Rudrin Dasএর মন্তব্য ছিল
//বিশ্বেন্দুদা [বিজ্ঞানের/প্রযুক্তির] ক্ষতিকারক দিকটা আমি অস্বীকার করি নি কখনো। খালি পদ্ধতিগত ত্রুটির দিকটি দেখালাম। আপনি যে দেশজ শিক্ষার কথা বলছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম যে শাস্ত্রীয় শিক্ষা তা কিন্তু বরাবর একটি শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বৃটিশ আমলেই সবাই সেগুলো পড়বার সুযোগ পায়।
শিল্পীসংঘ বা কারিগরেরা অসাধারণ প্রকৌশলী হলেও সমাজে তাদের আর্থিক অবস্থা বা সোশ্যায় স্টেটাস বিশেষ উন্নত ছিল না। ভারতের আধা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় তারা ধনী ছিল না কিন্তু সুখী ছিল। তখন সমাজে শ্রেণীবৈষম্য, ধনবৈষম্য আগেও ছিল এখন আরো আছে।
পোস্ট কলোনিয়াল চর্চা করতে গেলে ইউরোপীয় সভ্যতার লুঠেরা দিকটা ঠিকই চোখে পড়ে কিন্তু তাই বলে তো আর ইতিহাসের অভিমুখ পরিবর্তন করা যায় না। উন্নত কারিগরি প্রকৌশলের অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সেও আর পাওয়া যাবে না। তবে যতটুকু আছে ততটুকু প্রিসার্ভ করে রাখা উচিত।
আমার মতে বিজ্ঞানের ক্ষতিকারক দিকটি বুঝে তাকে কল্যাণকামী কার্যে ব্যবহার করতে হবে। ট্র্যাডিশনাল নলেজকে আমি অবহেলা করি না। অতীত আর বর্তমানকে নিয়ে একসঙ্গে পথ চললে তবেই সুন্দর ভবিষ্যৎকে পাওয়া সম্ভব।//
সেটা আঁটল না সেখানে - সকলকে ট্যাগ করে তাই এটা আলাদা করে দিলাম। তার প্রাথমিক বক্তব্য ছিল পশ্চিম জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়েছে পদ্ধতিগতভাবে - কিন্তু আমাদের বক্তব্য অন্য
বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিকে লুঠের কাজে, দখলদারির কাজে ব্যবহার এই দায় গোটাটা পশ্চিমি কেন্দ্রিভূত সমাজের যে সমাজ মূলত সামরিক, যে জন্য তাদের জ্ঞানচর্চায় সিভিল উপসর্গ বানাতে হয়। আজও উপনিবেশের চাপিয়ে দেওয়া সামরিক সমাজ থেকে উত্তরণের জন্যে সমাজকে নিরন্তর লড়াই করে যেতে হচ্ছে। গ্যালিলিও থেকে প্রত্যেক বিজ্ঞানীই যুদ্ধবাজ ছিলেন। বেকনের লেখাগুলো পড়লের এই দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার হয় এবং নবজাগরনীয় অক্ষয় দত্ত বাংলায় বেকনিয় মনোভাবের মানুষ চাইছেন এবং ঐতিহাসিকভাবে সমর্থন করছেন ঘোরতর বামপন্থী বামাচারী বিনয় ঘোষ!
