গোটা ১৮৯০এর দশক জুড়ে বম্বেতে শুরু হয়ে পুণে, কলকাতা, করাচি, দিল্লীতে বিপুলাকারে প্লেগ মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ে। প্রজিতবিহারী মুখার্জী, ন্যাশনালাইজিং দ্য বডি, দ্য মেডিক্যাল মার্কেট, প্রিন্ট এন্ড ডাক্তারি মেডিসিন বইতে খুব গুরুত্বপূর্ন কিছু দৃষ্টভঙ্গী তুলে ধরছেন, কিভাবে বিভিন্ন শহর প্লেগ মহামারী প্রতিরোধ করতে কোমর বাঁধছে। কিভাবে উপনিবেশ ‘বৈজ্ঞানিক’ভাবে মানুষের দেহকে আধিকার করে প্লেগ মহামারীকে মোকাবিলার চেষ্টা করে সেই বর্ণনা দিয়েছেন প্রজিত তাঁর বইতে। পুণের জনগণের একটি অংশ, চাপেকর ভায়েরা প্লেগ বিরোধী সরকারি টিকা করণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, ঔপনিবেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে স্যানিটারি কমিশনার ওয়াল্টার চার্লস র্যা ন্ডকে হত্যা করে, সাম্রাজ্য বাল গঙ্গাধর তিলককে ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লেখার জন্যে ১৮ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। স্থানীয়দের একাংশ মনে করতে শুরু করে প্লেগ মহামারী নিরাময়ের নাম করে ঔপনিবেশিক সরকার তাদের ওপরে ঔপনিবেশিক নিগড় চাপিয়ে দিচ্ছে। যদিও এর বাইরেও ভাবার মানুষ ছিল। কিন্তু উপনিবেশি বিরোধিতার একটা সচেতন সূত্র কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে বম্বে আর পুণায়।
অন্যদিকে গাই এটিওয়েল জানাচ্ছেন ইউনানি টিবেরা দিল্লি এবং পাঞ্জাবে মহামারী রুখতে ঔপনিবেশিক এলোপ্যাথিক চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে পারম্পরিক জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে কিকরে এই মহামারী থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়, সে বিষয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। এবং তার ফলও ফলতে শুরু করে।
উল্টো দিকে ক্ষমতা কেন্দ্র কলকাতা, দিল্লি না বম্বে বা পুণের থেকে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে প্লেগ রোখার চেষ্টা করে। তারা দিল্লির ইউনানি চিকিতসকেদের মত প্লেগের আলাদা নিদান খোঁজে নি, চাপেকরদের বা তিলকের মত ঔপনিবেশিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় নি। কারণ ততদিনে বাংলায় নবজাগরণের মত একটি সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্প সফল হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমি যুক্তিবাদ মোটামুটি বাংলার, বলাভাল কলকাতার ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রলোকেদের মধ্যে থানা গেড়ে বসেছে। আমরা মৌলভি তামিজ খানের উদাহরণে দেখেছি, কিভাবে তিনি নানান ঔপনিবেশিক প্রকল্পে আগ্রহভরে যুক্ত হয়েছেন তাঁর মত করে। মেয়েদেরে বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমি ঔপনিবেশিক বৈজ্ঞানিক, যুক্তিবাদীতার সূত্র ধরে। ইওরোপের চোখে সামাজিক প্রগতি বলতে যা বোঝায় সেই আন্দোলন সফল করতে ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর সোসাল প্রোগ্রেস ইন ইন্ডিয়া মত দলের সক্রিয় কর্মী হয়ে যুক্ত থেকেছেন।
No comments:
Post a Comment