জনগনের চাহিদা দেখে আমরা নতুন করে সেটির ইংরেজি অনুবাদ
করতে বসলাম, সেই শাস্ত্রকে বিশ্লেষণ করে, বিমানের ছবি আঁকার চেষ্টা করলাম যাতে সেই
বিদ্যাটি সরলভাবে সকল ভাষাভাষীর গোচরীভূত হয়।
আমার তখন ৮১ বছর বয়স। সেই বয়সে আমাদের দেশের
জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চাকে নতুন করে প্রকাশ করতে নিদারুণ এক পরীক্ষায় বসতে হল। ছাপা
নতুন করে শুরু হল। তখন শুধু সংস্কৃত নয় সঙ্গে জুটেছে ইংরেজিও, ফলে বেশ কয়েকবার ধরে
ইংরেজি এবং সংস্কৃত অনুবাদের ছাপার ভুলগুলি সংশোধন করা শুরু হল। ছাপার অনেক বর্ণও
তৈরি করতে হল। এ ধরণের পুঁথি ছাপতে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু কে
দেবে! আমরা আমাদেরই ক্ষুদ্র সঞ্চয় ভেঙে ছাপার কাজ, ছাপাখানার নানান সংস্কারের করে
যেতে শুরু করলাম। এবং ভগবানের সকরুণ ইচ্ছায় বইটি শেষ পর্যন্ত প্রকাশ হতে পারল, ৯০
বছর পর।
বৈমানিক শাস্ত্রে ৬০০টি স্তবক, ৩০০০টি শ্লোক রয়েছে।
পুরনো সংস্কৃত ভাষায় বিমানের নানান প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা
হয়েছে।
পণ্ডিত সুব্বারায়া শাস্ত্রী নানান ধরণের প্রচুর শাস্ত্র
সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সহজ, সরল, সাধারন কিন্তু প্রাচীন ধরনের এক
ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতীয় নানান বিদ্যার চলন্ত বিশ্বকোষ ছিলেন। তাঁর জীবনের
উদ্দেশ্য ছিল আধীত বিদ্যাকে আগামী দিনের জন্য উতসর্গ করে যাওয়া। তিনি সক্রেটিসের
মত দারিদ্র্যের অন্তুরালে জীবন যাপন করেছেন। ব্যক্তিগত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য
মুহূর্তমাত্র ব্যয় করেন নি।
১৮৮৫ সালে আরেক নির্লোভ ব্যক্তিত্ব বি সূর্যনারায়ণ রাও
তাঁর যোগ্য অনুগামী হন। ১৯১১ সালে তিনি মাদ্রাজ থেকে ভৌতিক কলা নিধি নামে একটি
পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই পত্রিকায় তিনি বিভিন্ন গবেষকের নানান উতসারিত
বিদ্যার নির্যাস প্রকাশ করতে শুরু করেন। এবং ভগবানের পরম করুণায় এই
মহাগুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার ছ’টি সংখ্যা আমাদের হাতে এসে পড়ে। ১ আগস্ট ১৯১৮ সালে
তিনি তাঁর শিষ্য ভেঙ্কটচলা শর্মাকে বৈমানিক শাস্ত্র বলতে শুরু করেন এবং শর্মা ২৩টি
খাতায় সেই আলোচনা লেখা শেষ করেন ২৩ আগস্ট ১৯২৩।
মহাঋষি ভরদ্বাজের বৈমানিক শাস্ত্র প্রকাশের জন্য তৈরি
হল। তিনি বুদ্ধি করে একজন প্রয়ুক্তি আঁকিয়ে(ড্রাফটসম্যান)কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর
নির্দেশমত বিমানের নানান ছবি আঁকিয়ে নিয়ে পুঁথির শেষে জোড়াপাতা করে জুড়ে দেন।
দেশে তখন গান্ধিজীর অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে। পন্ডিত
সুব্বারায়া শাস্ত্রী জেলে গেলেন। বহু লড়াই
করে তাঁর মুক্তি হলেও তাঁকে নজরবন্দী করে রাখা হল। ১৯২৮ সালে তিনি দ্বারভাঙ্গার
মহারাজকে পুঁথিটির প্রকাশনার জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখলেন। মহারাজা সে আবেদনে
কর্ণপাত করলেন না। ভগ্নহৃদয় তিনি মধ্য ৩০এর দশকে ইহলোক ত্যাগ করলেন।
এর পরের ২০ বছর এই শাস্ত্রটি আগলে রেখেছিলেন তাঁর কন্যা
এবং ভেঙ্কটরাম শাস্ত্রী। তারপর সব ইতিহাস।
No comments:
Post a Comment