গুণীব্যাক্তিরা বলেন ভারতে তাস খেলার প্রচলন হয়েছে ওলান্দাজদের এ দেশে আসার পর। সারা দেশেই দিশেষ করে রাজবাড়িগুলোতেই এই ধরনের তাসের খেলার প্রচলন ঘটে খ্রিষ্টিয় দ্বাদশ দশকে। সারা ভারতের সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবাড়িতেও এ খেলার বিশেষ প্রচলন ছিল। এখানে দুধরণেক তাস খেলার প্রচলন ছিল – দশাবতার তাস আর নক্সা তাস।
দশাবতার তাসের মোট সংখ্যা ১২০টি। মত্স, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, জগন্নাথ আর কল্কি এই দশ অবতার ঘিরে তৈরি হয় তাসের প্রবাহ। প্রতি অবতারেরর খণ্ডে থাকে ১২টি তাস – রাজা, উজির, এক্কা, দোক্কা, তিক্কি, চৌকা, পাঞ্জা, ছক্কা, সাত্তা, আটা, নক্কা আর দশ। তাসগুলি গোল আর ব্যসে হয় চার বা সাড়ে চার ইঞ্চির। রাজা ও উজির এই দুশ্রেণীর তাসে দশাবতার মূর্তিগুলি সরাসরি অঙ্কিত হয়। অন্য তাসগুলিতে অবতার অনুযায়ী আয়ুধগুলি অঙ্কিত – মাছ, শঙ্খ, চক্র, কমণ্ডল, কুঠার, তীর, গদা, পদ্ম, খড়্গ। পদ্ম প্রতীক ব বুদ্ধদেবের – এ তাসে জগন্নাথ আর বুদ্ধ অভিন্ন।
প্রতি তাসের খণ্ডের রংএর ব্যবহারেও বৈচিত্র রয়েছে। মত্সাবতার আঁকা হয় কালো রংএ। মত্স ছাবি ছাড়া কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, জগন্নাথ আর কল্কি আঁকায় যথাক্রমে খয়েরি, সবুজ, ধূসর, নীল, সাদা, লাল, ফ্যারকা, হলুদ, সিঁদুরে লাল রং ব্যবহার হয়। দেশি রংএ ছাগললোমের তুলি আজও ব্যবহার করেন আজও বিষ্ণুপুরের শাঁখারিপাড়ার শীতল ফৌজদার। ৫০ বছর আগেও অনেক শিল্পী ছিলেন, কিন্তু আজ শুধু কালের হস্তাবলেপনে টিকে আছেন শুধু শীতলএর পরিবার। আজ আর এই তাস খেলার প্রচলন নেই। শুধুই ব্যক্তিগত বা যাদুঘরগুলোর প্রয়োজনে এই তাস বিক্রি হয়।
আর এক ধরনের তাস যার নাম নক্সা তাস, দশাবতারের সঙ্গে তৈরি হয়। এতে থাকে ১২টি খণ্ডে ৪৮টি তাস – সাহেব, গজপতি, বিবি(অশ্বপতি), ফুল, পতাসহ ফুল, তলোয়ার, চৌকো ফুল, ফুল, শংখ, পত্র, পালোয়ান আর পরী। প্রতি খণ্ডে চারটে করে তাস। পরীর এক ফোঁটা। তলোয়ার সাত ফোঁটা। সাহেব ১২ ফোঁটা। কয়েক খণ্ড আলাদা আলাদা নামে ফুল হিসেবে চিহ্নত হলেও প্রত্যকটির গড়ন আর রং আলাদা। মানুষ আঁকা তাসগুলি মূল তাস বাকি সব ফোঁটা। মোট সতের ফোঁটার খেলা – যে খেলোয়াড় আগে ১৭ ফোঁটা পাবে তার জিত।
শোনাযায় এই অঞ্চলে অষ্টমল্ল নামে এক ধরনের তাস খেলা চালু ছিল। ৩২ বা ৬৪টি তাসের খেলা। আজ আর দেখা যায় না।
No comments:
Post a Comment