আর মরালিটি গ্রাম্য সাধারণ মানুষের অনেকটা হৃদয়ের ব্যাপার, তাই সে কেন্দ্রিভূত সমাজ, কৃষ্টি ভাষা ইত্যাদি তৈরি করে না, যেটা উপনিবেশের একচেটিয়া। তাই সে লুঠতে যায় না, মেঘনাদ সাহার মত বাঁধ তৈরি করে না। থাক লিখতে গেলে বেতর হয়ে যাব ভাই।
//সমাজে তাদের আর্থিক অবস্থা বা সোশ্যায় স্টেটাস বিশেষ উন্নত ছিল না// মুঘল বা নবাবি আমল সে কথা বলে না। একজন কারিগর দাদন/অগ্রিম ফিরিয়ে দিতে পারত, এবং যতক্ষণনা সে তার পণ্য হাত বদল করছে, সে সেই পণ্যের মালিক, যেটা ইওরোপে পুটিং আউট পদ্ধতিতে ছিল না - সেখানে তাকে কাঁচামাল সরবরাহ করত দাদনি বানিকেরা - এশিয়ায় এই উতপাদন ব্যবস্থার কেন্দ্রে ছিল কারিগরেরা, তাই ইওরোপ আমেরিকায় কারিগরেরা দলে দলে শ্রমিক হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এশিয়ায় রাষ্ট্র বা সমাজ তাকে বাধ্য করতে পারত না তার উতপাদন দাদনদারকে দিতে বাধ্য করাতে - তাই আজও বহালতবিয়তে তারা টিকে আছে,অথচ সে চেষ্টা হয়েছিল পলাশীর পরের সময়ে; এর থেকে সামাজিক, পেশাদারি আর আর্থিক স্বাচ্ছন্দে স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা গুরুত্ব একজন পেশাদার উতপাদকের আর কি বা থাকতে পারে?
২) এবারে স্বচ্ছলতার প্রশ্ন - ২০১২য় আমরা ঠাকুরপুকুরে একটি মেলা করি - সে বিপুল সমাবেশ - ৩০০র কাছাকাছি কারিগর অভিকর শিল্পী এসেছিলেন, সেখানে আমাদের অন্যতম সম্পাদক নেপাল সূত্রধর বলেছিলেন, বাবা বিশ্বকর্মা আমাদের ধনী করবেন না, এটা তাঁর অভিশাপ। এইভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ অচাহিদার একটা ব্যবস্থা তৈরি করেন - যাকে এখন ইওরোপ বলছে অফ দ্য গ্রিড(দুই অর্থেই - বিদ্যুৎ এবং লালসা) বাঁচা, এটাই একমাত্র ভবিষ্যত - কর্পোরেট বুঝতে পাএ না শহরের মানুষের যেভাবে চাহিদা তৈরি করা যাচ্ছে গ্রামীন অধিকাংশ মানুষের চাহিদা তৈরি করা যাচ্ছে না - এই অবস্থাটা তারা বুঝতেই পারছে না - তাই তারা তাদের গরীব দাগিয়ে দিচ্ছে । আজও ভারতের হাজারো মানুষ এই অচাহিদার সাম্যাবস্থায় থাকতে ভালবাসেন, অর্থাৎ যে উতপাদন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে সেটা মূলত সাম্যাশ্রয়ী, অর্থাৎ প্রচুর উতপাদক প্রচুর বিক্রেতা - ফলে উদ্বৃত্ত বেঁটে যায় সমাজের মধ্যে কিছু মানুষের হাতে গিয়ে জড়ো হয় না, যা ইওরোপিয় শিল্পায়নের পরে চেষ্টা করছে এটাকে বিশ্বজনীন করে তোলার।
৩) //তাই বলে তো আর ইতিহাসের অভিমুখ পরিবর্তন করা যায় না। // ইতিহাসের গতিমুখ যে লুঠেরা খুনি গণহত্যাকারী দাস ব্যবসা পরের ধন শ্রম দীর্ঘ সময় ধরে লুণ্ঠন করে পুঁজি জোগাড় করা সময়ের, সেটা কে বলে দিল? পূর্বের সমাজ পশ্চিমের মত একরৈখিকভাবে যাত্রাপথে বিশ্বাস করে না, সে চক্রবত চলে, ফলে যে ২০০৫এ মনে হয়েছিল আরও ১০০ বছরের জন্যে সিপিএম নিশ্চিত করল শাসন, তার এক টার্মেই সে ভ্যানিশ হয়ে গেল - সময়/যুগ ঘুরে ফিরে আসে - এই সরলরৈখিকতা ইওরোপকে করতে হয়েছে কারণ তার বেশিদূর তারা ফিরতে পারবে না - আমরা যত সহজে আজও