পশ্চিম রাঢ় এলাকায় আশ্বিন সংক্রান্তিকে বলে জিহুড় দিন।
এই দিনটিতে স্থানীয় মানুষেরা আতপ চালের গুঁড়ি জলে গুলে ছিটা দেন ধান্য ক্ষেত্রকে, গাঠপালাকে, আসবাবপত্রকে, রান্নাঘরের বাসনপত্রকে। আদতে তাঁদের জীবনযাত্রার পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান বন্ধুবান্ধবকে তাঁরা এদিন শৈল্পিকভাবে, মাথা নামিয়ে অনন্ত শ্রদ্ধারভাবে স্মরণ করেন। এর সঙ্গে গোলার ধান-চালকে জাগানো হয় বা প্রস্তুত করা হয়, খেতের আসন্ন ফসলকে আহ্বান ও অর্চনা করা হয়। বাড়িতে খামারে যে আরলনা দেওয়া হয়, সেই সাদা চালগুোঁড়োর আলপনার মাঝে থাকে ছোট্ট একটি লাল টিপ। সাদা আলপনার মাঝে যারা সেই লাল টিপের মাহাত্ম্য দেখেন নি, তাঁরা জীবনে অনেক কিছুই হারিয়েছেন।
পশ্চিম রাঢ়ে আশ্বিন সংক্রান্তিকে বলে জিহুড় দিন। এই দিনে স্থানীয় মানুষেরা আতপ চালের গুঁড়ি জলে গুলে ছিটা দেন ধান্য ক্ষেত্রকে, গাঠপালাকে, আসবাবপত্রকে, রান্নাঘরের বাসনপত্রকে। আদতে তাঁদের জীবনযাত্রার পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানান বন্ধুবান্ধবকে তাঁরা এদিন শৈল্পিকভাবে, মাথা নামিয়ে অনন্ত শ্রদ্ধারভাবে স্মরণ করেন। এর সঙ্গে গোলার ধান-চালকে জাগানো হয় বা প্রস্তুত করা হয়, খেতের আসন্ন ফসলকে আহ্বান ও অর্চনা করা হয়। গান গেয়ে বাড়িতে খামার বাড়ির সঙ্গে নানান স্থানে আলপনা দেওয়া হয় – জাগো গো জাগো মা দেবি, জাগো লক্ষ্মীঠাকুরাণী, বন্দনা জানাই গো মা অর্চনা করি তোমায়, আবাহন জানাই তোমায় মা, আরতি করি গো তোমায়। অচলা হয়ে থাকো মা গো আলোকিত করে আমাদের ছোটো কুঁড়ে। জাগো গো জাগো মা দেবি, লক্ষ্মীঠাকুরাণী।
লক্ষ্মীকে আবাহন আর অলক্ষ্মীকে ঝেঁটিয়ে হেনস্থা করে বিদায় দিতে ভাঙা হাঁড়ি, পুরোনো ঝাঁটা, ভাঙা কুলো আর কেঁদ কাঠের লগুড় রাখা হয়। জিহুড় দিনে ২১ রকমের শাক-পাতা রান্না করে খাওয়ার বিধি সর্বজনমাণ্য – আজও এই পশ্চিমি ধারাকে মাথায় নিয়ে দেশজ চিকিত্সা ধারায় অবিশ্বাসের দিনেও গুরুজনেরা জানেন এই শাক-পাতার ঔষধিগুণ। ভারতীয় চিকিত্সা শাস্ত্রের হাত ধরে আর গ্রামীণ গৃহচিকিত্সার টোটকা বিধি ধরে মেনেই গ্রামীণেরা বেঁচে এসেছেন হাজার হাজার বছর। এটি এমন এক দিন যে দিন সমগ্র ভৌগোলিক সমাজ নতুন নতুন করে স্মরণ করেন চিরাচরিত নানান ঐতিহ্যবাহী আচার আচরণ আর বিধিগুলোকে। এই ২১টি শাক-পাতাগুলির নাম হল – ওল, কেঁউ, বেতো, সরিযা, কাল কাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শোলফা, গুলঞ্চ, ভাঁট পাতা শুশুনি, কলমি, কুদ্রুম(কুদ্রুং), কুলেখাড়া, থানকুনি, ব্রাহ্মী, কালমেঘ, বাসক।
সমগ্র সমাজের বিশ্বাস এই জিহুড়ের রাতে সার্পকূল গর্তে প্রবেশ করে মুদ নেয়, আবার তারা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে জৈষ্ঠের ১৩ তারিখে। জিহুড় দিনে আরও একটি কাজ করা হয়, মা মনসার প্রতি পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয় কোনো মানসার মন্দিরে নয়, নিজের বাড়ির তুলসি মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে। এদিন থেকে আর্থাত্ আশ্বিন সংক্রান্তি থেকে কার্তিক সংক্রান্তি পর্যন্ত পূর্বপুরুষের স্মরণে আকাশ প্রদীপ দেওয়া হয়। পুরুলিয়ায় বনাঞ্চল সে অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবিকার সংস্থান। সেদিন সমগ্র মানভূম এলাকায় বনদেবীর পুজো করে লাক্ষার চাষ শুরু হয়।
প্রবীণরা বলেন জিহুড়ের রাতে হালকা বৃষ্টিপাত হয় – এই বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় মুখে নিলে সৌভাগ্যলাভ সুনিশ্চিত। অনেক বিশ্বাসী মানুষ তাই বৃষ্টি পেতে সারারাত মাঠে অপেক্ষা করেন। সমাজের প্রবীণদের আরও বিশ্বাস জিহুড়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী গভীর রাতে তিনবার ডাক দেন – একে বলে জিহুড়ের ডাক – সেই ডাক শোমার জন্য বৃদ্ধবৃদ্ধারা সারারাত উত্কীর্ণ হয়ে থাকেন।
No comments:
Post a Comment