গুরুমা, জয়া মিত্র দিদির আর্ষবাক্য তুলে ধরে বলি, যে বই বা লেখা আমরা পড়তে পড়াতে ভালবাসি, সে লেখা আমি আমাদের পত্রিকায় ছাপাই - যাতে বহুমানুষ তা পড়েন। এই উপন্যাসখানাও তাই - এটির প্রচার হোক। আমাদের খুব ভাল বরাত এটি আমাদের হাতে এসে পড়েছে। সাধারণত গল্প-উপন্যাস আমাদের পাঠতালিকায় থাকে না। বইমেলায় ইপ্সিতা অমরবাবুর একটা বই ধরিয়েছেন - চোখের মাথা খেয়ে না বলতে পারি নি - কিন্তু বন্দরের সান্ধ্যভাষা অসাধারণ লেগেছে।
ফিরি পঞ্চাননমঙ্গলে।
ঐতিহাসিকেরা যে সময়কে বলেন বাংলার মধ্যযুগ, যে যুগে নাকি 'বাঙ্গালা সাহিত্যের তো কোনো নিদর্শন তো নাই-ই, বাঙ্গালা ভাষারও কোনো হদিশ পাওয়া যায় না(সুকুমার সেন উবাচ - যদিও কেন তিনি পূর্ববঙ্গ গীতিকার কথা ভুলে গেলেন কে জানে - যেখানে মেয়েরাই সমাজের সূত্রধর আর ক্ষমতায় থাকা ছেলেরা যেন রঙ্গিন সুতো জড়ানো পুতুল - তাঁদের যে যা বলছে তাঁরা সেটি অম্লান বদনে বিশ্বাস করে যান - আর মেয়েরা ছেলেদের নানান দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করেন, নিজেদের বলে, বুদ্ধিতে, দক্ষতায়)' সেই সময় ধরেছেন তিনি। পাঁচমুড়া গ্রামে পঞ্চাননমঙ্গল পুঁথি খোঁজা নিয়ে ২৩০ পাতার কাছাকাছি এই উপন্যাস। পঞ্চাননমঙ্গলে কবিতায় প্রকাশ হয়েছে নানান অঙ্কের সূত্র।
তো আজ আমরা জিভার্গিস যোশেফএর ক্রেস্ট অব দ্য পিকক, বা চন্দ্র কান্ত রাজুর নানান গবেষণার কাজে জেনে গিয়েছি, পাইএর মান আবিষ্কার, শূন্যের প্রয়োগ, ত্রিকোনোমিতির প্রয়োগ, সৌরজগতের গড়ন, কমলালেবুর আকারের পৃথিবীর ব্যাস গণন সহ হাজারো আবিষ্কার ইত্যাদি ভারত-চিন-আরব সভ্যতার দান। আর্যভট্ট গ্রুপএর গবেষণায় জেনে গিয়েছি, কিভাবে পূর্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান পশ্চিমে প্রবাহিত হল, যদিও পশ্চিম এটি স্বীকার করে না আজও। পশ্চিমের বহু আগে এগুলি পূর্বে আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে(বিনীত ভাবে বলি পরম অঙ্ক সংখ্যায় এই তত্ত্বগুলি যতটা পারা যায় আলোচনা করেছে)। অঙ্কের এই সূত্রগুলি পঞ্চাননমঙ্গলে কবিতায় লিখে রাখা হয়েছে ধর্মীয় সূত্রের আকারে। উপন্যাসে প্রীতম বসু দেখিয়েছেন বাংলা লিপির বিবর্তনের ইতিহাসও - অসাধারণ সেই বর্ণনা - বছর বছর ধরে কিভাবে লিপি আজকের বাংলা লিপিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
অসাধারণ বললে কম বলা হয়। প্রথমত বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসে লেখকেরা ঐতিহাসিক নানান তথ্য দিতে খুব কুণ্ঠিত থাকেন। তাঁদের ধারণা হয় পাঠক এটি পড়বেন না। কিন্তু এই উপন্যাসে অসম্ভব কুশলতায় প্রীতম মিলিয়েছেন সেদিনের তথ্য-বাস্তব। দীনেশ সেন, বিনয় ঘোষ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যারা পড়েছেন, তাঁদের এত দিন পরে মনে হবে, এই তথ্যগুলি কি মুন্সিয়ানায় গপ্পে রূপান্তরিত করা গেল।
তবে তিনি যেটি প্রমান করার চেষ্টা করেছেন, মুসলমান হানাদারেরা এই সভ্যতায় এসে কেন শুধু বই পুড়িয়েছেন - তার বক্তব্য তাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞানের যে সূত্রাবলী ভারত থেকে নিয়ে গিয়েছেন সেই কথা যেন বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য - সে তত্ত্ব কজন মানবেন তা বলা কঠিন - কিন্তু সেটি লেখকের বিশ্বাস - তা না হলে বেছে বেছে শুধু পুঁথি পোড়ানো হল কেন - সত্যি সত্যি তার কথা শোনাই যায়।
তবে এটি কোনোভাবেই বিজেপি বা সংঘ তত্ত্ব অনুসারী লেখা নয় - এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় - তার সব তত্ত্বের প্রমান লেখক তার উপন্যাসে দিয়ছেন - সংস্কৃততে অঙ্কের সূত্র লিখে দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে বলি, বিজেপিওয়ালাদের ভারত সভ্যতা বিষয়ে উদ্ভট সব দাবি আদতে পশ্চিমি বিজ্ঞানের, জ্ঞানচর্চার উপনিবেশচর্চার নানান সূত্র প্রমান করতে সাহায্য করছে করে তা তাঁরা জানেনো না।
শুধু কতগুলি মন্তব্য -
১) আর্যভট্ট বোধহয় নয় - আর্যভট - চন্দ্রকান্ত রাজু উবাচ - আর্যভট্ট হলে এটি ব্রাহ্মণ - আর আর্যভট হলে অন্য সমাজের মানুষ।
২) নদীটার নাম বোধহয় আত্রায়ী - আত্রেয়ী নয়।
৩) উপন্যাসে উল্লিখিত শবরদের খাদ্য না পেয়ে শুকিয়ে যাওয়ার তথ্য বোধহয় খুব বেশি ঐতিহাসিক কি? যে মানুষদের বন ছিল মা, তাঁদের রোগভোগ সেদিনের; যেদিন থেকে ব্রিটিশ রাজত্ব জঙ্গল ধ্বংস, লুঠ করে উপনিবেশের(শুধু ভারতেরই নয় ব্রিটিশ বিশ্বের) রাস্তা, বিশাল বিশাল যুদ্ধ জাহাজ, রেলগাড়ি, বাংলো-আসবাব, বড় কারখানার জন্য নানানবিধ সামগ্রী লন্ডনে নিয়ে যেতে শুরু করতে, জঙ্গলের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হল এই মানুষদের থেকে, জাঙ্গুলে জমি ছিনিয়ে নেওয়া হল পশুপালক/চারকদের থেকে, দেওয়া হল কৃষকদের অতিরিক্ত রাজস্বের জন্য, তখন থেকে জঙ্গলে থাকা মানুষদের মহিলাদের অধঃপাতে যাওয়া শুরু(বীণা লালের দারুণ লেখা আছে কিভাবে জমির চরিত্র বদল হওয়ায় পাঞ্জাবে পণপ্রথা শুরু হল)। বিশেষ করে ১৭৯১ সালে ভারতে আসা ডেনিস চিত্রকর সল্ভিনের আঁকা ছবিতে সে সময়ের সাধারণ মানুষের ছবি রয়েছে। তাতে কিন্তু সক্কলে সুগঠিত চেহারার। ঠিক মুসলমান আক্রমনে বাংলার জ্ঞানচর্চার ভিত কিছুটা নড়ে গিয়েছিল, কিন্তু অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে নি - তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭৫৭র পরের লুঠ, ৭৬এর গণহত্যা আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের।
যে ছিদ্রগুলির কথা বললাম ছিদ্রান্বেষীর ছিদ্র বার করা - খুব গুরুত্বের একটা নয় - ফাঁকা কলসি তো একটু বেশিই শব্দ করে।
তবু শত মুখে বলি, পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গলের তুলনা সে নিজেই - আমাদের বুক একটু চওড়া হল - কেউ এতদিনে বাংলার জ্ঞানচর্চা ভিত্তিক তথ্য নির্ভর করে উপন্যাস লিখলেন - সেগুলি শুধুই জ্ঞান দেওয়া নয় - এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে।
