প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন
লোথালের(আজকের গুজরাতের
মংগ্রোল বন্দর) ২৩০০ বছর আগে সরস্বতী-হরপ্পা সভ্যতা ড্রাই ডক তৈরি করতে পেরেছিল
অবলীলায়। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন বলছে ১৮-২০ মিটার লম্বা, ৪ মিটার চওড়া পরিমাপের
অন্তত দুটো জাহাজের একসঙ্গে বন্দরে ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত লোথাল বন্দর
কর্তৃপক্ষ। সরস্বতী-হরপ্পা সভ্যতা সেদিনের মেসোপটেমিয়া(টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদীর
মধ্যভাগ, বর্তমানের ইরাক, উত্তর সিরিয়া, দক্ষিণ পূর্ব তুর্কী), আরব এবং ক্যাম্বের
উপসাগর অঞ্চলে ব্যবসা করত। এই অঞ্চল থেকে ভারতের উৎপন্ন দ্রব্য বিশ্বের নানান দেশে
বিতরিত হত। সিন্ধু নদীর মুখ থেকে মেসোপটেমিয়ার দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।
সিন্ধুর ধোলাভিরা অঞ্চল থেকে ভারতের ব্যবসায়ীরা আরব উপকূলভাগের নানান বন্দরে
ব্যাবসা করতে করতে মেসোপটেমিয়ায় পৌঁছতেন। ফলে দিক নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র
পথে, যথেষ্ট পরিমানে পণ্য বহন করে প্রায় ২০০০ কিমি দুরত্ব পার করার মত জলযানও
প্রস্তুত করতে হত। শুধু আরব বা প্রাচ্য এলাকাই নয়, এশিয়ার নানান দেশ, ইউরোপে,
আফ্রিকাতেও ভারত ব্যবসা করেছে সমুদ্র পথে। শুধু ভারত মহাসাগরে বা পারস্য উপসাগরেই
নয়, তাঁরা লহিত সাগর এবং মধ্যপ্রাচ্য হয়ে আগিয়ান (Aegean) সমুদ্রেও
ব্যবসা করতেন। সভ্যতার শুরু থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিশ্বের নানান সমুদ্রপথের খবর
রাখতেন। মিশর ভারতকে ভগবানের দেশ বলে অভিহিত করত। কেননা, ভারত নিজেকে, নিজের মত
করে বিকশিত হয়েছিল। মিশরের রাজপরিবারে অথবা পূজনের কাজে অপর্যাপ্ত পরিমানে নানান ধরণের
দামী গন্ধ দ্রব্য, গাছ গাছড়া প্রয়োজন হত। ৪২৫ খৃস্ট পুর্বাব্দের দার্শনিক হেরডোটাস
বিশদে লিখেছেন ভারত থেকে কত ধরণের গাছ গাছড়া আমদানি করত মিশর। মেয়েদের সাজসজ্জা,
রূপটানের প্রায় সমস্ত দ্রব্য ছিল ভারতের তৈরি।
উত্তরের মধ্য এশিয়া
থেকে দক্ষিণের ইন্দোনেশিয়া আর ফিলিপিন্স থেকে পশ্চিমের পারস্য এবং পূর্বের চিন,
জাপানের সভ্যতা থেকে একটা বিষয়ই প্রমান হয়, ভারত তাত্বিক আর সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে
এই দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে পেরেছিল। রোমেও ভারতের মশলা, পরিধেয়, দামী ধাতু, রং,
ইত্যাদি নানান পণ্য আদৃত ছিল। ভারতের নানান স্থানে রোমের মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে।
No comments:
Post a Comment