মাধাই রায় মহান্ত |
বাবা হাউয়া রায়
মহান্ত। অক্লেশে হেসে
বলেন পিতার অষ্টমগর্ভের সন্তান। পিতার অষ্টম স্ত্রী মা ননীবালার
আগ্রহে গলায় গান তুলে নিয়ে ছিলেন। আজও এই ৮২ বছর বয়সে চোখ কুঁচকে মনে
করতে পারেন ১২ বছর বয়সে ছোকরা চরিত্রে আসমানের ফুল পালায় নর্তক হয়ে নামার
গর্বের দিনটি। বাঙলাসোরি ইংলিশ বাউদিয়া পালা শুনেই
মজেন খন গানে। গুনাইবিবি পালায় গুনাই চরিত্রে প্রথম অভিনয়। লিখতে জানেনা, পড়তেও জানেনা। সাহায্য নিতে হয় তৃতীয় ব্যক্তির। তৈরি করে ফেলেছেন ৫৬টির বেশি পালা।
ভেক নিয়ে
হয়েছেন মহান্ত। কৃষ্ণ-রাধা
নামে দীক্ষা নিয়েছেন। রাধা মন্ত্র
শিক্ষামন্ত্র। দেহটা বন্ধন হল রজোবীর্যে। শুধুই হাউয়াই নন, আমার পিতা অনেকেই। সঙ্গে রয়েছেন ভেকগুরু। তিনি কোপনি
দিলেন। তার
কাছে নতুন নাম পেলাম। শিক্ষাগুরুর কাছে পেলাম আচার আচরণ – আনন্দরতি, অবলীলায় তত্বকথা বলে চলেন তিনি। একপুত্র মাণিক। বাসস্থান, দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের
মালিপাড়া গ্রামে।
লালনগীতি,
তুখ্যা, ভাওয়াইয়া, বন্ধুয়ালা, মনসাগান গেয়ে যেতে পারেন অনায়াস দক্ষতায়। সুর তুলে গানের কলি গেয়ে একটানা না থেমে বলে যেতে পারেন, ভাওয়াইয়া অথবা
অন্যকোনও আঙ্গিকের অর্ধশিক্ষিত শিল্পীরা কী করে মিশিয়ে দিচ্ছেন নানান গানের চটুল সুরের
টুকরো। এতে গানের সর্বনাশ হচ্ছে, বললেন
বাঙলার এই অঞ্চলের ৭০ বছরের চলতাফেরতা রেফারেন্স লাইব্রেরি মাধাই।
সরকারের কাছে
শুধু পেয়েছেন জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের বাঁহাতে দেওয়া একটি দায়সারা শংসাপত্র। পাননি পেনশনও। কর্ণাটক থেকে
কেন্দ্রিয় সরকারের পেনসন প্রকল্পে প্রতি বছর ৬০এর কাছাকাছি শিল্পী মাসে ৪০০০ টাকা
পেনসন পেলেও সংস্কৃতিকর্মে তথাকথিত অগ্রসর পশ্চিমবঙ্গে এতদিনে মোট পেনসন পেয়েছেন ৮
জন। ভারত সরকারের সর্বোচ্চ কলাগুরু সম্মান পাওয়া আন্তর্জাতিক ছো মুখোশ শিল্পী নেপাল
সূত্রধরের তিনবছর আগের পেনশনের আবেদনের কী হল কেউ জানে না। মাধাইএরমত হাজারো আজানা গুরুপ্রতীম
শিল্পীদের কথা না বলাই ভাল।
প্রথম দিনটি
থেকেই মাধাই সদস্য হয়েছেন বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘের। ২০১২য় উদ্বোধন করেছেন দক্ষিণবঙ্গের প্রথম উত্তরবঙ্গ উতসব, উত্তররঙ্গ ১২। লোকবঙ্গ সম্মানও পেয়েছেন সংঘ থেকে। গুরুসদয় সংগ্রহশালার মাঠে, তারইমত হাতে গড়া শিল্পীদের সংগঠণ থেকে সম্মান
নিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। আবারও নতুন করে জেগে ওঠর স্বপ্ন
দেখছেন সংঘের কর্মকান্ডে। সংঘের উদ্যমে নতুন প্রজন্মকে নিয়ে
লিখিয়ে চলেছেন তাঁর সৃষ্টি। সংঘের সম্পাদক মধুমঙ্গল মালাকার ভাষায়,
সংঘ জানে, গুরু মাধাই রায় মহান্তদেরমত শিল্পীদের নতুন করে জাগিয়ে তোলার মধ্যেই সংঘের
বেঁচে থাকার সার্থকতা।
No comments:
Post a Comment