বাংলার লক্ষ লক্ষ গ্রামীন উতপাদকের পক্ষ থেকে লেখককে একটু বেশি শুভেচ্ছা।
আবারো অনুরোধ করব, এটি খুঁজে পড়ুন আর পড়ান।
ঐতিহাসিকেরা যে সময়কে বলেন বাংলার মধ্যযুগ, যে যুগে নাকি 'বাঙ্গালা সাহিত্যের তো কোনো নিদর্শন তো নাই-ই, বাঙ্গালা ভাষারও কোনো হদিশ পাওয়া যায় না(সুকুমার সেন উবাচ - যদিও কেন তিনি পূর্ববঙ্গ গীতিকার কথা ভুলে গেলেন কে জানে - যেখানে মেয়েরাই সমাজের সূত্রধর আর ক্ষমতায় থাকা ছেলেরা যেন রঙ্গিন সুতো জড়ানো পুতুল - তাঁদের যে যা বলছে তাঁরা সেটি অম্লান বদনে বিশ্বাস করে যান - আর মেয়েরা ছেলেদের নানান দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করেন, নিজেদের বলে, বুদ্ধিতে, দক্ষতায়)' সেই সময় ধরেছেন তিনি। পাঁচমুড়া গ্রামে পঞ্চাননমঙ্গল পুঁথি খোঁজা নিয়ে ২৩০ পাতার কাছাকাছি এই উপন্যাস। পঞ্চাননমঙ্গলে কবিতায় প্রকাশ হয়েছে নানান অঙ্কের সূত্র।
তো আজ আমরা জিভার্গিস যোশেফএর ক্রেস্ট অব দ্য পিকক, বা চন্দ্র কান্ত রাজুর নানান গবেষণার কাজে জেনে গিয়েছি, পাইএর মান আবিষ্কার, শূন্যের প্রয়োগ, ত্রিকোনোমিতির প্রয়োগ, সৌরজগতের গড়ন, কমলালেবুর আকারের পৃথিবীর ব্যাস গণন সহ হাজারো আবিষ্কার ইত্যাদি ভারত-চিন-আরব সভ্যতার দান। আর্যভট্ট গ্রুপএর গবেষণায় জেনে গিয়েছি, কিভাবে পূর্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান পশ্চিমে প্রবাহিত হল, যদিও পশ্চিম এটি স্বীকার করে না আজও। পশ্চিমের বহু আগে এগুলি পূর্বে আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে(বিনীত ভাবে বলি পরম অঙ্ক সংখ্যায় এই তত্ত্বগুলি যতটা পারা যায় আলোচনা করেছে)। অঙ্কের এই সূত্রগুলি পঞ্চাননমঙ্গলে কবিতায় লিখে রাখা হয়েছে ধর্মীয় সূত্রের আকারে। উপন্যাসে প্রীতম বসু দেখিয়েছেন বাংলা লিপির বিবর্তনের ইতিহাসও - অসাধারণ সেই বর্ণনা - বছর বছর ধরে কিভাবে লিপি আজকের বাংলা লিপিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
অসাধারণ বললে কম বলা হয়। প্রথমত বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসে লেখকেরা ঐতিহাসিক নানান তথ্য দিতে খুব কুণ্ঠিত থাকেন। তাঁদের ধারণা হয় পাঠক এটি পড়বেন না। কিন্তু এই উপন্যাসে অসম্ভব কুশলতায় প্রীতম মিলিয়েছেন সেদিনের তথ্য-বাস্তব। দীনেশ সেন, বিনয় ঘোষ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যারা পড়েছেন, তাঁদের এত দিন পরে মনে হবে, এই তথ্যগুলি কি মুন্সিয়ানায় গপ্পে রূপান্তরিত করা গেল।
তবে তিনি যেটি প্রমান করার চেষ্টা করেছেন, মুসলমান হানাদারেরা এই সভ্যতায় এসে কেন শুধু বই পুড়িয়েছেন - তার বক্তব্য তাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞানের যে সূত্রাবলী ভারত থেকে নিয়ে গিয়েছেন সেই কথা যেন বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে সেই জন্য - সে তত্ত্ব কজন মানবেন তা বলা কঠিন - কিন্তু সেটি লেখকের বিশ্বাস - তা না হলে বেছে বেছে শুধু পুঁথি পোড়ানো হল কেন - সত্যি সত্যি তার কথা শোনাই যায়।
