পুনম বালা
যে চার ছাত্র শব ব্যববচ্ছেদ করে, তাদের নিয়ে মোট ১১ জন ৩০ অক্টোবর ১৮৩৮ সালে প্রথমতম চিকিৎসা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। তারাই বাংলার প্রথম পশ্চিমি পদ্ধতিতে শিক্ষিত চিকিৎসক, যারা শল্য এবং সাধারন চিকিৎসা করার অনুমতি পেল। এরাই ভারতীয় চিকিতসকেদের মধ্যে প্রথম, যারা মাসে ১০০ টাকা মাইনেয় ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, পাটনা এবং চট্টগ্রামে সাব-এসিস্ট্যান্ট সার্জনের পদে অভিষিক্ত হয়২৮।
পশ্চিমি চিকিৎসাবিদ্যায় ভারতীয় ছাত্রদের সাফল্য এবং একই সঙ্গে তাদের মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের দক্ষতায় উতসাহিত হয়ে তখনকার জেনারেল কমিটি অব পাব্লিক ইন্সট্রাকশনের সেক্রেটারি ড ওয়াইজ প্রস্তাব দিলেন, এদের মধ্যে ৮ জনকে ইওরোপে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রেরণ করা হোক।
বিলয় হওয়া এনএমআইএর এবং পরে মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেওয়া জনৈক দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪৫ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য যখন ইওরোপে যাচ্ছিলেন, তিনি দুজনকে তার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ৮ মার্চ ১৮৪৫ সালে যে ক’জন ইওরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য যান তাদের মধ্যে ছিলেন ভোলানাথ বোস, সুর্যকান্ত চক্রবর্তী, গোপালচন্দ্র শীল, দ্বারকানাথ বোস। খরচ তোলা হয় ড গুডিভের উতসাহে ব্যক্তিগত দানে স্থানীয় অভিজাতদের থেকে যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলার নবাব নাজিম।
১৮৩৭ সালে মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলির মৃত্যুর পর কমিটি অন পাবলিক ইস্ট্রাকশন প্রিন্সিপ্যালের পদ খারিজ করে একজন অচিকিতসক ডেভিড হেয়ারকে সেক্রেটারি পদে বসালেন। এই বছরেই সার্জারি, ক্লিনিক্যাল সার্জারি, বোটানি, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন এবং এনাটমিতে আরও অধ্যাপক নেওয়া হয়। ১৮৪১ থেকে ১৯১২র মধ্যে নিম্নোক্ত নীতিগুলো গ্রহন করা হয়,
অ। মেটিরিয়া মেডিকা থেকে কেমিস্ট্রি বিযুক্ত হয় ১৮৪২ সালের মার্চে,
আ। সার্জারি থেকে অপথ্যালমিক সার্জারি থেকে বাদ দেওয়া হয় ঐ সময়ে
ই। ধাত্রীবিদ্যা থেকে এনাটমি এবং সার্জারি বিযুক্ত করা হয় ১৮৫০এর ফেব্রুয়ারিতে
ঈ। মেডিক্যাল জুরিসপ্রুডেন্স পড়ানো শুরু হয় ১৮৫০ সালে
উ। ডেসক্রিপটিভ এন্ড সার্জিক্যাল এনাটমি বিভাগ ১৮৩৭ থেকে লেকচারারশিপ থেকে পুরো সময়ের অধ্যাপনার পদ পেল ১৮৫৫ সালে
ঊ। ১৮৫১তে ডেন্টিস্ট্রি শুরু হল
ঋ। ১৮৬৪তে হাইজিন পাঠ্যক্রমে ঢুকল
৯। এনাটমি থেকে জুলজি এবং কম্পারেটিভ এনাটমি ভাগ হল ১৮৬৯ থেকে
এ। ১৮৭১ সালে প্যাথলজি পাঠ্য হল
ঐ। ১৯১২ সালে ক্লিনিক্যাল সার্জারি পড়ানো শুরু হল।
১৮৪২ সালে পরীক্ষা ব্যবস্থা এবং জলপানি চালু করতে বাংলা ঔপনিবেশিক সরকার কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশনকে বিলুপ্ত করে কাউন্সিল অব এডুকেশন তৈরি করে।
পাঠ্যসূচী তৈরি হল, ক্যালকাতা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হল পাঠ্যক্রমের দিকে নজর রেখেই এবং কালে কালে সেটিকে ব্রিটিশ মেডিক্যাল চিকিৎসা প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির নিরিখে বদলে ফেলা হল। প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ প্রশাসকদের বক্তব্য ছিল প্রত্যেক বিষয়ে প্রয়োজনীয় সময় ধরে শিক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না এবং প্রত্যেক অধ্যাপককে বিপুল বৈচিত্রের বিষয় পড়াতে হচ্ছে। তাই এই স্বীকৃতির জন্য বিষয় ধরে ন্যুনতম ৭০ জন লেকচারারর এবং ডেমনস্ট্রেটর নিয়োগ করা হল যাতে একজন অধ্যাপককে একের বেশি বিষয় পড়াতে না হয়। এই পরিবর্তনে শিক্ষাক্রমকে চার বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হল – যে সংস্কার ব্রিটেনে এর ৪৫ বছর পরে প্রযুক্ত হবে৩৩।
১৮৪৪ সালে লন্ডনের রয়াল কলেজ অব সার্জনসের পরামর্শে পাঠ্যসূচী ঠিক করা হল এবং সেটি ১৮৪৬ সালেই তাদের অনুমতির সঙ্গে য়ুনিভার্সিটি অব লন্ডন, সোসাইটি অব এপোথিকারিজের মান্যতাও পেল।
পশ্চিমি চিকিতসাশিক্ষার ধারা অনুসরণ করে কলেজ সম্পূর্ণ রূপে চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষণের পাশাপাশি অধস্তন চিকিতসাকর্মী তৈরির উদ্যম নেওয়া হল। ১৮৩৫ সালে এনএমআই বিলয়ের ফলে এই ধরণের কর্মী আর তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে তাদের গুরুত্ব অসীম ছিল৩৫। ফলে সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য অসামরিক ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য দেশিয় ডাক্তারদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার ঠিক করল এডুকেশন কমিটির প্রস্তাবক্রমে দেশিয় ডাক্তারদের মেডিক্যাল কলেজেই পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। ১৮৩৮সালে দেশিয় ডাক্তারদের অভাব চরমে গিয়ে পৌঁছল। ১৮৩৮-৩৯ সালে অতিরিক্তভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা করে অবস্থা সামাল দেওয়া গেল। ১৯৩৯ সালের আগস্টে সরকারি নির্দেশনায় নতুন করে ১৮৩৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশিয় ভাষায় চিকিৎসা শিক্ষা দান আবার শুরু হল৩৭।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment