অতীতে বাংলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গালার নানান পুতুল তৈরি হলেও এখন এগরার কাছে পটাশপুরের পশ্চিমসাঁই আর প্রতাপদিঘি আর এগরার পাঁচরোলে টিমটিম করে টিকে আছে গালার পুতুল। আজ এই প্রবন্ধে শুধু খড়ুইএর গালার পুতুল নিয়েই আলোচনা করব।
গ্রামে ২৮টি শঙ্খবণিক পরিবার শাঁখার কাজে নিযুক্ত থাকলেও মাত্র চারটি পরিবার গালার পুতুলের কাজে যুক্ত। এর আগে আরও বেশি সংখ্যায় কারিগর যুক্ত থাকলেও লৌকিক শিল্পের ভাঁটার টানে অনেকেই বৃত্তিচ্যুত হয়েছেন। আজকের আলোচ্য খড়ুইএর শ্রীবাস চন্দ, গদাধর চন্দ, বৃন্দাবন চন্দ আর কানাই নন্দী এই কাজে যুক্ত। আজ শ্রীবাস প্রায় দৃষ্টিহীন। কাজ আর করতে পারেন না বললেই চলে। এদের অনেকেই শাঁখা শিল্পের সঙ্গে এক সময় যুক্ত ছিলেন।
গ্রামে ২৮টি শঙ্খবণিক পরিবার শাঁখার কাজে নিযুক্ত থাকলেও মাত্র চারটি পরিবার গালার পুতুলের কাজে যুক্ত। এর আগে আরও বেশি সংখ্যায় কারিগর যুক্ত থাকলেও লৌকিক শিল্পের ভাঁটার টানে অনেকেই বৃত্তিচ্যুত হয়েছেন। আজকের আলোচ্য খড়ুইএর শ্রীবাস চন্দ, গদাধর চন্দ, বৃন্দাবন চন্দ আর কানাই নন্দী এই কাজে যুক্ত। আজ শ্রীবাস প্রায় দৃষ্টিহীন। কাজ আর করতে পারেন না বললেই চলে। এদের অনেকেই শাঁখা শিল্পের সঙ্গে এক সময় যুক্ত ছিলেন।
প্রাথমিকভবে এই কাজ করতে উইএর ঢিবি থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এই মাটিতে কোনো কাঁকর থাকে না। আর মাটি মসৃণ আর আঠালো হয় - চিট ধরে। তাই মাটির পুতুল তৈরি করে পোড়ানোর পর মসৃণতার ধর্মের জন্য যদৃচ্ছভাবে গালা লাগানো চলে। প্রায় সারা বছর এই মাটি সংগ্রহ করা গেলেও বছরের বর্ষার সময় এই মাটি অধিক পরিমানে সংগ্রহ করা যায়। বড় পাত্রে এই মাটি নিয়ে জল মিশিয়ে দু-তিনদিন মাটিকে রেখে তা তৈরি করতে হয়। একপর কাঠের পাটাতনে রেখে মাটিকে ডলে ডলে মিহি করা হয়। এর পর হাত দিয়ে টিপে গণেশ, লক্ষ্মী, ত্রিনাথ, নানান ধরনের পশু, কচ্ছপ, ডাইনোসর, পাখি, গলার হারের লকেটসহ নানান ধরনের পুতুল তৈরি করা হয়। নানান পুতুলের বর্ধিত অংশে সরু লোহার তার ঢোকানো হয় আর দিন-তিনেক ছায়ায় রেখে দেওয়ার পর আরও দুতিন দিন রোদ খাওয়ানো চলে -এই কাজ চলে মোট সাতদিন। এরপর পুতুলের ভাটিতে দেওয়ার কাজ। ভাটি হয় আড়াই ফুট থেকে তিন ফুট উঁচু। ভাটির নিচের থেকে কিছু ওপরে লোহার রড দিয়ে ঘুঁটে সাজানোর পর আনুভূমিকস্তরে কিছু পুতুল রেখে আবার ঘুঁটে সাজানো হয়, এপর স্তরে স্তরে ১৫০টি পুতুল-ঘুঁটে সজ্জার পর আগুণ দেওয়া হয়। যতক্ষননা ওপরের স্তরের ঘুঁটে পুড়ে না যাচ্ছে, ততক্ষণ পোড়ানো চলে। সাধারণতঃ সকালে আগুণ লাগালে বিকেলে পুতুল বার করা হয়।
শিরিষ আর কুসুম গাছের বর্জ থেকে গালা পাওয়া যায় – কিন্তু আজকাল শিল্পীরা বাজার থেকেই গালা কেনেন। পুতুল তৈরির মতই গালার সুতো আর খড়ি তৈরির পদ্ধতিও বেশ সময়সাধ্য প্রক্রিয়া। বাঁশের দুটো কঞ্চির দণ্ড নিয়ে সেটিকে গরম করে দুটি দণ্ডের মুণ্ড দিয়ে চটকে চটকে সুতো তৈরি হয় অলঙ্করণের জন্য আর খড়ি তারি হয় সাধারণ রং করার জন্য। এই রংএ হলুদ হরিতাল সর্বঘাটে কাঁঠালি কলা।
পুতুলে রং করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে(আমি দেখেছিলাম আর্ধেক কলসি কেটে তার মুখ মাটিতে আটকে মুখটি মেঝের দিকে করে রাখা) কাঠকয়লা ধিকিধিকি করে জ্বেলে দুটি একটি পুতুল গরম করে রাখা হয়, এরপর পুতুলের নিচের দিকে লোহার দণ্ড আটকে সেটিকে ধরে ধরে প্রয়োজনীয় রং করা হয়
No comments:
Post a Comment