পার্থ পঞ্চাধ্যায়ী
রয়েল সোসাইটির হনুকরণে ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অব কাল্টিভেশন অব সায়েন্সএর
প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্রলাল সরকার। এই প্রথম বিদেশিয় প্রথায় সংঘ তৈরি করে দেশিয় বিজ্ঞান চর্চার পরম্পরাকে
মুছে ফেলার কাজের শুরু – যদিও দোহাই ছিল দেশিয় জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি। আদতে বিজ্ঞান মানে তখন পশ্চিমী সামরিক অভিযানের জন্য,
কর্পোরেট লাভের জন্য বিকশিত বিজ্ঞান গবেষণা। ততদিনে বড় পুঁজি আর সামরিক আস্ফালন
পরস্পরের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে হাঁটার রাস্তা তৈরি করে নিয়েছে। যে কাজের প্রধান
তাত্ত্বিক ভারত লুঠেরা খুনি শাসক কোম্পানি আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য।
এর অনেক আগে থেকেই ইওরোপে পশ্চিমি প্রযুক্তি প্রকৃতি
ধংসের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ভারতে সে
উদ্যমের মুখড়া দেখা গিয়েছে দ্বারকানাথের খনি উদ্যমের মধ্যে, রেল লাইন পাতার চেস্টার
মধ্য দিয়ে। সমস্তটাই পশ্চিমের অনুকরণ। ইওরোপের জ্ঞাণচর্চার ইতিহাসকে বিশ্বজ্ঞাণচর্চার
ইতিহাসরূপে বৈধতা দিতে তৈরি করা সাম্রাজ্যের জ্ঞাণাঞ্জণ লাঠ্যৌষধি প্রকল্প। ভারতে ধাতু বিদ্যা বহু প্রাচীন কিন্তু কোনও ভাবেই
সামরিক বা বড় পুঁজির আস্ফালনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে নি। কিন্তু বিশ্বের সম্পদ লুঠ করে
অযুত সম্পদ কিছু মানুষের কুক্ষিগত করানোর উদ্যমের হাতিয়ার হয়ে উঠল পশ্চিমি
প্রযুক্তি চর্চা। এই প্রকল্পেই সমাধি ঘটবে দেশজ বিজ্ঞাণচর্চার দীর্ঘ ইতিহাসের ধারা। মহেন্দ্রলালই প্রথম যিনি হাতে কলমে দেশি বিজ্ঞাণকে
জলাঞ্জলি দিয়ে পশ্চিমের ইতিহাসকে বৈধতা দেওয়া শুরু করলেন – তিনি হয়ত ব্রিটিশ
উপনিবেশের বিরোধী কিন্তু পশ্চিমের জ্ঞান চর্চার অনুগামী। মহেন্দ্রলাল কালিকে নগ্ন সাঁওতালি রমণী বললেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সগর্বে সেই তথ্য উপন্যাসে ফুলিয়ে
ফাঁপিয়ে প্রকাশ করে পশ্চিমধন্য হলেন। আজও বাঙলায় তাত্বিক নিরাপত্তার কাঁটাবেড়ার সংরক্ষণ আর নিরাপত্তা পেয়ে
আসছেন সাম্রাজ্যেরবন্ধু রামমোহন, দ্বারকানাথ, বিদ্যাসাগর, মহেন্দ্রলালবেয়ে সুনীলও।
প্রথম জীবনে পশ্চিমি বিজ্ঞাণচর্চায় অনুপ্রাণিত
জগদীশচন্দ্র, দেশিয় ইংরেজদের গবেষণা বিরোধিতায় বিরক্ত বিতৃষ্ণ হয়ে সমস্ত কাজের
আর্থিক সম্মতি আদায় করতেন বিদেশি বন্ধুদের সাহায্যে। ঔপনিবেশিক সময়ে বেড়ে ওঠায় ধারায় ব্রিটেনে গিয়ে নিজের কাজ
দেখাবার ইচ্ছে এবং পশ্চিমীদের কাছে বাহবা নেওয়ার একটা উতসাহ জগদীশ্চন্দ্রের ছিল।
কিন্তু বিভিন্ন ঔপনিবেশিক চাপ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বন্ধুত্ব তার জীবনের
দিক নির্দেশ বদলে দিল। তাঁর এই বিবর্তনের ভাবনার প্রতিফলন পাই দিবাকর সেনের
সম্পাদনায় পত্রাবলী – আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু বই থেকে। নিচের আলচনার মূল সূত্র
সেই পুস্তকখানি। এই আলোচনায় আমরা দেখব কিভাবে জগদীশ্চন্দ্রের মানস ভূমিটির জমির
চরিত্র বদল হয়েছে।
No comments:
Post a Comment