তবে এটি কোনোভাবেই বিজেপি বা সংঘ তত্ত্ব অনুসারী লেখা নয় - এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় - তার সব তত্ত্বের প্রমান লেখক তার উপন্যাসে দিয়ছেন - সংস্কৃততে অঙ্কের সূত্র লিখে দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে বলি, বিজেপিওয়ালাদের ভারত সভ্যতা বিষয়ে উদ্ভট সব দাবি আদতে পশ্চিমি বিজ্ঞানের, জ্ঞানচর্চার উপনিবেশচর্চার নানান সূত্র প্রমান করতে সাহায্য করছে করে তা তাঁরা জানেনো না।
শুধু কতগুলি মন্তব্য -
১) আর্যভট্ট বোধহয় নয় - আর্যভট - চন্দ্রকান্ত রাজু উবাচ - আর্যভট্ট হলে এটি ব্রাহ্মণ - আর আর্যভট হলে অন্য সমাজের মানুষ।
২) নদীটার নাম বোধহয় আত্রায়ী - আত্রেয়ী নয়।
৩) উপন্যাসে উল্লিখিত শবরদের খাদ্য না পেয়ে শুকিয়ে যাওয়ার তথ্য বোধহয় খুব বেশি ঐতিহাসিক কি? যে মানুষদের বন ছিল মা, তাঁদের রোগভোগ সেদিনের; যেদিন থেকে ব্রিটিশ রাজত্ব জঙ্গল ধ্বংস, লুঠ করে উপনিবেশের(শুধু ভারতেরই নয় ব্রিটিশ বিশ্বের) রাস্তা, বিশাল বিশাল যুদ্ধ জাহাজ, রেলগাড়ি, বাংলো-আসবাব, বড় কারখানার জন্য নানানবিধ সামগ্রী লন্ডনে নিয়ে যেতে শুরু করতে, জঙ্গলের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হল এই মানুষদের থেকে, জাঙ্গুলে জমি ছিনিয়ে নেওয়া হল পশুপালক/চারকদের থেকে, দেওয়া হল কৃষকদের অতিরিক্ত রাজস্বের জন্য, তখন থেকে জঙ্গলে থাকা মানুষদের মহিলাদের অধঃপাতে যাওয়া শুরু(বীণা লালের দারুণ লেখা আছে কিভাবে জমির চরিত্র বদল হওয়ায় পাঞ্জাবে পণপ্রথা শুরু হল)। বিশেষ করে ১৭৯১ সালে ভারতে আসা ডেনিস চিত্রকর সল্ভিনের আঁকা ছবিতে সে সময়ের সাধারণ মানুষের ছবি রয়েছে। তাতে কিন্তু সক্কলে সুগঠিত চেহারার। ঠিক মুসলমান আক্রমনে বাংলার জ্ঞানচর্চার ভিত কিছুটা নড়ে গিয়েছিল, কিন্তু অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে নি - তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৭৫৭র পরের লুঠ, ৭৬এর গণহত্যা আর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের।
যে ছিদ্রগুলির কথা বললাম ছিদ্রান্বেষীর ছিদ্র বার করা - খুব গুরুত্বের একটা নয় - ফাঁকা কলসি তো একটু বেশিই শব্দ করে।
তবু শত মুখে বলি, পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গলের তুলনা সে নিজেই - আমাদের বুক একটু চওড়া হল - কেউ এতদিনে বাংলার জ্ঞানচর্চা ভিত্তিক তথ্য নির্ভর করে উপন্যাস লিখলেন - সেগুলি শুধুই জ্ঞান দেওয়া নয় - এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে।
বাংলার লক্ষ লক্ষ গ্রামীন উতপাদকের পক্ষ থেকে লেখককে একটু বেশি শুভেচ্ছা।
আবারো অনুরোধ করব, এটি খুঁজে পড়ুন আর পড়ান।
No comments:
Post a Comment