আইনিআকবরিতে আবুলফজল যে ধণাঢ্যতার বর্ণনা দিচ্ছেন, তার প্রতিফলন পাচ্ছি এক পাদ্রির বর্ণনায়,
'সম্রাটের জন্যে তৈরি খাবার খুবই ব্যয়বহুল ছিল, অন্তত ৪০টি পদের খাদ্য রোজ সাজানো থাকত। রাজকীয় খাবার ঘরে খাবারগুলি আসত লিলেন কাপড় দিয়ে আটকিয়ে। এই বন্ধনটা হেঁসেলে নিজের ছাপ্পা দিয়ে আটকে দিতেন রাঁধুনি, যাতে রাস্তায় কেউ পাত্রে বিষ দিতে না পারে। খাওয়ার ঘরের দরজা অবদি যুবকের দল সেগুলি বয়ে নিয়ে আসত, অন্যান্যরা তাদের পাশাপাশি পাহারা দিয়ে হেঁটে আসত। এখানেই খোজাদের হাতে তুলে দেওয়া হত খাবার। সেই পাত্রগুলি সম্রাটের সামনে সাজানোর কাজ করত মেয়েরা। তিনি একা একাই খেতেন। তবে মাঝে মাঝে জনভোজসভাতেও তাঁকে যোগ দিতে হত। রেশমের চাদরে জড়ানো কুশনে মোড়া বিদেশি লতাপাতায় সাজানো হেলানো পালঙ্কে বসতেন।'
পাদশার মহিমা তৈরি করা ছাড়াও এই বর্ণনাটির আকর্ষণীয় দিক হল বিপুল বিশাল ঐশ্বর্যের মধ্যে একা বসে খাওয়ার চিত্রটি। গুরুত্বপূর্ণ হল মহিলাদের ভূমিকা - তারা কিন্তু সম্রাটের সঙ্গী হয় না। হুমায়ুনের সময় দেখেছি মহিলারা পাদসার সঙ্গে খাবারের অংশিদার হচ্ছেন। এখানে মহিলাদের কাজ হল শুধুই পরিবেশন করা এবং পরিবেশ উজ্জল করা। হারেমের খাবারের আলাদা ব্যবস্থাপনা ততদিনে তৈরি হয়ে গিয়েছে।
আবুল ফজল লিখছেন 'মহামহিম হিংসায় বিশ্বাস করতেন না, হিংসায় আহত হতেন। তিনি প্রজাদের জীবন দিতে ভালবাসতেন - জীবন নিতেন না। তিনি মাসের পর মাস মাংস থেকে দূরে থাকতেন (অজ ঘিজা-ই গোস্ত ফারেজ আওয়ারদ) এবং তিনি ভাবতেনই না। ঐহিক বিষয় নিয়ে তাঁর কোনও উতসাহই ছিল না। চব্বিশ ঘন্টায় মাত্র একবার খেতেন। কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাইতেন। সন্ধ্যেয় কিছুটা অবসর নিতেন আর কিছুটা সকালে। রাতে যেন তিনি হাঁটতেন।'
আবুল ফজল বলছেন, সম্রাট যদিও খুবই কম খেতেন, কিন্তু খাদ্যের ঐশ্বর্য, বৈচিত্র বজায় রাখার নির্দেশ দিতেন। তিনি মাংস খেতেন না, বা জীব হত্যাকে ঘৃণা করতেন, কিন্তু বিপুল মুঘল সাহিত্যে শিকারের প্রভূত আয়োজন দেখি। যদিও ঐতিহাসেকেরা বলছেন শিকারের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষা করা, শক্তি দেখানো, কিন্তু সেখানে জীব হত্যা হত।
No comments:
Post a Comment