Tuesday, March 17, 2020

নালন্দার পতন একটা বড় রোগের উপসর্গ মাত্র

ভারত জোড়া বৌদ্ধ ব্যবস্থার প্রথম থেকেই, বুদ্ধের সময় থেকেই দুটি প্রধান ঠ্যাকনা ছিল রাজা(বুদ্ধ নিজে রাজার পুত্র) আর শ্রেষ্ঠী(তার শ্রেষ্ঠ বন্ধুরা ছিল বড় বড় শ্রেষ্ঠী)। ১২০০র পর থেকে ক্রমশ এই দুটো ঠ্যাকনা সরে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এর পতন হতে থাকে।
এই অবস্থা বর্ণনায় মনের মাধুরী দিয়ে উপনিবেশিক ইতিহাস ইসলামফোবিয়া চারিয়ে দিতে থাকে।
---
কিন্তু মিনহাজে নালন্দার ধ্বংসের সূত্র পাচ্ছি না, বিহার ধ্বংস হচ্ছে পাচ্ছি, বিহারে একটা বড় বিহার ছিল না, অনেক বিহার ছিল। ঐ বিহারে বৌদ্ধ নয় ব্রাহ্মণ খুন করার তথ্য পাচ্ছি। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তথ্যে প্রচুর ফাঁক থাকছে। এই ফাঁক পূরণ হয়েছে ইসলামোফোবিয়া দিয়ে।
---
তাই নালন্দার পতন নিয়ে দুটো প্রশ্ন
১) দেড় মাইল লম্বা আধ মাইল চওড়া একটা বিদ্যাকেন্দ্র, যেখানে ছাত্র ছেঁকে নেওয়া হত(চরম এলিটিস্ট - পরীক্ষায় বসার ২০% নেওয়া হত - বাংলাদেশের ভিকারুন্নেসা বা আমাদের এখানে মিশন নামধারী বিদ্যালয়গুলি), যেটা জনগণের দানে মূলত চলত না, চলত রাজার দানে, কুমারগুপ্ত, বুদ্ধগুপ্ত, তথাগতগুপ্ত, বালাদিত্য, বজ্র, হর্ষবর্ধন ইত্যাদি রাজারা দান দিত। গুপ্ত এবং বর্ধনদের মত বর্মনেরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে উৎসাহিত হলেন। বলা হয় পূর্ণবর্মন এবং যশোবর্মদেব নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওজনের সমমানের অর্থ দান করেন। বাংলার পাল রাজা দেবপাল ভিক্ষুদের ভরণপোষণের জন্যে গ্রাম দান করেন। দূর দেশের সুবর্ণদ্বীপ এবং যবদ্বীপের(সুমাত্রা এবং জাভা) রাজারা এই বিদ্যালয়ে দান দিতে থাকেন। ফলে অর্থের বিষয়ে মহাবিদ্যালয় কিন্তু কখোনোই কোনও অভাব ছিল না।
এই কাঠামো রাজার বা শ্রেষ্ঠীর বিনিয়োগ ছাড়া রাখা সম্ভব নয়। ফলে রাজার পৃষ্ঠপোষণা পাল্টে গেলে যা হওয়ার হয়েছে, তাই না কী?
২) ঔপনিবেশিক ইতিহাসক্রমে ধরেই নিলাম বখতিয়ারের আঘাতে নালন্দা ধ্বংস হল। ভাল কথা। এক হাজার বছর ধরে প্রখ্যাততম শিক্ষকেরা যে সব ছাত্র তৈরি করেছেন, শ্রেষ্ঠী তৈরি করেছেন বিদ্যালয়ে পাঠ দিয়ে, তারা কোথায় গেলেন? বখতিয়ার তো উত্তরবঙ্গে গিয়ে মারা যান। তখন তো এখানে বখতিয়ার ছিলেন না। তারা কেন ফিরে এলেন না তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিদ্যালয় গড়তে? শোনা যায় এর আগে দুবার নালন্দা ধ্বংস হয়, আবার গড়ে ওঠে। এবারে গড়ে উঠল না কেন? তিব্বতি রাজারা কী করছিলেন, যারা একশ বছর আগে শান্তি রক্ষিত আর দীপঙ্করকে নিয়ে যান? তাঁরা এলেন না কেন?
---
কেন? এর সহজ উত্তর কেউ বলেন নি। রাজার পৃষ্ঠপোষকতা বদল আর শ্রেষ্ঠীরা বৌদ্ধপন্থ ছেড়ে দিলেন। শ্রেষ্ঠীদের বৌদ্ধপন্থে ফিরে আসা নিয়ে হরপ্রসাদের বেনের মেয়ে পড়ে দেখা যেতে পারে।
যে দুটো ঠ্যাকনা রাজা আর শ্রেষ্ঠী দিয়ে বিশাল বিশাল বিশ্ব জোড়া বৌদ্ধ মঠ এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্যে আমলা তৈরির কারখানা রাষ্ট্র চালিয়ে রেখেছিল, সেই দুটো ঠ্যাকনাই সরে গেল।
বখতিয়ার স্রেফ বাহানা। পূর্বাঞ্চলের সামাজিক রাজনৈতিক কৃষ্টির পরিবেশোটাই তখন পাল্টে গিয়েছে।
এই পতন থেকে মঠ কেন সমগ্র বৌদ্ধপন্থকে উদ্ধার করার জন্যে রাজাও নেই শ্রেষ্ঠীরাও নেই।
এই শুন্যস্থান পূরণ করেছে ইসলামোফবিয়া।

No comments: