Sunday, March 5, 2017

দেশয় কৃষ্টি চর্চা অসমের মনসামঙ্গল - তুচ্ছ কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

বিজয় গুপ্ত যাঁকে পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণেরা বিজুসুজু বলে ডাকতেন এবং তার নামে নৌকোর নাম করেছিলেন। মঙ্গলকাব্য বিশেষ করে মনসা মঙ্গল নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন দীনেশ চন্দ্র সেন বৃহতবঙ্গে। পাঠক নিশ্চই পড়েছেন।

এবারে মনসামঙ্গল বিষয়ে কিছু ব্যক্তিগত অপ্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা। যিনি আমায় বিয়ে করেছেন, ললিতা, তার নৃত্য গবেষনাসূত্রে অসম জুড়ে ঘুরতে হয়েছিল - সে এক অভিজ্ঞতা। তার বিষয় ছিল সত্রিয়া, ওজাপালি এবং দেওধনি নৃত্যের বিকাশ বিবর্তন। ওজাপালি মনসার গীত। যে শেষ গুরু এই গানটি গাইতেন এবং লগে লগে নাচতেন, তাঁর নাম ললিত চন্দ্র নাথ ওজা। এবং গোটাটাই বিজয়গুপ্তের রচনার অহমিয়াকরণ। ললিতার দল আজ আর সে নাচ নাচেন না। আর ললিত গুরুজী নাথ ধর্মের প্রতিপালক এবং বলেছিলেন তিনি চিকিতসাও করেন, তাঁতে বোনেনও। একটা গামছা উপহার দিয়েছিলেন। তার পূর্ব পুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের মতই গৌড় থেকে গিয়ে অসমে গুয়াহাটি-মঙ্গলদৈ রাস্তায় ঘোড়ামারায় বসতি স্থাপন করেছিলেন ৭ কি আরও বেশি প্রজন্ম আগে।

অধ্যাপক>ওজা, আর ধুয়াদার পালি - দুয়ে মিলিয়ে ওজাপালি। গুরুজীর তখন(২০০০-২০০৩) বয়সই ৮৪। অসাধারণ গায়ক, নর্তক - গলায় সাদা উত্তরীয় একহাতে অন্যহাতে খুটিতাল(ছোট খঞ্জনির দুটি অর্ধ)এ তাল রেখে অসাধারণ কায়দা করে ধরে গান করেন - উত্তরীয়ই হয়ে ওঠে তার হাতে ধরা যন্ত্র কখোনো রথ, কখোনো অস্ত্র, কখোনো সাপ এবং নানান কিছু - গানকে স্বরক্ষেপ আর মুদ্রায় আর শুধু পালিদের বাজানো ঢোল আর ভোড়তালের ছন্দে এমন মুর্ত করেন, দর্শকের মনে হয় তিনি যেন জীবন্ত ঘটনা দেখছেন।

গুরুজীর পায়ে দেখেছিলাম একটি নুপুর জাতীয় বাদ্যযন্ত্র তালরাখার জন্য - ওরা বলেন তৌর্যত্রিকম এবং নাট্যশাস্ত্রে কিন্তু ঠিক সেই নামেই তাল রাখার যন্ত্রের উদাহরন পাচ্ছি। আজ লিখছি আর গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। এই অসম থেকেই পাওয়া গিয়েছিল শুভঙ্কর পণ্ডিতের(লাহিড়ী/চক্রবর্তী) ভারতীয় নৃত্যশাস্ত্রের একমাত্র আকরগ্রন্থ শ্রীহস্তমুক্তাবলী। গুরুজীর কিছু সাক্ষাতকার তখনকার চালু টেপে ধরা ছিল - আজ সেটি আমার বাড়িতে কি অবস্থায় জানি না - অসভ্যের মত ললিতার কাজের পর ভুলে গিয়েছি। সেগুলি আজ হয়ত লিখলে অনেক কিছুই নতুন তথ্য বেরোতে পারে। তার বাড়িতেই প্রথম তুলোট কাগজে পুঁথি দেখেছিলাম।

অসাধারণ সে গান, অসাধারণ সে পরিবেশনা। নন্দীগ্রামের গণহত্যার ঘটনার ৪ দিন পরে স্থির কলকাতায় তাঁর দলকে অনুষ্ঠান করিয়েছিলাম। হয়ত ভিডিও রয়েছে। দেখতে হবে।

No comments: