জলমাঙন ব্রত
প্রায় সমগ্র উত্তরবঙ্গ জুড়ে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলারা জলমাঙন ব্রত পালন করেন – আদতে বৃষ্টি জলের আশায় এই ব্রত। দেবতা যিনিই হেন না কেন, এই ব্রতের উপাস্য ঘন কৃষ্ণ মেঘ আর তার সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। জলঘটের ধান দুর্বা আমের পল্লব হল উপাসনার মাধ্যম। পুরুষেতন্ত্রের বাইরে গিয়ে সৃষ্টির প্রতীর মহিলারা মাথায় ঘট নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে নাচ গান করতে থাকেন। সর্বপ্রথম লক্ষ্য সবথেকে সম্পন্ন গৃদস্থের বাড়ি। সেখানে পুরুষ গৃহস্থকে উদ্দেশ্য করে গায় – কালা মেঘাক দিম কালা পাঁঠা, ধলা মেঘাক দিম ধলা(পাঁঠা), ওরে সুন্দরিয়া মেঘ মোর বাড়ি যাইস, ভাঙা খলটা দিম চাউল ভাইজে খাইস। এর পর গৃহিনীকে বলে – হামারা জলমাঙারা আইসাইছি গো, জলাইশরি, জল দিয়া কর কেনি বিদায়গে জলাইশরি। আবার অন্য বাড়িতে গিয়ে হয়ত গায় – সনার হাল গসাই উপার ফেল হে গসাই, দুই পাটিয়া মই তাহে নি মরে দুবরা বনরে, পানি আয় রে আয়। অথবা ম্যাঘা ম্যাঘা ডাক পাড়ছে ম্যাঘা নাই মোর ঘরেরে, ম্যাঘা গেছে শ্যাল বাড়ি জঙ্গলত্ রে। সব শেষে স্খানীয় কোনো নির্জন মাঠে গিয়ে ব্রতীনিরা গরু সাজে। সাজে হালুয়া(চাষী – যে হাল দেয়), কেউ লাঙল চালানোর ভঙ্গীতে কেউ বীজ বোনার ভঙ্গীতে নাচে। উত্তর দিনাজপুরের চাপদুয়ার গ্রামের রূপে বর্মণের দলের জলমাঙন ব্রতের নাচ দেখেছিলাম কয়েক বছর আগে।
No comments:
Post a Comment