Lokfolk লোকফোক forum of folk লোক tribal আদিবাসী culture সংস্কৃতি of West Bengal পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা. LOKFOLK is Bengal বাংলা India's ভারতের traditional পারম্পরিক knowledge system জ্ঞানভাণ্ডার, history ইতিহাস, Indigenous technology প্রযুক্তি. We have two mass bodies গনসংগঠন Bongiyo Paromporik Kaaru O ও Bastro Shilpi Sangho; Bongiyo Paromporik Aavikaar Shilpi Sangho. Journal পত্রিকা, PARAM, পরম. Picture - KaaliKaach কালিকাচ, Dinajpur দিনাজপুর, Madhumangal মধুমঙ্গল Malakar মালাকার
Wednesday, November 3, 2010
পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চ -অলমিতি
তৈরির পদ্ধতি – যেহেতু এই কাজটি করেন কুম্ভকারেরা, সেহেতু হাঁড়িইত্যাদি তৈরির জন্য সংগৃহীত মাটির চারভাগের সঙ্গে একভাগ এঁটেলমাটি মিশিয়ে কাদার তাল তৈরি হয় । কয়েকদিন এই তাল রেখেদেওয়ার পর তুলসিমঞ্চের কাজ শুরু করেন শিল্পীরা। শুরুতে কাদার তাল থেকে সামান্য এক অংশ দড়ির আকৃতিমত লম্বাকার-গোলাকার করে বেরকরে নেওয়া হয় । একে বলে শিরা । পরিকল্পিত দৈর্ঘ অনুযায়ী পরিমাপমত লম্বা এই শিরাগুলি চওড়া কাঠের তক্তার ওপর পাশাপাশি জুড়ে ফেলে কাঠের তক্তা(সেথানীয়ভাষায় পিটানে) দিয়ে পেটানো হয় । পেটানোর পর এই পাশাপাশি শোয়ানো শিরাগুলি সমতল হয়ে ওঠে – যেন কাদার রুটি – এগুলো দেওয়াল তৈরি হল। পেটানোর দরুন ১ বা ২ সেমি হলে তুলসিমঞ্চের দেওয়াল তৈরির কাজ শেষ হয় ।
তুলসিমঞ্চগুলো যতকোণা হবে, ততগুলি দেওয়াল তৈরি করতে হবে । এর পর কুম্ভকার মঞ্চের কোণ অনুযায়ী তার দক্ষতা দিয়ে কাদার রুটি খাড়া করে পর পর কোণ করে দেওয়াল জুড়লে মঞ্চের দেওয়াল তৈরির কাজ শেষ হয়। দেওয়ালের জোড় শক্ত করার জন্য দুই দেওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে গোল লম্বা কাদার পাটি(শিরা) ঘোলা দিয়ে ডুড়ে দেওয়া হয় । এবারের দেওয়ালের কাজ শেষ । হাত দিতে হবে ওপরের অংশের কাজে ।
এবারে চাকের কাজ । কলসির ওপরের অংশ - কাণা যেভাবে তৈরি হয়, সেভাবে চাকে মাটি দিয়ে টাক ঘুরিয়ে তারি হয় বেশ মঞ্চের ওপরের অংশ । তবে সে অংশ কলসির থেকে বেশ পুরু করে তৈরি করতে হয় । এরপর সেটিকে লাগিয়ে দেওয়া হয় দেওয়াল জুড়ে নানান কোণা করা অর্ধতৈরি মঞ্চের ওপরে । চারচালা থেকে আটকোণা যে মাপেরই হোক না কেন, ছাদের চাল প্রথাগত মাটির বাড়ির নিচের দিকের চালের আকৃতি – ধনুকাকৃতি, প্রায় অর্ধগোলাকার বা বাঁকানো চালের কাজ যার প্রথাগত নাম পঙ্খের কাজ -সেই কাজেরমত করে তৈরি করা হয় ।
এবারে চলে নানান শিল্পসুষমা যোগকরার কাজ । কুম্ভকার শিল্পীরা পরপর যোগকরতে থাকেন নানান মূর্তিপুতুল । মূর্তিগুলোর গায়ে শলাকা দিয়ে মাটামুটি চোখ নাক ঠোঁট আকৃতি তৈরি করা হয় । ধারের দিকে লাগানোহয় একটু ওঠা অংশ যেখানে লতাপাতারকলকা আঁকা থাকে । কাঁচা মঞ্চগুলো কয়েকদিন ছায়ায় রাখার পর রঙ পড়ে – বনক রঙ - যাতে পোড়াবার পর এগুলোতে লাল রঙ ধরে। হাঁড়িকুঁড়ি পোড়াবার সময় এগুলিকে পোড়াবার জন্য দেওয়া হয় ।
আজকের অবস্থা – অন্যান্য লোক শিল্পের মতই পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চের গায়ে এখন ধূসর মৃত্যুর ছোঁয়া । এর আগেই বাদাই গানের ক্ষেত্রে যে সমস্যা, পোড়ামাটির তুলসিমঞ্চেরও একই সমস্যা – গাঁয়ের মানুষজনের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব । সাধারণতঃ গ্রাম বা জেলা শহরের নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীই এইসব শিল্পের সমঝদার আর পৃষ্ঠপোষক ছিল । পশ্চিমিশিক্ষার নিদারুণ প্রভাবে বা জেলায় জেলায় বামপন্থার জয়জয়কারের দরুন বিগত দু-তিন দশকধরে ক্রমশঃ এই পৃশ্ঠপোষকেরা তাদির নজর ঘুরিয়ে নানান পশ্চিমি সাজে তাঁদের ঘর দুয়ার সাজাতে শুরু করেন । এ ছাড়াও ক্রমশঃ হাঁড়িকুড়ির চাহিদা কমতে থাকায় পোড়ামাটির তুললসিমঞ্চ তৈরির কাজও কমতে খাকে – শিল্পীও তাঁর কাজের ক্ষেত্র পাল্টে ফেলতে থাকেন – অনেকেই তাঁদের বাপ দাদার চিরাচরিত শিল্পীর জীবিকা থেকে নীরবে উচ্ছেদ হয়ে যান।
চাইলে শিল্পীরা তৈরি করেদিতে পারেননা তা নয়, কিন্তু তা অর্ডার মাফিক । অন্যান্য লোকশিল্প শহরের বাজার ধরতে চেষ্টা করলেও তুলসিমঞ্চের সমস্যা তার ওজন আর চেবারা নিয়ে আর ফিরে তাকাতে পারে না । এ ছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানি করা মধ্যবিত্তপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষতার পৃষ্ঠপোষণের সঙ্গে চূড়ান্ত ধর্মীয় অনুষঙ্গভরা তুলসিমঞ্চের সমর্থনে পথে নামার বাধা অনেক । তাই বাজার জুটলনা তার । ঠাঁই হল জাদুঘরে ।
এ ছাড়াও সম্প্রতি হাটে বাজারে খুব শস্তায় দেদার বিকেচ্ছে ছবি আঁকা পোড়া চকচকে টালি শোভিত ইঁট-বালি-সিমেন্টে তৈরি তুলসিমঞ্চ । এ বিষয়ে অন্য একটি লেখার ইচ্ছে রইল । অলমিতি ।
লেবেলসমূহ:
২৪ পরগণা,
Bengal,
FolkCraft,
FolkTechnology,
Kumbhokars,
কুম্ভকার,
তুলসিমঞ্চ,
বাঁকুড়া,
মেদিনীপুর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment