Friday, March 3, 2017

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - বাংলা-চিন ঐতিহাসিক সম্পর্ক


বাংলা-চিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে একটা গল্প শোনানো যাক-

বাংলায় তখন স্বাধীন সুলতানি আমল - প্রায় ৭০০ বছর আগের সময়।

রাজা গণেশ আমীরদের বিরুদ্ধতায় সিংহাসন ছেড়ে তার পুত্র যদু(জালালুদ্দিন - আজও জালালুদ্দিনকে গ্রাম বাংলা মনে রেখেছে। শহর মালদার ঠিক বাইরের গ্রামটির নাম যদুপুর)কে ক্ষমতায় বসায়। এই বশ্যতাতেও মন ভরে নি বাংলার আমীরদের। অভিজাতরা জৌনপুরের সুলতানকে বাংলা আক্রমনের প্ররোচনা দেন।

যদু আক্রমনের খবর জানতে পেরে চিনের মিং সম্রাট এবং মধ্য এশিয়ার সম্রাট শাহরুখের থেকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন।

দুই সম্রাটই জৌনপুরের সম্রাটকে জানায় বাংলা্র সার্বভৌম সুলতান তাদের বন্ধু রাজা। এই বার্তায় তখনকার মত জৌনপুরের সুলতান বাংলা আক্রমনের তোড়জোড় স্তিমিত করেন।

দুবছর পরে আবার তার আক্রমনের নবেচ্ছা দেখা দেয়। যদু জানতে পারেন খুব বড় সৈন্যদল নিয়ে তিনি বাংলা আক্রমনে আসছেন। আবার তার বন্ধু সাম্রাজ্যের খবর পাঠান যদু।

এবারে আর শান্তিবার্তা নয়, খোজা সেনাপতি জেং হির নেতৃত্বে চিন সম্রাট ১০০০ সেনার এক বাহিনী জলপথে বাংলার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন। তারা জলপথে বাংলার চট্টগ্রাম হয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। গৌড়ে(অবিভক্ত মুর্শিদাবাদ, অবিভক্ত দিনাজপুর, অবিভক্ত মালদা, জলপাইগুড়ির একাংশ আর রংপুর) তাদের প্রবল অভ্যর্থনা হয়। গৌড় শহরে তিনিটে টাঁকশাল চলছে। প্রত্যেককে সোনার মুদ্রা উপহার দেওয়া হয়।

চিনএর মিং আর বাংলার সুলতানি সেনার যৌথ দল আক্রমনদ্যোত জৌনপুরের দিকে রওনা হয়।

শেষ মেশ জৌনপুরের রাজা চিরতরে মিংএর বশ্যতা স্বীকার করেন এবং যুদ্ধ করা থেকে বিরত হন। পরস্পরের মধ্যে অনাক্রমন চুক্তি সম্পাদিত হয়।

চিন বিদ হিমাংশুপ্রভ ঘোষ আর তানসেন সেন বলছেন সে সময়ে আরবি আর তাতারি(অসহ্য বিকৃত ব্রিটিশ উচ্চারণে টাট্টু) ঘোড়া তুর্কি থেকে সোজা য়ুনান না গিয়ে বাংলা হয়ে তিনটি রাস্তা(তার মধ্যে একটি জলপথ) ধরে চিনে যেত। সে সময় বাংলা থেকে ৬০টিরও বেশি দ্রব্য চিন আমদানি করত।

জয় বাংলা।
জয় দিদি।
বাংলা-চিন ঐতিহাসিক দৌত্য চিরিজীবি হোক।

No comments: