ওপরের ছবিটি প্রয়াত শ্রদ্ধেয় বাজার হেমব্রমের - ২০০৭ সালের কলাবতী মুদ্রা আয়োজিত আসম-বাংলা লৌকিক দেশজ মিলন উত্সবে তাঁর অনুষ্ঠানের। বাজাচ্ছেন ডুমুরলি। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন নিচের এই কাজের উদ্যোগ আর সঙ্গের লেখাটিও।
গত ১ নভেম্বর, ২০১০, জয়াদির কলকাতার পর্ণশ্রীর ভদ্রাসনে লোকনদী প্রধান জয়া মিত্র, আর্থ ক্রাফ্টএর বিক্রম মিত্র আর কলাবতী মুদ্রার বিশ্বেন্দু নন্দ এক ভাবনাসভার আয়োজন করেন। উদ্দেশ্য বাংলার গ্রামীণ বাজার হারিয়ে কয়েকটি প্রায় মরনোন্মুখ লৌকিক ও আদিবাসী শিল্পের নতুন শহুরে বাজার অন্বেষণ। লোকনদী যদিও কলাবতী মুদ্রামত ঐতিহ্যশালী লোক বা আদিবাসী শিল্প বা আর্থ ক্রাফ্টএর মত নতুন পরিবেশবাদী হস্তশিল্প বিকাশে কাজ করছেনা -তার কাজ জলসম্পদ নিয়ে - কিন্তু পরোক্ষে এ ধরনের কাজে লোকনদী ট্রাস্ট প্রধান জয়া মিত্র বা কবি জয়া মিত্রের অবদান অনেকই অনেক দিন ধরে অনেকেই জানেন - বিশেষ করে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত ভূমধ্যসাগরে নানান প্রবন্ধ আমাদের ঋদ্ধ করেছে। জয়া মিত্রর সংস্থার নেতৃত্বে অন্য দুই সংস্থা লৌকিক শিল্পের নতুন শহুরে বাজার ধরার বিষয়ে আরও গভীরভাবে সমাজে কাজ করতে পারবে বলে বিশ্বাস করে - তারা বিশ্বাস করে এই বাজারি কাজ সফল হলে, সেই কাজের কুড় লৌকিক আদিবাসী শিল্পীদের হাতে তুলেদেওয়াই সময়ের দাবি - সেই দাবি মেনেই লৌকিক-আদিবাসী সবশিল্পীকে নিয়েই এই উদ্যোগ।
বিশ্বায়নের যুগে - বলাভাল উন্ননের ঢক্কানিনাদ যখন থেকে শুরু হয়েছে - লৌকিক ও আদিবাসী শিল্পগুরুরা হাজার হাজার বছর ধরে যে বাজারকে চিনতেন, সেই গ্রামীণ বাজার আর এ ধরনের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষণার কাজ করছেনা। শিল্পীরা আর এই বাজারের গতিপ্রকৃতি চিনতে পারছেন না। গ্রামীণ হাট, গ্রামীণ মেলা, নানান উত্সব-পুজাপার্বণ-মিলনমেলায় লৌকিক আর আদিবাসী শিল্পকলার স্থান নিয়েছে শহুরে শিল্প - বিশেষ করে স্টিল, প্লাসটিক আর নানান অপ্রাকৃত রসায়নজাত দ্রব্য। এর সঙ্গে জুড়েছে শহরজাত নানান ফেকজ ফোকএর সমাহার। শহরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা লৌকিক সমাজের দলছুট কোনো একক তাঁর চিরাচরিত শিল্প ঐতিহ্যকে ভেঙেচুরে তার মেধা-মনন-সম্পদ-অর্থ-যোগাযোগ এক করে সরকারি সাহায্যে নতুন কোনো এক শিল্প সৃষ্টি নিয়ে বাজারমাত করে ফেলছেন। দখল করছেন লৌকিক শিল্পীদের বাজার - রুটিরুজি।
আর অন্য দিকে নানান সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে লৌকিক শিল্পীদের নানান নতুন দ্রব্য। চলছে প্রকল্পের পর প্রকল্প। সরকারি বা এনজিও আমলারা জানেন না বা জানলেনই না যে আদৌ পারম্পরিক শিল্পগুলোর বাজার আছে কী নেই - পুরোনো শিল্প ভেঙে তৈরি করতে হবে নতুন ধরনের শিল্প। আমলাদের চেয়ার বাঁচাবার জন্য তৈরি হল নানান শিল্প-শিল্পী পুনর্বাসণ প্রকল্প - তৈরি হল নতুন হরেকরকমবা দ্রব্য - নানান উঠতি সরকারি-বেসরকারি ফ্যাশান পাঠশালার বটুদের পশ্চিমী শিক্ষায় শিক্ষিত মাথা ব্যবহার করে - ভারতীয় অন্যান্য শিক্ষারমতই যে শিক্ষার শেকড় রয়েছে ইওরোপে - দেশে নয় - ফলে তৈরি হচ্ছে শিব গড়তে বান্দর - দেশে বিদেশে তার আদৌ বাজার আছে কী না কেউ জানেনা। সেই প্রকল্পগুলোতে সব থেকে বেশি অর্থ পাবে কে - ফ্যাশান ডিজাইনার - মোট প্রকল্পের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত তার প্রাপ্য।
সমস্যা হল পুরোনো শিল্পগুলোর নতুন বাজার ধরার ব্যবস্থা হল না আর নতুনগুলোও বাজার পাবে কী না সে গূঢ়় তথ্য ভগাই একমাত্র জানেন। তাই সমস্ত নতুন শিল্প দ্রব্য পড়ে থাকে গ্রামীণ শিল্পীর গুদামে আর বাজারজাত হয় শহুরে শিল্পীর ফেকালো ফোক। গুণীরা এনজিওরা প্রবন্ধ আর প্রকল্প লিখে বাজারমাত করে ফেল্লেন। লৌকিক আদিবাসী শিল্পীরা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরে আজও তাদের বসবাস। দুবেলা অন্ন জোটাতে তাঁদের অন্য কাজ ধরতে হয়। সরকারি মোলায় যেতে পায়ে ধরতে হয় আমলাদের - অনায়াসে সেই সব বাজারে সাদরে ঠাঁই পান শহুরে ফেক শিল্প-শিল্পী- ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রায় প্রবেশ নিষেধ - একবার পশ্চিমবঙ্গ বা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কলকাতা আর জেলার হস্তশিল্প বাজারে গিয়ে দেখবেন নিজের চোখে।
এনজিওরা সম্পত্তি ভেবে কুক্ষিগত করে রাখেন এঁদের - এঁদের সাধারণের ছোঁয়া মানা - এ যেন বিশ্বায়নে নতুন দাস ব্যবসা। অথচ শহরে শহরে লৌকিক আদিবাসী শিল্পের বাজার যে তৈরি হয়েছে তাও এনজিওরা জেনে জানেননা। জানলেও দু-তিনবছরের ফান্ডিং এজেন্সির দেওয়া প্রকল্পে বেজায় খুশি থাকেন এনজিওরা - দুএকটি দোকানে দুটি ডোকরা - তিনটি ছো মুখোশ - চারটি পোড়ামাটির কাজ - পাঁচটি পট(যম পটের ঠাঁই হয় না) রেখে দায় শেষ করে আন্তর্জাতিক সেনিমারে বুকফুলিয়ে পেপার পড়ে আসা - শিল্পীদের এর পর ঠাঁই হয় রিক্সার সিটে, নয় রাস্তা তৈরির মজুর হিসাবে, খুব ভাল যোগাযোগ থাকলে চাএর দোকানের মালিক হিসেবে(বিশ্বাস না হয়, দেখে আসুন অন্ততঃ ১০বার বিদেশ ঘোরা দিনাজপুরের শোলা শিল্পী মধুমঙ্গলের অবস্থা)। অন্ততঃ বাংলায় বাজারদার অবস্থা বেশ ভাল ছিল - তিনি পেয়েছিলেন কুনালের সংস্থার চাকরি আর জয়াদির সান্নিধ্য।
