সে সময়ের ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা
ব্রিটিশ দেশটিকে গজকাঠি ধরে ভারতের শিক্ষা
ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ব্রিটিশদের পড়াশেনার পাট কী ছিল তা একটু নজর দিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
A. E.
Dobbs: Education and Social Movements
1700-1850, London পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ধরমপাল বলছেন, ষোড়শ
শতকের পর থেকে ব্রিটেন জুড়ে একটি আইন প্রণীত হয়, যে আইনে বলা হয়, ইংরেজি বাইবেল
চার্চেও পড়া যাবে না। বাইবেল পড়তে পারেন একমাত্র nobles,
gentry and merchants that
were householders। পড়ার নিযেধাজ্ঞা জারি করা হল Artificers’prentices, to journeymen and serving
men “of the degree of yeomen
or under”, to husbandmen and labourers’ so as ‘to allay certain symptoms of disorder occasioned by a free use of the
Scriptures।’ নতুন আইনে বলা হল, meet for the ploughman’s son to go to the plough, and the artificer’s son
to apply the trade of
his parent’s vocation: and the gentlemen’s children are meet to have the knowledge of Government and rule in
the commonwealth। For we have as much need of ploughmen as any other State: and all sorts of men may not go to
school।’ এর প্রায় এক শতাব্দ
পরে, সপ্তদশ শতকের শুরু থেকে ক্রমে ক্রমে ইংলন্ডে সাধারণ মানুষের পড়ার জন্য
চ্যারিটি স্কুলখেলা হতে থাকল।
এই স্কুলগুলির উদ্দেশ্য, ‘some leverage in the way of general education to
raise the labouring
class to the level of religious instruction’; এমনকী ওয়েলসএও এই উচ্চ
পাঠশালা খোলাহল, ‘with the
object of preparing the poor by reading and Bible study for the Sunday worship and
catechetical instruction।’ চ্যারিটি স্কুল আন্দোলনে ভাটা পড়তে থাকায়, ১৭৮০
নাগাদ সানডে স্কুল আন্দোলন গড়ে উঠল তবু তখনও ‘Popular education’, even at this period, ‘was still approached as a missionary
enterprise।’ এর একটাই উদ্দেশ্য
সাধারণ মানুয যাতে বাইবেল পড়তে পারে। এর কিছু পরে ডে
স্কুলের ধারণাটি জন্মায়। এমনকী ১৮৩৪ পর্যন্ত ‘the curriculum in the better class of national schools was limited in the main to religious
instruction, reading, writing
and arithmetic: in some country schools writing was excluded for fear of evil consequences।’ ডে স্কুল আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তিই ছিল ১৮০২এর
পিলএর আইন। এই আইন বলে প্রত্যেক কারখানার মালিক শিশুশ্রমিকের
জন্য, ‘to provide, during the
first four years
of the seven years of apprenticeship, competent instruction in reading, writing and arithmetic, and to secure
the presence of his
apprentice at religious teaching for one hour every Sunday and attendance at a place of worship on that day।’ কিন্তু এই আইন খুব জনপ্রিয় হয় নি।
এরই কাছাকাছি সময়ে জোসেফ
ল্যাঙ্কাস্টার এবং এন্ড্রু বেল এগমোর থেকে পোড়ো পদ্ধতি (মনিটরাল মেথড) ধার করেন,
যা পরে ল্যঙ্কাস্টার-বেল পদ্ধতি নামে পরিচিত হবে, ইংলন্ডে(এবং পরে বিশ্বে নানান
দেশে) প্রয়োগ করে উচ্চ পাঠশালা স্থাপনের চেষ্টা করলেন। ১৭৯২তে এ ধরণের
স্কুলে ছাত্রের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০,০০০, ১৮১৮তে ৬,৭৪,৮৮৩, এবং ১৮৫১তে ২১,৪৪,৩৭৭। ১৮০১এ যেখানে
৩,৩৬৩টি সরকারি-বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে মিশিয়ে ছিল ৩৩৬৩, সেখানে ১৮৫১তে এই সংখ্যা
বেড়ে দাঁড়াল ৪৬,১১৪টি। শুরুতে ‘the teachers were seldom competent’, এবং ‘Lancaster insinuates that the men were not only
ignorant but
drunken।’ ডবকে উদ্ধৃত করে
ধরমপাল বলছেন, ‘allowing
for irregularity of attendance, the average length of school life rises on a
favourable estimate from about
one year in 1835 to about two years in 1851।’
একই সময়ে ইংলন্ডে সরকারি স্কুলে ছাত্রসংখ্যা
অসম্ভবভাবে কমে এল। শ্রেয়সবেরির স্কুলে ছাত্র সংখ্যা দাঁড়াল চার। ইটনেরমত সরকারি
স্কুলে পড়ানো হত লেখন আর অংক(পড়ানো হত ইংরেজি আর ল্যাটিন বই)। পঞ্চম শ্রেণী থেকে
খগোল আর বীজগণিত। আর যারা ইটনে বেশিদিন থাকতেন তারা ইউক্লিড শিখতেন। তবে ‘not till 1851 that Mathematics became a part of
the regular school
work and even at that date those who taught the subject were not regarded as persons of full standing on
the staff of masters।’ ইংলন্ডে সর্বজনশিক্ষার ধারণাটিই তখন গড়ে ওঠেনি। তবুও শুধু ধরমপালজী নন,
ভারতের শিক্ষা গবেষকেরা তক্ষশিলা অথবা নালন্দা অথবা নবদ্বীপের সঙ্গে অক্সফোর্ড,
কেমব্রিজ, ইটন অথবা এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করছেন। ১৭৭৭এর পর যে সব
অভিযাত্রী, মণীষী, বিচারক, প্রশাসক ভারত ভ্রমণে এসেছেন তাদের অধিকাংশই এই
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাঠ গ্রহণ করেছেন।
ধরমপালজী ১৮০০র আশেপাশের সময়ে অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রসংখ্যা আর তার পাঠ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। রোম থেকে আলাদা
হওয়ার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের ১৫৪৬এর পর থেকে নানান অধ্যাপক পদের বিকাশ নিয়ে
বিশদে ধরমপালজী অলেচনা করেছেন-
১৫৪৬এ সপ্তম হেনরি পদ সৃষ্টি করলেন ডিভিনিটি,
সিভিল ল, মেডিসিন, হিব্রু, গ্রিক।
১৬১৯এ জিওমেট্রি,এস্ট্রোনমি,
১৬২১এ ন্যাচারাল ফিলোজফি, মরাল ফিলোজফি(মরাল
ফিলেজফিটি ১৭৭০ থেকে ১৮২৯ পর্যন্ত পড়ানো হয় নি),
১৬২২ এনশিয়েন্ট হিস্টোরি(হিব্রু আর ইওরোপ),
১৬২৪ গ্রামার, রেটরিক, মেটাফিজিক্স(১৮৩৯এর পরথথেকে
লজিক পড়ানো হতে থাকে),
১৬২৪ এনাটমি,
১৬২৬ মিউজিক,
১৬৩৬ আরবিক,
১৬৬৯ বটানি,
১৭০৮ পোয়েট্রি,
১৭২৪ মডার্ন হিস্টোরি মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ,
১৭৪৯ এক্সপেরিমেন্টাল ফিলজফি,
১৭৫৮ কমন ল,
১৭৮০ ক্লিনিক্যাল ইন্সট্রাকশন,
১৭৯৫ এংলো-স্যাকসন(ল্যাংগুয়েজ, লিটারেচার ইত্যাদি),
১৮০৩ কেমিস্ট্রি।
উনবিংশ শতকের শুরুতে অক্সফোর্ডের অধীনে ১৯টি
উচ্চতর পাঠশালা এবং অক্সফোর্ডএর পাঁচটি হল ঘর ছিল। উচ্চতর
পাঠশালাগুলোতে ৫০০দল ফেলো ছিলেন, তারা নির্দষ্ট উচ্চতর পাঠশালাগুলিতে পড়াতেনও। ১৮০০তে ১৯জন প্রফেসরও
ছিলেন। ১৮৫৪তে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৫এ। ধর্মতত্ব আর ধ্রুপদী
রচনা সমূহ ছিল মূল বিষয়। পরীক্ষা নেওয়া হত Literae Humanioresএ। থাকত গ্রিক, ল্যাটিন
ল্যাঙ্গুয়েজ ও লিটারেচর, মরাল ফিলজফি, রেটরিক, লজিক, এলিমেন্ট ইন ম্যাথমেটিক্যাল
সায়েন্স আর ফিজিক্স। ল, ফিজিক্স, জিওলজিও পড়ানো হত। উনবিংশ শতকের
প্রথমপাদের ৭৬০ ছাত্রসংখ্যা থেকে ১৮২০-২৪এ দাঁড়াল ১৩০০। উচ্চতর পাঠশালাগুলির
আয়ের উত্স ছিল দান, জমি থেকে আয়, আর ছাত্রদের মাইনে। মাইনে উচ্চতর
পাঠশালা থেকে কলেজে আলাদা ছিল। ১৮৫০ সালে একজন
ছাত্রের জামাকাপড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধেয়, যাওয়া আসার খরচসহ চার বছরের মোট খরচ
পড়ত ৬০০ থেকে ৮০০ পাউন্ড(সে সময় ৮০০ পাউন্ডে লন্ডনে রাজার হালে থাকা যেত)।
১৮৩৫এর পরে এংলিসিস্টদের প্রচারে ইংরেজি শিক্ষাপদ্ধতি বাঙলা
তথা ভারতজুড়ে ব্যাপকতম প্রচারটি পেল। উচ্চমধ্যবিত্তের সরাসরি
বিরোধিতা আর ইংরেজ অত্যাচারে ইতিহাস হয়ে গেল বাঙলা-বিহারের এক লাখেরও বেশি পাঠশালা। এর পরেও নানান ভাবে দেশিয়
ভাষায় শিক্ষাদানের প্রচেষ্টা হয়েছে। তত্ববোধিনী পাঠশালা চালিয়েছেন দেবেন্দ্রনাথ। চলেনি। ১৮৪০এ পাটনা হাই স্কুলের
প্রধান গুরুমশাই এস ম্যাকিনটশ এগারোটা দেশিয় ভাষার উচ্চ পাঠশালা খুললেও পরে তা
বন্ধ হয়ে যায়।
দ্বারভাঙা রাজও ১৮৬০এ ২৬টি গ্রামে উচ্চ পাঠশালা খুলে, চালানোর জন্য যথেষ্ট অর্থ
ব্যবস্থা করেছেন কিন্তু নানান কারনে বন্ধ হয়ে যায়।
বৃহত্তর বাংলার বিশাল সংখ্যক পাঠশালার গৌরবময় ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে পড়ে। ১৮৭২এ ওম্যালি বলছেন, "In 1872, Sir George
Campbell's scheme of educational reform was introduced, under which grants were
given in aid of schools hitherto unaided and many of the indigenous rural
schools called pathshalas were absorbed into the departmental system। ওম্যালির
ভাষায় এবজর্বড হয় কীনা জানা না গেলেও সেগুলোর অস্তিত্বযে লোপ পায় এটি
প্রমাণিত।
No comments:
Post a Comment