নীলকর দ্বারকানাথ
দ্বারকানাথ নিজে নীলকর ছিলেন, এবং কড়া হাতেই জমিদারি চালাতেন এ তথ্য আজ সুবিদিত। দ্বারকানাথের জীবনীকার ব্লেয়ার বি ক্লিং নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন। রাবীন্দ্রিক বাঙালি না চাইলেও এ তথ্য লুকিয়ে রাখা যাবে না। আজ আমাদের খুঁজে বেরকরতেই হবে, যে সব অঞ্চলে রবিঠাকুরের ঠাকুর্দা কড়া হাতে জমিদারি চালাতেন, সেখানের রায়তদের অবস্থা কী ছিল। যদিও সে তথ্য খুঁজে বেরকরা এই পুস্তকের উদ্দেশ্য নয়, তবুও বাংলায় অত্যাচরিত রায়তদের কথা বলতে আমাদের এ তথ্য উদ্ধার করা ভীষণ জরুরি। কয়েকস্তবক আগেই আমরা দেখেছি জমিদার গোলকনাথ রায় অথবা প্যারীসুন্দরী কিন্তু নীলকর সাহেবের বিরুদ্ধে প্রজাদের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছেন। বাংলায় একটা বড় অংশের জমিদার নীলকর ছিলেন না। তাঁদের অনেকেই কিন্তু স্বাভিমানবশে প্রজাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, লড়াই করেছেন হাতে হাত মিলিয়ে। দ্বারকানাথের তেমন কিছু কী খুঁজে পাওয়া যাবে! পেলে বাঙালি যে একটু শান্তি খুঁজে পায়। যতই হোক দ্বারকানাথ, রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর্দা।
যে সাতটি নীলের কুঠি সে এলাকায় ছিল, তার মধ্যে পাঁচটিই পাবনা-নদিয়া-বিরহিমপুর-সাহাজাদপুর জমিদারির মধ্যে পড়ত- শিলাইদহ, রায়নগর, মীরপুর, ডোব্রাকোল, এবং সমিধপুর(comidpore), অন্যদুটি মুর্শিদাবাদের বড় জঙ্গিপুর আর ছোট জঙ্গিপুরের জমিদারিতে, যেখানে তিনি রেশমও উতপাদন করতেন। প্রফেশনাল জমিদার দ্বারকানাথ, রায়তি ব্যবস্থায় নীলচাষ করলেও তার পিছে কখোনোই নীলকর ছাপ বসেনি। প্রত্যক বছর ১৬০০মন নীল উতপাদন করতেন দ্বারকানাথের নীলকুঠি, কলকাতায় এই বিশাল পরিমান নীল বিক্রি করতেন প্রত্যেক বছর দুই লক্ষ টাকায়। তিনি তাঁর সময়ে অন্ততঃ বাংলায় সব থেকে বড় নীল চাষী হিসেবে পরিগণিত হতেন। এছাড়াও তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ পদ্ধতিতে চিনি তৈরি করতে ব্যর্থ হলেও, চিনি তৈরির অন্যপিঠ, রায়নগরে একটি রাম উতপাদন কারখানা তৈরি করেন। মীরপুরের রাম লন্ডন প্রুফ ছাপ পেলে লন্ডনে রওনা হতে পারত রপ্তানি শুল্ক না দিয়েও। আর এই ছাড় না পেলে সেটি দেশি মদ রূপে প্রতি গ্যালন আট আনায় কলকাতার ট্যাভার্নগুলোতে বিক্রি হত। দ্বারকানাথ প্রত্যেক বছর ৫০০০গ্যালন রাম উতপাদন করতেন আর সেটি কলকাতার বাজারে বারো আনা থেকে একটাকায় বিক্রি হত।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্বর্ধনা
১৮৪৩এ ইংলন্ড থেকে নানান দেশের মহিলাদের নিয়ে নানান মুখোরচক স্কান্ডাল ধারণ করে ভারতে ফিরে এলেন দ্বারকানাথ। ১০মে এস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁকে গোন্ড মেডেল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর উদ্যোগ নেয়। ডেপুটি গভর্নর উইলিয়ম উইলবারফোর্স বার্ড তাঁকে এই সম্মানটি দিয়ে বললেন, exhorted my Native Friends who are looking for high situation to profit by (Dwarakanath’s) example to disply in the first instance the same zeal, ability, energy, and perseverance… and then they may rest assured that they will not fail in obtaining such advancement and such rewards as may be justly due to their merits and services. উত্তরে তিনি বললেন, the prize less a compliment to myself, than…a pledge conveyed through me to the Natives of India, that their happiness and elevation are objects dear to their rulers(Calcutta Star, 11th May). এই অনুষ্ঠানে বার্ড বললেন দ্বারকানাথ তাঁর অতীতের কাজ কর্মের জন্য এই পুস্কারটি অর্জন করলেন, আর দ্বারকানাথ জানালেন ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে মিলে ভারতের জনগণের উন্নতির জন্য তিনি তাঁর উদ্যম বিনিয়োগ করবেন।
No comments:
Post a Comment