলে। এ প্রসঙ্গে বক্তৃতা থেকে একটা স্তবক তুলে দেওয়া যেতেই পারে, a man of vast reading and very valuable professional knowledge, he was simple and unassuming as a child।
তাঁর প্রথম জীবন সম্বন্ধে রায়বাহাদুরের ছোট্ট মন্তব্য তিনি প্রথিতযশা পরিবারের বড় হন এবং ক্রমশঃ স্থানীয় মুসলমান সমাজে বিখ্যাত হন। প্রবন্ধটি সূত্র মনে হওয়া স্বাভাবিক তিনি কলকাতা বা তার আশেপাশে জন্মান এবং কলকাতার কলিঙ্গ ব্রাঞ্চ স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার পরিবার পরম্পরাগতভাবে মুন্সির কাজ করতেন বলে পরবর্তী জীবনে তিনি পারিবারিক উপাধি নিয়ে মুন্সী তামিজ খান হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছেন (কয়েকদিন আগে আমরা পাঞ্জাবের অমুসলমান মুন্সি চন্দ্র ভান ব্রাহ্মণ আর তার সময় নিয়ে আলোচনায় দেখেছি কিভাবে মুসলমান এবং অমুসলমান মুন্সি মুঘল দরবারে/প্রশাসনে যৌথভাবে কাজ করেছেন)। হয়ত পরম্পরা মেনে তামিজ খানের প্রথম জীবনে কিছুটা ফারসি, কিছুটা বাংলা, হয়ত সংস্কৃত পাঠ করতে হয়েছে, মনে হয় না ইংরেজি ছিল তার পাঠতালিকায়। গুডিভ চক্রবর্তী সূত্রেও জানতে পারছি তের বছর আগে তিনি ইংরেজির ধারেপাশে ছিলেন না।
বিদ্যালয় ছাড়ার পরে কলকাতার একটি ওষুধের দোকানে কাজ নিলেন। দোকানে ওষুধ তৈরির কাজের অভিজ্ঞতার সূত্রে, তিনি সরকারি ওষুধ দোকানে কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ জুটিয়ে নিলেন। দোকানের ব্যবস্থাপক ড গ্রান্ট তামিজ খানের উৎসাহ এবং দক্ষতা দেখে ড এফ জে ময়াটের কাছে সুপারিশ পত্র লিখে দিলেন। ময়াটের সুপারিশে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হন। কলকাতার দ্য ইংলিশম্যান তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য রূপে লিখল, by diligence and perseverance, the young Tamiz mastered the difficult science of medicine and acquired a mastery over the English language। প্রশাসক হেনরি হার্ডিঞ্জের চোখে পড়লেন তিনি। শ্রেণীতে প্রথম হওয়ায় তিনি হার্ডিঞ্জ পুরষ্কারও পান। ধাত্রীবিদ্যায়ও পর পর দুবছর তিনি গুডিভ জলপানি পান।
(প্রজিতবিহারী মুখার্জীর ন্যাশনালাইজিং দ্য বডি, দ্য মেডিক্যাল মার্কেট, প্রিন্ট এন্ড ডাক্তারি মেডিসিন থেকে)
No comments:
Post a Comment