এমতাবস্থায় তিনটি দল একসঙ্গে কাজ কবে ঠিক করে। এই নভেম্বরের শেষাশেষি থেকে লোকনদী ট্রাস্ট(এল), আর্থ ক্রফ্ট(ই) আর কলাবতী মুদ্রা(কে) অছি একযোগে বাংলার উদ্ভাবনী হস্তশিল্প, হাজার হাজার বছরের লৌকিক আর আদিবাসী সমাজের নানান ঐতিহ্যমণ্ডিত কলাকৃতি, লেখনি, বই, ভাবনা লোকচক্ষুর সামনে আনতে ভারত জুড়়ে পরপর কয়েকটি প্রদর্শণী(লেক উত্সব) আয়োজন করতে মনস্থ করেছে - যার মুখপাত হবে বাংলা থেকেই - যে প্রদর্শনীগুলোতে ক্রমশঃ প্রমশঃ প্রদর্শিত হবে বাংলার লৌকিক আদিবাসী প্রায় না দেখা শিল্পকলা - যার অনেকগুলিই তৈরি করেন হয়ত একটি শুধু পরিবার বা একটিমাত্র গ্রাম - তাঁরা এই কাজ ছেড়ে চলেগেলে সেই শিল্পের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। হাজার হাজার বছরের শিল্প ইতিহাসে নীরবে তৈরি হবে আরও একটি শূণ্যতা - যে শূণ্যতার গল্প শহরের বুদ্ধীজীবিদের পাতে এসে পড়লে তৈরি হবে হাজার হাজার মৃত্যুগাথা, প্রকল্প আর দীর্ঘশ্বাস - কাজের কাজ শিল্প আর শিল্পীর অনুপস্থত-স্মৃতিতে আরও কিছু সরকারি অর্থ ব্যয়। এই তিন সংস্থার মিলিতভাবে নামহবে লেক - নামটি জয়াদির দেওয়া - সকলেই শ্রদ্ধা আর আনন্দের সঙ্গেই নামটি গ্রহণ করে। একটি কমিটি তৈরি করা হবে যেখানে হারিয়ে যেতে বসা শিল্পের শিল্পীরা থাকবেন। তাঁরা শহরের বাজারের এই কাজে তৈরি হয়ে গেলেই এই ধনের কাজ তুলে নেবেন নিজের সম্প্রদায়ের হাতে। লেক তখন অন্যকাজে মন দেবে।
এই ভাষ্যপড়ে যে যা বুঝবার বুঝুন। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। মা ফলেসু কদাচন।
এই প্রদর্শনীগুলি উত্সর্গীকৃত হোক বাজারদার অমলিন স্মৃতিতে। আশাকরি সকলেই এই প্রস্তাব সমর্থন করবেন।
Lokfolk লোকফোক forum of folk লোক tribal আদিবাসী culture সংস্কৃতি of West Bengal পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা. LOKFOLK is Bengal বাংলা India's ভারতের traditional পারম্পরিক knowledge system জ্ঞানভাণ্ডার, history ইতিহাস, Indigenous technology প্রযুক্তি. We have two mass bodies গনসংগঠন Bongiyo Paromporik Kaaru O ও Bastro Shilpi Sangho; Bongiyo Paromporik Aavikaar Shilpi Sangho. Journal পত্রিকা, PARAM, পরম. Picture - KaaliKaach কালিকাচ, Dinajpur দিনাজপুর, Madhumangal মধুমঙ্গল Malakar মালাকার
Tuesday, November 2, 2010
বাজারদার স্মৃতিতে ভারত জোড়া লৌকিক-হস্তশিল্প-পুস্তক প্রদর্শনী - লেকএর উদ্যেগে
লেবেলসমূহ:
আর্থ ক্রাফ্ট,
কলাবতী মুদ্রা,
প্রদর্শনী,
বাংলা,
লোক বা আদিবাসী শিল্প,
লোকনদী
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment