দ্বারকানাথের কোনোভাবেই সদাশয় জমিদার হওয়ার ইচ্ছে ছিলনা। সাহাজাদপুরের জমিদারি তিনি কেনেন দুর্দশায় পড়া জনৈক শিবচন্দ্র ভট্টাচার্যের উত্তরাধিকারীদের থেকে, নিলামে। জমিদারের কয়েকজন উত্তরাধিকারী আর তাঁর মা জমিদারিতে ভাড়া থাকার ব্যবস্থা চাইলে তিনি পূর্বতনদের নতুন কেনা জমিদারিটি থেকে লেঠেল দিয়ে বার করে দেন। দ্বারকানাথ নীলকরদের জমি লিজে দিতেন কিন্তু অনেক দরকষাকষি করে। তিনি ইওরোপিয়দের জমিদারির ম্যনেজার করে রাখতেন চড়া মাইনেতে।
রামমোহন আর তাঁর পৌত্তলিক শিষ্য দ্বারকানাথ উভয়েই ছিলেন নিপীড়নমূলক নিমক মহলের দেওয়ান। এঁরা যে নিমক মহলের চাষীদের ভার লাঘব করার জন্য বিন্দুমাত্র কিছুই করেন নি, তার প্রমান তাঁদের জীবনীকারদের জীবনী। সেগুলিতে এধরণের কেনে তথ্য অনুপস্থিত। তাঁরা যদি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে রায়তদের পক্ষে দাঁড়াতেন, সেই জনসংযোগের উচিত প্রচার কী তাঁর জীবনীকারেরা তাঁদের পুস্তকে লিখতেন না। তাঁরা হয়ত যা করেছেন তার ফলে তাঁদের তারকাদের সেই সময়ের কৃতি সম্বন্ধে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে নীরব থাকতে হয়েছে। দ্বারকানাথ ২৮ বছর বয়সে ২৪ পরগণার নিমক মহলের সেরেস্তাদারির চাকরি পেলেন। তার শংসাপত্রে ট্রেভর প্লাউডেন লিখলেন, আ নেটিভ অব হাই ক্যারেক্টার এন্ড রেসপেক্টেবিলিটি, হি হ্যাজ নট বিন বিফোর এমপ্লয়েড ইন দ্য সার্ভিস অব গভর্নমেন্ট, বাট ইজ আ পারসন অব গুড এজুকেশন এন্ড কোয়ালিফিকেশন ফর সিচুয়েশন টু হুইচ হি নমিনেটেড। তাঁর আগে ছিলেন রামমোহনের আত্মীয় রামতনু রায়। সে সময়ের বড় সরকারি পদে যোগদেওয়ার নীতি ছিল, সাধারণতঃ বিদায়ী কর্মচারী আগামীদিনের কর্মচারীকে মনোনীত করে যান। আর দ্বারকানাথ নিজে ছিলেন রামমোহনের সাক্ষাত শিষ্য। রামমোহন এই নিমক মহলে নিজের দবদবা অনেকদিন বজায় রেখেছিলেন, তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের বসিয়ে। প্লাউডেন খুব খারাপ শংসাপত্র দেননি, কেননা আগামীদিনে দ্বারকানাথ খুব কড়া জমিদাররূপে অন্তঃত তাঁর সময়ে (কু)খ্যাত হয়ে উঠবেন। অন্ততঃ সংবাদপত্র, হরকরার রিপোর্ট আর জমিদারদের প্রতিনিধি কিশেরীচাঁদ মিত্ররস্মৃতি এই তথ্য প্রমাণ করবে।
আগামী যে ১২ বছর সেরেস্তাদারি করে, মালঙ্গীদের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ও অত্যাচার করে দ্বারকানাথ ব্রিটিশ এজেন্সির রোজগার বাড়াবেন প্রায় ৩০ শতাংশ। প্লাউডেন বলছেন, ১৫০ টাকা মাইনে তিনি ধর্তব্যের মধ্যেই আনতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল বড় সাহেবদের কাছে তাঁর চাকরির যোগ্যতা প্রমাণ, যা তাঁর আগামীদিনের কাজের সোপানরূপে চিহ্নিত হবে। আর যোগাযোগ বাড়ানো। প্রতি ১০০০মণ নুন সংগ্রহের জন্য তিনি পেতেন আট টাকা কমিশন। ফলে অতিরিক্তভাবে তিনি আরও ৩৬০টাকা রোজগার করতে পারতেন। মালঙ্গীদের সঙ্গে লড়াই করে আরও বেশি নিজের রোজগার আর কোম্পানির রোজগার বাড়িয়ে তিনি যা চাইছিলেন তাই ঘটল, প্লাউডেন আবারও তাঁর হয়ে কলম ধরলেন ১৮২৮এর ২৪ সেপ্টেম্বর, এবং তার কয়েকমাস পরেই ১ ডিসেম্বর, তিনি উন্নীত হলেন বোর্ড আব কাস্টমস, সল্ট, ওপিয়াম দপ্তরের দেওয়ান রূপে। তাকে চাকরি দেওয়ার জন্য যিনি দায়ি, বোর্ডএর এক সদস্য হেনরি মেরিডিথ পার্কার লিখলেন, জয়েন্ড দিস অফিস এট মাই আরজেন্ট রিকোয়েস্ট। আই হ্যড জাস্ট ডিসকভার্ড দ্য এক্সটেনসিভ এন্ড ফ্রাউডুলেন্ট কম্বিনেশন হুইচ থ্রেটেন্ড সাচ সিরিয়াস ইনজুরি টু হ্য সল্ট রেভিনিউ – সারাউনডেড অন অল রাউন্ড বাই ইন্ট্রগুজ মেশিনেশনস, উইথ স্কেয়ার্সলি এন ইন্ডিভিজুয়াল ইন দ্য অফিস নট ইমপ্লিকেটেড ইন দ্য কন্সপিরেসি, আই রিসিভড দ্যাট এসিসটেন্স ফ্রম দ্য গ্রেট ট্যালেন্টস, দ্য ইন্ডাসট্রি, এন্ড আই ডু লট হেজিচেচ টু সে, দ্য ইন্ট্রিগ্রিটি অব দ্বারকানাথ টেগোর, উইদাউট হুইচ আই, শুড ইন অল প্রোবাবিলিটি হ্যভ স্ট্রাগলড ইন ভেন এগেন্সট দ্য ডিফিকালটিজ ইনটু হুইচ দ্য ডিপার্টমেন্ট ওয়াজ প্লান্ডার্ড।
No comments:
Post a Comment