Sunday, March 29, 2020

আকবরের খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য



খাবার নিয়ে বাবরের কোনও ঝামেলা ছিল না। কিন্তু হুমায়ুন খাবারের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক স্থাপন শুরু করেছিলেন, কিন্তু আকবর প্রথম খাবারের সঙ্গে আভিজাত্য, সম্মান বোধ ইত্যাদি যোগ করেন।
আকবরকে খাবার সাজিয়ে দিত খোজারা ঠিকই কিন্তু খাদ্য তৈরির শৃঙ্খলায় বহু মানুষ জুড়েছিলেন। পশু পালক থেকে রাজকীয় হাকিম অবদি সক্কলে। হাকিম দৈনন্দিনের খাবারের পরিকল্পনা করতেন যাতে সম্রাট এবং অভিজাতদের সঠিক পুষ্টি ইত্যাদি খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে যায়। বিরিয়ানির প্রতিটি দানা রূপোর তেলে(সেটা কী) ভেজানো থাকত যা কামোদ্দীপনার কাজ করত। কিন্তু যে খাবারটি তৈরি হত মাঠে বা খামারে তাকে লালনপালন করাও একটা বড় কাজ ছিল। কলিন টাইলর সেন বলছেন রাজকীয় মুরগিগুলিকে গোলাপ জলে জাফরান মিশিয়ে খাওয়ানো হত এবং কস্তুরি আর চন্দন তেল দিয়ে ডলাইমালাই করা হত রোজ। আকবরের রান্না ঘরে বা আবদার খানায় ছিলেন প্রধান বাবর্চি, মুন্সি, একজন খানইখানান বা স্টোর কিপার, টেস্টার, করণিক বাহিনী এবং ভারত আর পারস্য থেকে আসা রাঁধুনি সহ সহ ৪০০ জনের বাহিনী। খাদ্য সোনা রূপো পাথর এবং মাটির বাসনে সাজানো হত। ঢাকা থাকত কাপড় দিয়ে। পাহাড় থেকে আনা হত জল ঠাণ্ডা করার বরফ এবং সেটি দিয়ে নানান মিষ্টান্ন তৈরি হত।
আকবর তিনদিন নিরামিশ খেতেন। শুধুই পান করতেন গঙ্গাজল। বাগানের গোলাপের জল করে তরকারিতে দেওয়া হত। কিছু কিছু খাদ্য প্রয়োজনের জন্যে তৈরি করা হত যেমন সানিবুশা বা সমোসা অথবা ঘি আদা এলাচ, মেথি এবং লবঙ্গ দিয়ে রান্না করা পালং শাক, হারিসা - ভাঙা গম গজি আর দারুচিনি দিয়ে মাংস, হালিম - তরকারিওয়ালা মাংস, ইয়াখনি বা মাংসের শুরুয়া, বা গোটা ঝলসানো ভেড়া।
আগেই বলেছি খাবারের সময় দীর্ঘ এটিকেট পালন করা হত। বাবর একবার কাশি রুখতে গিয়ে প্রায় মারাই যাচ্ছিলেন। অনেকেই বলেছেন সম্রাটের সঙ্গে খাওয়ার খুবই ঝকমারি ছিল। কিন্তু সেই অভ্যেসগুলো ক্রমশ অভিজাতদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
পাতে খাওয়ার দেওয়ার একটা বিশদ ব্যবস্থা ছিল। রান্না হওয়ার সময় মূল রাঁধুনি এবং বাকওয়াল প্রথম খাওয়ারের স্বাদ নিতেন। তারপরে স্বাদ নিতেন মীরবাকওয়াল। তার পাঞ্জার ছাপ পাওয়ার পরেই কোন কোন বাসনে খাওয়ার সম্রাট সকাশে যাচ্ছে তার একটা হিসেব রাখা হত - যাতে রান্না ঘর থেকে খাওয়ার ঘরে যাওয়ার পথে কোনও বাসন পরিবর্তিত না হয়। এই খাদ্যগুলি প্রহরী দিয়ে বহন করে নিয়ে যাওয়া হত। কার্পেটের ওপরে একটা কাপড় পেতে সেগুলো সাহিয়ে রাখা হত। রুটি, আচার এবং অন্যান্য মশলা ইত্যাদিও সেলাই করা থলেতে দেওয়া হত। সিলগুলি খোলার পরে নতুন করে মীরবাকাওয়াল আবার সেগুলি স্বাদ নিতেন। তারপরে সম্রাটের খাওয়া শুরু হত।
এখন এই অবদি থাক, ভবিষ্যতে বাকিটা হবে
সূত্র - আইনি আকবরির পাঁচটি খণ্ড, কলিন টেলর সেনের কারি আর গ্লোবাল হিস্ট্রি, লেজলি কলিংহ্যামের কারি আ টেল অব কুকস এন্ড কনকারারস। সালমা হুসেন দ্য এম্পারার টেবল, আর্ট অব মুঘল কুইজিন

No comments: