মুখ লুকেনো বাঙালি নেতারা
আফিম ব্যবসার পাশাপাশি চলছিল অমানবিক এই ব্যবসার বিরোধিতাও। ১৮৯৩তে গ্ল্যাডস্টোন সরকার একটি রাজকীয় আফিম কমিশন(রয়েল কমিশন অন ওপিয়াম) গঠন করে। কমিশন তার সমীক্ষা প্রকাশ করে সরাসরি জানাল, As the result of a searching inquiry, and upon a deliberate review of the copious evidence submitted to us, we feel bound to express our conviction that the movement in England in favour of active in terference on the part of the Imperial Parliament for the suppression of the opium habit in India, has proceeded from an exaggerated impression as to the nature and extent of the evil to be controlled। The gloomy descriptions presented to British audiences of extensive moral and physical degradation by opium, have not been accepted by the witnesses representing the people of India, nor by those most responsible for the government of the country।
আফিমবাদীদের আতঙ্ক জাগিয়ে পার্লামেন্টারি কমিটিটির সমীক্ষা ধরে পার্লামেন্ট জনগণকে জানিয়ে দিল আফিম বেচতে সরকার আর বলপ্রয়োগের দ্বারস্থ হবে না। কিন্তু আফিম ব্যবসায় যাঁদের প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে তারা কী ছেড়ে কথা বলবেন। আফিম থেকে তখন কোটি কোটি ডলার লুঠ করা ভারত সরকার, সেসময়ের আবসৃত উচ্চপদস্থ এক রাজকর্মচারী জেমস লায়ালকে ব্রিটেনে নিযুক্ত করল তাদের স্বার্থ দেখার জন্য। ভারতেও লড়াই করার জন্য সরকার মাদ্রাজের দ্য হিন্দু সংবাদপত্রকে নিয়েগ করল। ১৮৯৫তে দ্য হিন্দুতে লেখাহল, “Opium may be a great evil, but national bankruptcy is a greater evil”। তত্কালীন কংগ্রেস সদস্যদের সসোমিরা আবস্থা। তারা যেকোনো আফিম ব্যবসা বিরেধী আন্দোলনের পক্ষে নন, এ কথা সরাসরি জানাতেও যেমন পারছেন না, তেমনি আবার জনগণের ইচ্ছেও অমান্য করতে পারছেন না। এ বড় আজব কুদরতি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই কমিশনে সদস্যতা। মোট নয় সদস্যের মধ্যে ভারতীয় সদস্য থাকার কথা দুজনের। ভারত সচিবকে দুজন সদস্য মনোনীত করতে বলা হল। তত্কালীন বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্ণর ম্যাকডোনেল জানালেন, ভারতীয় নেতারা আফিম ব্যবসা বিরোধিতা পছন্দ করেন না, তবে তাঁরা পার্লামেন্টের রাডিক্যাল সদস্যদের ভারতবন্ধু বলে মান্য করেন। There is no Bengali whom I would recommend to your Excellency for nomination to the Opium Commission। There are several who are of the standing requisite, and whose views on the question are reasonable, such as Sir Jotendro Mohun Tagore and Sir Romesh Chunder Mitter। But they will not themselves, or run the risk of putting themselves, into opposition to the anti-opiumists, who are at the same time, like Mr। Caine, M। P। Congress men। They condemn the antiopium agitation, but will not oppose it at the risk of alienating their English supporters in “Congress” matters।
সে সময়ের আগে প্রায় এক শতক ধরে সত্যি সত্যিই কলকাতা এবং মুম্বাইএর শহরেরে কোনো না কোনো উদ্যমী পরিবার হয় আফিম, নয় নীল অথবা নুনের ব্যবসা অথবা রপ্তানির কাজে সরাসরি জড়িয়ে ছিলেন। সমাজে তাঁদের মতামত এতই গুরুত্বপেত যে, সে সময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতাতে কোনো বাঙালিই সেই লবির বিরুদ্ধাচরণ করতে রাজি হননি। এটাই বাস্তব যে, ভারতীয় সমাজ-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যতীন্দ্র মোহন ঠাকুর অথবা রমেশ মিত্ররমত গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও আফিমপন্থীদের প্রতীকী বিরুদ্ধাচরণও করতে পারেন নি। তাঁদের কাছে প্রস্তাব গেলে তাঁরা সরাসরি না করে দিয়েছেন। রামমোহন, দ্বারকানাথের আগেও কলকাতার নামী পরিবারগুলি জমিদারি, গোমস্তাগিরি, দেওয়ানি, বেনিয়ানি আর মুতসুদ্দিগিরি করে, যে সনাতন ভারত মারার ব্যবসার মুখপাত করে গিয়েছেন, সেই ট্রাডিশন বজার রেখে ভারতের জমিদারদের একতা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনের সদস্যরা নীলকরদের কৃতকর্মের সমালোচনা করলেও, আফিমবিরোধী কমিশনের সদস্য হতে পারেন নি। তাঁরা সরাসরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এর সঙ্গে শুধু কয়েকটি শুকনো তথ্যের জন্য বলা যাক, দুর্জয় বাঙালিদের মুখলুকোনো প্রত্যাখ্যানে ভারতের ভাইসরয় তখন দ্বারভাঙার মহারাজা লক্ষ্মীশ্বর সিংএর দ্বারস্থ হলেন। তবে দ্বারভাঙার মহারাজের কোনো প্রজাই আফিম উত্পাদনে যুক্ত ছিলেন না। লক্ষ্মীশ্বর নিজে জমিদারদের সংঘ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং বিদেশে যথেষ্ট পরিচিত মুখ। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও বটে। রয়েল কমিশনে সদস্য হওয়ার সময় তিনি ভাইসরয়কে এডাভাইসারি গ্রুপ সুপ্রিম লেজিসলেটিভ কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। ম্যকডোনেল তাঁর পক্ষ থেকে মহারাজার নাম গুরুত্বসহকারে সুপারিশ করলেন, The only man of sufficient standing and strength of character whom I know to be willing to take a nomination to the Opium Commission is the Maharajah of Durbhungah। His views are in favour of the maintenance of the opium revenue; and I think he would assert these views on the Commission, though I am not prepared to say that the anti-opiumists and pro-Congress people, such as Mr। Caine, may not influence him। But I should be disposed to run that risk, and I should be very glad to see Durbhungah get some mark of your Excellency’s confidence…। [H]e is a man of wide influence here, and I think he can be, if he likes, of great help to us। He and I are personally good friends and I find him very reasonable,… সুপারিশপত্র থেকে পরিস্কার তত্কালীন রাজনীতিতে মহারাজার গুরুত্ব কতখানি। তবে রয়েল কমিশন ভারতে ভ্রমণ কালে মহারাজার বুকের অসুখ বেড়ে যাওয়ায় তিনি তার সঙ্গে ঘুরতে পারেন নি, না কংগ্রেসিদের নানান চাপে চাননি তা বলা মুশকিল। দ্বিতীয় মনোনীত সদস্য ছিলেন গুজরাটের জুনাগড় রাজত্বের প্রাক্তণ প্রধাণমন্ত্রী হরিদাস বিহারিদাস। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে এই কমিশনে নিয়েছিল মালব আফিম এলাকার উত্পাদক-ব্যবসায়ীদের খুশি করতে, তবুও হরিদাসের রাজত্বও কিন্তু আফিম উত্পাদনে যুক্ত ছিল না।
বেম্বাইএর আফিম বোম্বেটে
এ প্রসঙ্গে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্য জানা যাক। আজকের বোম্বাই বা মুম্বই নামে যে শহরটিকে অনেকেই চেনেন ভারতের আর্থিক সম্পদের রাজধানীরূপে, সেটি আদতে গড়ে উঠেছিল মালব অঞ্চলের উত্পাদিত আফিম, মুম্বই হয়ে চিনে পাঠাবার উদ্বৃত্তের গুড়ে। ১৮২০ নাগাদ কলকাতার বাঙালি ভদ্রলোকেদের আফিম ব্যবসার পথ ধরে, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের পার্সি, গুজরাটি বানিয়া, কোঙ্কনি মুসনমানেদের এক বিশাল গোষ্ঠী মালব আফিম ব্যবসার পরতে পরতে জুড়ে ছিলেন। ১৮৩০, এই দশকটিতে ৪২টি বিদেশি কোম্পানি এই ব্যবসাটি চালাত, তার মধ্যে ২০টির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল পার্সিদের হাতে। তত্কালীন ভারতের সমুদ্র পরিবহন আর আফিম ব্যবসা ছিল একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠমাত্র। সব থেকে বড় জাল ছড়ানো ছিল জামসেদজী জিজিবয়ের(১৭৮৩-১৮৫৯)। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সব থেকে বড় এজেন্সি হাউস, জার্ডিন ম্যাথিসনের অন্যতম অংশিদার। ব্রিটিনের সর্বোচ্চ নাইট(১৮৪২), ব্যারণ(১৮৫৭) উপাধি পাওয়া প্রথম ভারতীয়। আফিম পরিবহনের জন্য তাঁর অনেকগুলি জাহাজও ছিল, আর তিনি ছিলেন ব্যাঙ্ক অব বোম্বের ছজন নির্দেশকের মধ্যে অন্যতম।
দশকের পর দশক জুড়ে অবৈধ আফিম ব্যবসার লাভ থেকেই আজকের দক্ষিণ বম্বের বিশাল বিশাল প্রাসাদোপম হর্ম্যগুলি গড়ে ওঠে। আজকের ধণতান্ত্রিক ভারতের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বম্বে শহরটির ভ্রুণটি তৈরি হচ্ছিল ১৭৯০ থেকে ১৮৪০এর মধ্যে অবৈধ আফিম ব্যবসার অপরিমিত লাভের পাহাড়ের ওপর বসে। মনে রাখতে হবে ১৮২০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যে, বম্বেতে অবৈধ আফিম ব্যবসা থেকে যে রূপো আসত তার পরিমান দ্বারকানাথেরমত কলকাতার ইংরেজ-বাঙালি ব্যবসায়ীদের লাভ্যাংশের থেকে অনেক অনেক বেশি। কলকাতা থেকে যে সরকারি আফিম চিনে অবৈধভাবে সরাসরি রপ্তানি হত, তার লাভের হকদার ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ কোম্পানি সরকার, ছিটেফোঁটা লাভের গুড়ের অংশিদার হতেন সেই ব্যবসাকে সাজনোগোজানের প্রক্তিয়াতে জুড়ে থাকা দালালেরা। এদের এরাংশ আবার ছিলেন বাঙালি।
কিন্তু বম্বের বিষয়টা ছিক উল্টো। সরাকারকে নির্দিষ্ট একটা অংশ কর দিয়ে এই লাভের গুড়ের পুরো অংশটাই যেত এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পার্সি অংশিদারদের সিন্দুকে। বেচারা চিনেদের আফিমের মৌতাতে রেখে পার্সিদের সেই লাভের অর্থে গড়ে উঠেছে মালাবার হিল, কাম্বালা হিল, ব্রিচ ক্যান্ডি, আঙ্ক্লেশ্বরেরমত জনপদসমূহ। পরে সেই অঞ্চলের বিলাসবহুল পার্সি বাংলোগুলো লিজে দেওয়া হয়েছে ইওরোপিয়দের। ১৮৩০-১৮৪০এর মধ্যে এই পার্সিরাই গড়ে তুলেছিলেন বম্বের শহরতলী অঞ্চলগুলো। যেমন কার্সেটজী মানকজীর অধিকার ছিল অনিকের, ঢাকজী দাদাজীর ভারাসাভি(আজকের ভারসোভা), ফারমজী কাওয়াসজীর পোয়াই লেন, জামসেদজী বোমানজীর ভিলে পার্লে, জুহু, কারসেটজী কাওয়াসজীর জর্জগাঁও, রতনজী এদুলজীর ঘাটকোপর, কৃষণরাও রঘুনাথের বোরবিদে এবং লক্ষ্ণণ হরিচাঁজদীর চিনচোলি।
সে যুগের আফিম চোরাচালানে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বোম্বের প্রায় প্রত্যেক পার্সি পরিবার। অন্যান্য ভাই বেরাদারের আফিম ব্যবসা থেকে টাটারাও পিছিয়ে ছিলেন না। সাধরণের প্রচলিত বিশ্বাস টাটারা অনেক রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে তবে আজকের ভারতের প্রধাণতম শিল্পপরিবার। রক্ত-ঘাম তাঁরা ঝরিয়েছিলেন, তবে তা চিনের সাধারণকে আফিম সেবন করাতে। গুজরাটের অধিবাসী জামশেদজী টাটার বাবা যোরাথ্রুষ্টবাদী পার্সি পুরোহিত নাসিরনজী টাটা এই পরিবারের স্রষ্টা। নাসিরনজী তার পুত্র জামশেদজী এবং অন্যান্য ভাইদেরকে হংকং, সাংহাই এবং ইংলন্ডে আফিম ব্যবসার দপ্তর খুলে দিলেন।
আগেই বলা হয়েছে বম্বে শহরটি গড়ে উঠেছে বাঙালি-বিহারি, সিন্ধ্রি রক্ত জলকরা আফিম চাষী, পার্সি আফিম ব্যবসায়ী আর চৈনিক আফিমখোরদের তৈরিকরা অর্থিক লাভের বনিয়াদের ওপর বসে। ঐতিহাসিকেরা সাধারণতঃ নতুন বম্বের সঙ্গে আফিমের সম্পর্ক দেখাতে গিয়ে প্রায় প্রত্যেক পার্সি পরিবারের নামোল্লেখ করলেও সাধারণতঃ তারা টাটা পরিবারের নাম উল্লেখ করতে ভুলে যান, তাঁদের প্রচার যন্ত্রের রিরুদ্ধে লড়তে না পেরে। মুদ্রা রাক্ষসের ঝনঝনানিতে প্রলুদ্ধ হয়ে তাঁদের আদত ব্যবসার কথা উল্লেখ করতে ভুলে যান। এটি উদ্দেশ্য পূর্ণ কীনা বলা মুশকিল। এমনকী বামপন্থীরাও এই পথের পথিক। অনেক বামপন্থীই টাটা পরিবারকে আদতে ভারতের পুঁজিপতিদের মধ্যে প্রহ্লাদরূপে দেখতে চান। বাংলার তদানীন্তন বামপন্থী সরকারের ন্যানো মোটর গাড়ির কারখানা করার উদ্যমেই তা স্পষ্ট। ভারতীয় টাটা পরিবারের সঙ্গে ব্রিটিশ বামপন্থার যোগাযোগ অনেক দিনেরই, বলছেন মেরি এল কিয়েনহোলজ তাঁর ওপিয়াম ট্রেডার্স এন্ড দেয়ার ওয়ার্ল্ডস – ভলিউম টু- আ রিভিসনিস্ট এক্সপোজার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ওপিয়াম ট্রেডার পুস্তকে। পুঁজিপতি জামশেদজী টাটার ছোট পুত্র স্যর রতন টাটা গোপাল কৃষ্ণ গোখলের সঙ্গে মিলে সোসালিস্ট সার্ভেন্টস অব ইন্ডিয়া সোসাইটি গঠন করেন। জামশেদজীর পুত্র বামপন্থীদের দুর্গ, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সএর একটি চেয়ারেরও স্রষ্টা। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল রতন এবং দোরাবজী টাটার কাজিন শাপুরজি সাকলতওয়ালা (১৮৭৪-১৯৩৬), যিনি টিসকোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম কমিউনিস্ট সদস্য। তিনি একাদিক্রমে ১৯১৪ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত ব্যাটারসি(লন্ডনের একটি বরো) থেকে পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন। জামশেদজী টাটাই ব্রিটিশ আমলে চিনের সঙ্গে আফিম ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন এমন নয়, বম্বের কম করে পঞ্চাশটি পার্সি পরিবার এই চোরাচালানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। এরা প্রায় সকলেই ম্যানিয়ার এন্ড কোংএর আফিমব্যবসার সঙ্গী ছিলেন। হাতে গোণা কয়েকজন যুক্ত ছিলেন রাসেল এন্ড কোম্পানির সঙ্গে।
আফিম ব্যবসার আরএক প্রবাদপুরুষ, এক সময়ে কলকাতায় ব্যবসা করা, জামশেদজী জিজিবয়(১৭৮৩-১৮৫৯) নিজে, জামশেদজী টাটার থেকে অনেক বেশিভাবে ডেভিড সাসুনের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। জিজিবয় শিশুকাল থেকেই অনাথ। কৈশোরের আগেই চিনের পথে পাড়ি দেন। নানান ঝড়ঝঞ্ঝা সয়ে তিনি এক ডেনিস ব্যবসায়ীর নজরে পড়েন এবং ১৮৩৬এই অমিতপরিমান সম্পদের উত্তরাধিকারী হন। অমিত অর্থের অধিকারী তাই, তাঁর জাবনীকারদের দাবি, তিনি কোম্ব্রিজে পাঠগ্রহণ করেছেন কিন্তু এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি প্রথম নাইট উপাধি পাওয়া ভারতীয়। জামশেদজী জিজিবয় গুড সাকসেসএরমত অনেকগুলি জাহাজের মালিক ছিলেন। এই ব্যবসায় এত লাভ করেন যে তিনি বম্বে এবং পার্সি সমাজের উন্নতির জন্য ২,৩০,০০ পাউন্ড দান করেন। সে সময় দু লাখ তিরিশ হাজার পাউন্ড বেশ ভাল রকমই।
জামসেদজীর সঙ্গে মোতিচাঁদ আমিরচাঁদ, হরমুসজী দোরাবজীকে বম্বের আফিম ব্যবসার তিন বড় মাথা হিসেবে ধরা হয়। দাদাভাই রুস্তমজীর রুস্তমজী এন্ড কোম্পানি ১৮২০ থেকেই চিনে আফিম ব্যবসা করত। তিনি নিজে চিনে যান ১৮২৭এ। মারিওয়ানজী মানকজী এবং জোহাঙ্গী ফ্রেমজী ১৮২১ থেকেই চিনে আফিমের ব্যবসায় লেগে পড়েন। মানকজীর পুত্র করসেটজী মানকজী পরে বম্বের বিচারক হন। করসেটজী বম্বের গভর্ণর এন্ড্রু রামসের রাইটার হিসেবে জীবন শুরু করে বাংলা আর আরবের সঙ্গে ব্যবসার সূত্রে বিশাল পোতের মালিক হন। দাদাভাই রুস্তমজী, জোহাঙ্গী ফ্রেমজীর আত্মীয়। ফ্রেমজীর বাবা রুস্তমজা কাওয়াসজী বানাজীর অনেকগুলি আফিম পরিবহনের জাহাজ ছিল। এরমধ্যে বিখ্যাততম হল দাদাভোই, বাংলার দেশি নৌকো।
২৫০ টনের আফিম ক্লিপার মেরি গর্ডন মাজগাঁও ডকে তৈরি করান ফুরডনজী লিমজী, ১৭জুলাই, ১৮৩৯এ চিনের দিকে রওনা হয়। খিদিরপুর ডকে এর কিছুদিন আগে তৈরি হয় রুস্তমজী কাওয়াসজী ১২ জুলাই ১৮৩৯এ চিনে রওনা হয়। প্রথম আফিম যুদ্ধে স্যর রবার্ট সেপিংস এই জাহাজটি ভাড়া করেন। সিল্ফ জাহাজটি অনেকে বলেন বানাজী পরিবারের সম্পত্তি। তবে এই জাহাজটি জার্ডিন-ম্যাথিসন কোম্পানি তাদের চিনে আফিম ব্যবসায় ভাড়া খাটাত। অনেকে বলেন এটি নাকি জার্ডিন-ম্যাথিসনরই সম্পত্তি।
No comments:
Post a Comment