নিশ্চিতভাবে হাজার হাজার বছর ফিরে যেতে পারি - আজও বাজারে মৃচ্ছকটিক পাওয়া যায় -অর্থাত আমরা ২০০০ বছর চোখ বুজে ফিরে যাই - সেটা তারা পারে না - তাই ঐতিহ্যের সঙ্গে তাদের বিরোধ - তাকে খুনি লুঠেরা আধুনিকতার ধুয়া ধরতে হয়। লুঠের সম্পদে জ্ঞানে শিল্পয়ায়নের ভিত তৈরি করা পশ্চম আজ এই বিশ্বকে ধ্বংসের মুখোমুখি এনে ফেলেছে; যারা লুঠতে শুরু করেছিল প্রথম, সেই ইওরোপে আজ ভারি শিল্প স্থাপন করা সব থেকে কঠিনতম কাজ, কারণ তারা বুঝে গিয়েছে এই উতপাদন ব্যবস্থা প্রচুর এবং প্রায় একই রকম মাঝারিগোছের পণ্য আর বর্জ্য উতপাদন করে, এর থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।
আমরা কারিগরেরা মনে করি এই ১৭৮০র পরের যে সময়, সেটা বিশ্ব ইতিহাসে অভিচারমাত্র, কয়েক সহস্র বছর ধরে বিশ্ব যে ধরণের অপুঁজিবাদী, বিকেন্দ্রিভূত বিকাশের ধারণা তৈরি করেছিল, সেটা তাকে ব্যত্যয় করেছে, তার ধ্বংস সময়ের অপেক্ষা; ধ্বংস লুঠ আর অত্যাচার চিরকাল চলে না।
৫) //যতটুকু আছে ততটুকু প্রিসার্ভ করে রাখা উচিত।// এটা পুঁজি-কর্পোরেটবাদের গল্প। কে কাকে প্রিজার্ভ করে? আমরা যারা ভদ্রবিত্ত, তাদের জীবনের সকালে টুথপেস্ট থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় ঘুমের বড়ি বা জোলাপটাও কর্পোরেট সরবরাহ করে, আমাদের জীবিকা দেয়, জীবিকার জন্যে তৈরি করে দেয় রাষ্ট্র-বা কর্পোরেট - তার জীবনে কর্পোরেটই শেষ কথা - তাই বাইরে বিপুলাকার বিশ্ব আছে সেটাই চোখে পড়ে না; অথচ কর্পোরেটের বাজার বহুল্ভাবে সীমাবদ্ধ কারণ আজও কারিগর চাষি এবং হকারদের কর্পোরেট নিরপেক্ষ জীবনযাত্রা। বাংলায় শুধু কারিগর - তাঁতি আর অভিকর শিল্পী আছেন ৬০ লক্ষ - এরা কেউ হস্ত শিল্পী নন - গ্রামীন ছোট উতপাদক - এদের যদি মাত্র মাসে ১৫০০টাকা বাড়ি আনতে হয় তাহলে বছরে অন্তত ১ লক্ষ টাকার ব্যবসা করতে হবে - যদিও অনেকে অনেক অনেক বেশি করেন - তাহলে ৬০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা করেন এরা সম্বৎসর। যে বাজারটা কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ করে না। তাই ডিমনিটাইজেশন ইত্যাদি। ফলে এই যে বিশ্ব মন্দায় ঢুকল, বা ২০০৮এ ঢুকেছিল, তাতে এই দেশকে বাঁচিয়েছিল এবং বাঁচাবে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার বাইরে থাকা, কর্পোরেট সাপ্লাই চেনের বাইরে থাকা, দখলদারি পুঁজি ব্যবস্থার বাইরে থাকাষকার-কারিগরেরাই। আজও বর্ষা না হলে জিডিপি গোঁত খেয়ে পড়ে। কর্পোরেট অর্থনীতি প্রযুক্তি তার দর্শন কিসের প্রাধান্য দাবি করে? সাধে কি সে হকার কৃষক বা কারিগরদের উতপাদন ব্যবস্থা দখল করতে চাইছে? ইওরোপ আমেরিকায় যে কর্পোরেটাইজেশন সম্ভব হয়েছিল, সেটা এশিয়া আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকায় নানান অভিচার অত্যাচার সত্ত্বেও করে উঠতে পারছে না।
৬) যে প্রযুক্তি বিদ্যুৎ ছাড়া অচল, সেটা কিসের বিশ্ব প্রযুক্তি জানি না।
আরো হাজারো কথা বলা যায়। এখানেই থামলাম।
No comments:
Post a Comment