গোল পোড়ামাটির উত্তল মাটির থালায় আঁকা রীতিকেই সরা বলে। মনেকরা হয়, পঞ্চকল্যাণী পটের বংশাবলীর মধ্য থেকে উঠে এসেছে লক্ষ্মীসরা। এ অঙ্কণরীতিও বেশ উপজীব্য। লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে ধানের শিষ, কলমী, পদ্ম, প্যঁচাসহ লক্ষ্মী আঁকা হলেও কৃষ্ণরাধা বা দুর্গামূর্তি আঁকা সরা বাজারে আজও পাওয়া যায়। সরার প্রান্তে এক আঙুলপরিমাণ এক রংএর, বিশেষ করে লাল রংএর পাড় এঁকে মূল দেবচিত্রের সঙ্গে নানবিধ নকশার প্রতিমা আর কয়েকজন সহচরীরও মূর্তিও আঁকার প্রবণতা রযেছে। এলাকা অনুযায়ী তিন-পাঁচ-সাত পুতলি প্রভৃতি মোটিফের পুতলির সংখ্যা বাড়ে বা কমে। নদিয়া জেলার তাহেরপুর, নবদ্বীপে এখন উত্তর ২৪ পরগণার দত্তফুলিয়া অঞ্চলে লক্ষ্মীসরা তৈরি আর আঁকা হয়।
সরা শিল্পীরা প্রথমে মাটি ছেনে মাটির তালকে হাতের দুতালুর চাপে রুটির মত গোল আকৃতি দেন এর নাম চরা কাটা। এবার ঐ সরা আকৃতির তালকে কেনো পকা সরার ওপরে রেখে জলমাটির(ঘোলা) তরল মিশ্রণে ভেজানো পাতলা ন্যাকড়ার সাহায্যে মসৃণ করা হয়। এবারে কিছুক্ষণ ছায়ায় রেখে সেটিকে শোকানো হয়। এরপর ভাটিতে পোড়ানোর জন্য যায় এই সরা। লক্ষ্মী সরার ওপর যেসব চিত্র আঁকা হয় – নবদুর্গা, পাঁচপুতুল রাধাকৃষ্ণ, দুইপুতুল লক্ষ্মীনারায়ণ, এক লক্ষ্মী, তিন লক্ষ্মী, পাঁচ পুতুল ময়ূর প্রভৃতি।
বাংলাদেশের ঢাকাই সরা বা ফরিদপুরের সরার নিজস্ব আঁকার পদ্ধতি রয়েছে। ঢাকাই সরার দেবদেবী আঁকার নিচের দিকে থাকে একটি নাওএর প্রতিমা আর ফরিদপুরের সরাতে দেবদেবীরা সাধারণতঃ একটি চৌখুপির মধ্যে থাকেন। ফরিদপুরের সুরেশ্বরী সরার উপরিঅংশে সপরিবারে মহিসাসুরমর্দিনীর ছবি আঁকা হয়, আর নিচে সবাহন লক্ষ্মীমূর্তি থাকেন।
No comments:
Post a Comment