রঙ্গিন পুতুল
পটুয়ারা ছাড়া, বাংলার
নানান এলাকায় কুম্ভকার সমাজ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় পুতুল তৈরি করেন। বীরভূমের
রাজনগরের কুম্ভকার সম্প্রদায় বৌ পুতুল, কলসি কাঁখে পুতুল, প্রট্মোটা আহ্লাদি পুতুল,
নানান ধরণের খেলনা, পাখি পুতুল ছাড়াও কৃষ্ণ-রাধা ইত্যাদি। হুগলির তারকেশ্বরে
ক্ষুদ্রাকৃতি টেপা পুতুল তৈরি হয়। সেগুলির উজ্জ্বল নীল, সবুজ, হলুদ রঙ ব্যবহার হয় ডোরা
কেটে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা পরিধেয় স্পষ্ট করার কাজে।
মজিলপুর বাংলার খুব
একটি পুরনো জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম। এর শিক্ষা-শিল্প ঐতিহ্য প্রায়আপ্রতিদ্বন্দ্বী।
সম্প্রতি প্রয়াত পাঁচুগোপাল দাস এলাকার নানান সাংস্কৃতিক চাহিদামত বিভিন্ন দেবদেবীর
পুতুল, দক্ষিণরায়, বনবিবি, গণেশ জননী, জগ্ননাথ-বলরাম-সুভদ্রা, ক্লসি কাঁখে বৌ, আহ্লাদি
পুতুল, জমিদার পুতুল, নর্তকী ইত্যাদি করতেন। তিনি তাঁর পিতা মন্মথ দাসের ঐতিহ্য
বহন করে চলতেন। আজ তাঁর পুত্রও সেই কাহ করে থাকেন। তারাপদ সাঁতরা বলছেন, একদা
বারুইপুর, শিবানীপুর, বড়িশা ইত্যাদি এলাকায়ও নানান ধরণের রঙ্গীন পুতুল তৈরি হত।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে
পোড়ামাটি রঙ্গিন পুতুল তৈরি হত। নদিয়ার নবদ্বীপে বুড়োশিবের সর্প ফনাযুক্ত, কানে কলকে
ফুল গোঁজা মুণ্ড মুর্তি তৈরি হয় আজও। বাসন্তী পুজোর সময় পার্বতীর সঙ্গে শিবের বিয়ে
দেন স্থানীয়রা। শিবের মুণ্ডে রঙএর পরিকল্পনা দেখার মত।
মুর্শিদাবাদের কাঁদি
এলাকার গোয়ালিনী পুতুল উল্লেখ্য। পুতুলের দেহ কুম্ভকারেরা চাকে তৈরি করে হাতে টিপে
টিপে মুণ্ড আর হাত তৈরি করেন। একটি হাত মাথায় থাকে। গোটা পুতুলের দেহে রূপোলি রঙের
প্রলেপ দেওয়া হয়। তাঁর ওপরে কাল আর লাল আঁচড়ে কাপড়ের ভাঁজ আর গয়নার চিহ্ন বোঝানো
হয়ে থাকে।
পুরুলিয়া বাঁকুড়াসহ
জঙ্গল মহলে টুসুর সময় মাঝারি গোছের রঙ করা ও রঙ্গিন কাগজ সাঁটা টুসু পুতুল বাজারে
ওঠে। তারাপদ সাঁতরা বলছেন এই পুতুল অনেকটা নতুন গ্রামের পুতুলের আঙ্গিকের সঙ্গে মেলে।
একদা কুমোরটুলি আর
কালিঘাটে বেশ কিছু রঙ্গিন পুতুল তৈরি হত।
No comments:
Post a Comment