এটি বর্ষাভেজা রাঢ়-গ্রাম-বাংলার রান্নাঘর। গ্রামে সাধারণত একটু স্বচ্ছল পরিবারের সঙ্গে থাকেন প্রায় অনাত্মীয়, হয়ত দূরসম্পর্কের আত্মীয়, হয়ত অনাত্মীয়ও। রান্নাঘর আলাদা। এইরকম এক আশ্রিত পরিবারের রান্না ঘর।
আপনার আমার রান্না ঘরে বিপুল ব্যয়ে কেনা গ্যাসচুলা, ইলেক্ট্রিক চুলা, ভাতের ইলেক্ট্রিক হাঁড়ি, একটা মাইক্রোওয়েভ বাক্স আর একটু সৌখিন হলে বার্বিকিউ সেট সাজানো। এই সাধারণ অমধ্যবিত্তিয় গাঁইয়া অস্বচ্ছল পরিবারের রান্না ঘরে চারচারটে ছড়ানো উনোন। তিনটেয় রান্না হচ্ছে। অন্যটাতে হচ্ছে না কিন্তু কার্যকরী - হয়ত নিরামিশ চুলা। তিনটে স্থায়ী, একটা অস্থায়ী। এটিকে কোন যায়গায় তুলে নিয়ে যাওয়া যায় - যেটিকে গনগনে আগুণ জ্বলছে। পোড়া থেকে ভাজা থেকে সেঁকা থেকে ঝলসানো যা ইচ্ছে সব হবে - উৎসবে আচারে রান্নাঘরে বারোমাসে তেরো-হাজার রান্না। ভদ্রবিত্তের রান্নাঘরে আলুপোড়া, পাতুরি, পিঠে কোনও কিছুই ঠিকমত হয় না। তাও আমরা শহুরে পশ্চিমি স্বাচ্ছন্দ্যের ঘেরাটোপে এবং তার সমাজতত্ত্বের তৈরি করে দেওয়া তাত্ত্বিক কাঠামোয় এঁটে নিজেদের কোয়ালিটি অব লাইফের বড়াই করি আর নিজেদের জীবনধারণকে তুলনাকরি ইওরোপ-আমেরিকার অপচয়ী লুঠের সম্পদজাত জীবনধারার সঙ্গে।
এই রান্নাঘরে জ্বালানিটা মূলত গৃহস্থের নিজ নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ যে কি খাবে, কিভাবে খাবে, সেটা নিজে নির্ণয় করে, সরকার নয়। অর্থাৎ আপনার খাদ্যাভ্যাস নির্ণয় করছে রাষ্ট্র আর কর্পোরেট এই তথাকথিত প্রগতিশীল রন্নাঘর তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে।
রান্নাঘরটার দৈর্ঘ আর প্রস্থও আন্দাজ করুন উন্নতিশীল ইওরোপপন্থী ভদ্রবিত্ত ভাইবোনেরা আপনার নিজেরটির সঙ্গে।
একে সমৃদ্ধি বলবেন না? না বলুন।
কিন্তু কাকে সমৃদ্ধি বলবেন, সে তত্ত্ব খুঁজতে এর পরেও গবেষণার দরকার আছে?
No comments:
Post a Comment