রিচারিয়াজীর সাক্ষাৎকার৩
ক্লঃ মধ্যপ্রদেশ
সরকার কবে আপনাকে বলল ধান্য গবেষণাগার স্থাপন করতে?
রিঃ ১৯৭১এ। আমি
সরকারের কৃষি উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিই। রায়পুরে ধানের জার্মপ্লাজম ব্যাঙ্ক স্থাপন
করার সঙ্গে সঙ্গেই নানান এলাকার বিশেষ করে বস্তারের অবুঝমাঢের পাওয়া ধানের তথ্য
যোগ করলাম।
ক্লঃ কি করে এই
দ্বিতীয় সংস্থাটিও বন্ধ হয়ে গেল? বিশ্বব্যাংকের আর স্বামীনাথনের ভূমিকা কি ছিল?
রিঃ স্বামীনাথনের
আইআরআরআইএর কাজে খুব উতসাহ ছিল। তিনি তখন আইসিএআরএর সেক্রেটারি এবং ভাইস
চেয়ারম্যান। ধান বিষয়ে দেশের যত গবেষণা, উদ্যম সব তাঁর হাতে ন্যস্ত ছিল। তাঁরা সব
ধানের প্রজাতি সংগ্রহ করে চাইছিলেন আইসিএআরএর এবং কটকের সিআরআরআইএর মাধ্যমে।
সিআরআরআই তখন আইসিএআরএর অধীন। তাঁরা আমার কাছে এলেন। আমি বললাম কাগজ না দেখে
আমি কোনো মন্তব্য করব না। যে কাজগুলি হয়েছে সেগুলি বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে। যা আমি
জানি না সেগুলি কি করে অনুমোদন দেব? আইসিএআরএর দুতিনজন আবার আমার সঙ্গে দেখা করতে
এলেন। তাঁরা আমার মন বুঝতে চাইলেন। বললেন আমাদের কাগজের বদলে ওরা কি কিছু কাগজ
দেবেন? আইআরআরআইএর প্রতিনিধিরা বললেন তাঁরা আমার আর ওদের গবেষণার কাগজ অদল বদল
করতে চাইলেন। আমি স্পষ্ট করে দিলাম, ওদের গবেষণায় আমার রুচি নেই। কেননা সেই
প্রজাতিগুলি ভাইরাস দূষিত হয়ে রয়েছে। আর আ্মারটি মধ্যপ্রদেশের ছত্তিশগড়ের ধান্য
অঞ্চলের উপাত্ত থেকে তৈরি।
ক্লঃ আইসিএআরএর প্রধান(স্বামীনাথন)কি
এর পিছনে ছিলেন?
রিঃ তিনিইতো
নাটেরগুরু। তিনিই ঠিক করতেন কি কি কত কত প্রজাতি সিআরআরআইতে থাকবে, কি কি দিল্লিতে
যাবে সেখান থেকে আইআরআরআইতে যাবে। তাঁর হাতেই তো অসীম ক্ষমতা। আর তিনি তো সরকারের
সচিব আর আইসিএআরএর নির্দেশক। তাঁর হাতেই ভারতের খাদ্য তথ্যের সব কিছু রয়েছে। সব
উপাত্ত রয়েছে। সেই সব তথ্যের ওপর বসে তিনি ভারতের খাদ্য নীতি তৈরি করলেন। তিনি
আমাদের ধানের সমস্ত সম্পদের তথ্য জানতেন।
ক্লঃ ফলে আপনার
নতুন সংস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া হল?
রিঃ আমি সঙ্গে
সঙ্গে তাঁদের প্রস্তাব বাতিল করি নি। আমি বললাম আগে আমি যে সব সংগ্রহ করেছি,
সেগুলি বিষয়ে পড়াশোনা, গবেষণা করি, তাঁর পর জানাব। তাঁদের কিছু বেঁটে জাতের গাছও
দিলাম। আমি আইআরআরআইএর বিজ্ঞানীদের বললাম, আমার গবেষণা আর সংগৃহীত প্রজাতি যদি
দক্ষিণপূর্ব এশিয় দেশগুলির উন্নতিতে সাহায্য করে, তাহলে আমি এই কাজ করতে এক পায়ে
খাড়া – তবে আমার কিছু শর্ত রয়েছে, আমার থেকে নেওয়া প্রজাতিগুলির ওপর আপনারা যে কাজ
করবেন, সেগুলির একটা করে সমীক্ষা আমাকে পাঠাতে হবে, বিশেষ করে বেঁটে জাতের প্রজাতি
যেগুলি আমি আপনাদের উপহার দিলাম। তাঁরা তা নিয়ে গেল কিন্তু আমায় কোন সমীক্ষাপত্র
পাঠায় নি।
আমি সারাজীবন
লড়াই করে একটা কথা বলে গিয়েছি, যে দেশে ধান চাষের উদ্গাতা, সে দেশে প্রচুর
উন্নতমানের ধানের প্রজাতি রয়েছে। তাঁরা আমার তত্ত্বে সহমত পোষণ করেছেন। তাঁদের
লেখা পত্রে মধ্যপ্রদেশে ধান গবেষণা সংস্থায় আমি যে সব কাজ করেছি, সেগুলি উল্লেখ
করেছেন। তাই তাঁরা চেষ্টা করেছেন আমার সংগৃহীত প্রজাতিগুলি হাতানোর। মাঝে মধ্যেই
তাঁরা রায়পুরে আসতেন। আমার গোপন করার কিছুই ছিল না। তাঁদের ধারণা ছিল আমাকে তাঁরা
যে শিক্ষা দিয়েছেন, তাতে আমার শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে।
ফলে তাঁরা ধারণা
করেছিলেন আমাকে ওরা যা বলবেন আমি তাই অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। কিন্তু দেখলেন
উল্টোটা হচ্ছে। আমি যে সংস্থায় কাজ করতাম সেটিকে তাঁরা অর্থ সাহায্য করেন নি। সেটি
একটি রাজ্য সরকারি সংস্থা। যেটি আমার খাটাখাটনিতে, দীর্ঘ পরিশ্রমে যে জ্ঞান অর্জন
করেছি, সেই বলে বেড়ে উঠেছে। আমি বললাম ঠিক আছে, আমি এই বিষয়ে একমত হব, তবে আমায়
গবেষণা শেষ হলে তবেই। তাঁরা বুঝলেন আমায় নোয়ানো যাবে না। তাঁরা জানতেন আমাদের কাছে
যে সব প্রজাতি রয়েছে সেগুলি নিতে পারলে কেল্লা ফতে করতে পারবেন। তবে আমি যেটি ওদের
দিয়েছিলাম, সেটি ওদের এই প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদদের হাতে রয়েছে।
তাঁরা একটি ছক
কষলেন। আমার ধারণা সরকারি প্রক্রিয়ার এরকম পরিকল্পনা সাধারণত হয় না। তাঁরা আমায়
বললেন আমাদের ৪ কোটি টাকা দেবেন(অবশ্যই মাঝের কোন এক দালালের হাত দিয়ে, এক্ষেত্রে
এটি হল বিশ্ব ব্যাঙ্ক) ধান গবেষণার জন্য – তবে যেহেতু দু জায়গায় এই ধরণের গবেষণা
হচ্ছে, তাই মধ্যপ্রদেশের সংস্থাটিকে এই গবেষণা বন্ধ করতে হবে। তাঁদের উদ্দেশ্য
আমাদের সংগ্রহ করা যত জার্মপ্লাজম রয়েছে সেগুলি হাতিয়ে নেওয়া, আর সেগুলি বেঁটে
প্রজাতি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা, যাতে দেশে রাসায়নিক সারের কোম্পানিগুলির বাজার
বাড়ে।
তাঁদের বিশ্বাস
ছিল আমি যদি গবেষণা চালিয়ে যাই তাহলে আমি তাহলে আমাদের দেশের নিজস্ব উন্নত মানের
উচ্চফলনশীল ধান বাজারে নিয়ে আসব। সেই চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। তাঁরা আমাকে বঞ্চনা
করে আমার গবেষণার কাজকে নষ্ট করে আমায় অসহায় করে দিলেন। আর তাঁর পরে সারা দেশে খুব
খারাপ প্রজাতির ধান ছড়িয়ে দিয়ে দেশের ধানের উৎপাদন কমিয়ে দিলেন।
ক্লঃ রিচারিয়াজী,
আজ কি ভারতের ধান উৎপাদন বাড়ানোর কোন মান্য পদ্ধতি অবশিষ্ট আছে? আপনি আদিবাসীদের
কাজ তাঁদের পদ্ধতি নিয়ে কথা বলেছেন। আপনার তৈরি করা মানুষদের কি একই ধারণা?
রিঃ I had proposed
that hybrid vigour exploitation is possible in India, by utilising vegetative
propagation technology which constituted a direct challenge to the dwarf plant
type technology concept. । কিন্তু আজ ধান
বিজ্ঞানীদের সমস্ত পরিশ্রম ব্যয় হয়ে যাচ্ছে এই ভুল কাজে। উচ্চফলনশীল বেঁটে প্রজাতি
মোটেই ভাল প্রজাতি নয়। এটি প্রমাণিতই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কর্তাদের অঙ্গুলি হেলনে
আজও সেই কাজ হয়ে চলেছে।
তাহলে? আমি মনে
করি, আজ ভারতের প্ল্যান্ট ব্রিডার্সরা নিজেদের মত করে কাজ করুণ, নিজেদের পদ্ধতি
নিজেরা উদ্ভাবন করুক, যাতে আইআরআরআইকে নতুন রণকৌশল গ্রহণ করতে হয়, বিশেষ করে যে
রাস্তায় আমি হেঁটেছি। ফলে আইআরআরআই বাধ্য হবে ভারতীয় পদ্ধতিতে ফিরে আসতে। তাঁরা
আমায় মেল স্টেরাইল পদ্ধতিতে কাজ করতে বলেছিল। চিন এই পদ্ধতিতে এগিয়েছে। এই কাজ করা
খুব সহজ নয়। সময় এবং ভাল প্রজাতির প্রয়োজন – তবুও সাফল্য নাও আসতে পারে। আর এই
পদ্ধতিতে বাসমতির মত চালের একই ধরণের গন্ধ আর একই সঙ্গে চরম উতপাদনশীলতার হার ধরে
রাখা খুব মুশকিল। বাসমতিকে এই পদ্ধতিতে বিকাশ করা যেতে পারে। হয়ত নয়। কিন্তু
আইআরআরআই চাইছে তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্দতি নিয়ে, বৈজ্ঞানিকেরা নিজেদের পদ্ধতি
জলাঞ্জলি দিক। আমি বলি why don’t you exploit the hybrid vigour through clonal
propagation which insures the economic production of crossed seeds from F1
plans for full normal crop from the F2 population (hybrid vigour persists in
later generations also).।
আজ আমরা চিনের
ধান আমদানি করছি। সেই টিএন১ আর আইআর৮এর পুরোনো ভুল ঘটে চলেছে। আমার ধারণা ভারতীয়
পরিবেশে এই বিদেশী প্রজাতিগুলি সম্পুর্ণ কাজ দেবে কি না। আজো আমাদের নিজস্ব ধান
প্রজাতি না নিয়ে আমরা সেই পুরোনো ভুলের চির্বিতচর্বণ করে চলেছি। আমার প্রশ্ন, কবে
আর একে গুরুত্ব দিয়ে ভাবব?
No comments:
Post a Comment