আজকের কর্পোরেট আধিপত্যের খবরদারির যুগে বুঝতে
পারাযাচ্ছে তিনি কতটা দূরদর্শী ছিলেন। জগদীশচন্দ্র তাঁর শিকড়ে দাঁড়িয়ে থাকার
দূরদৃষ্টিতে বুঝেছিলেন, উপনিবেশের বিনিয়োগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সাধনার দুটি ফল- ১)
হয় জাতি রাষ্ট্রের যুদ্ধপ্রস্তুতিতে সাহায্য করা, ২) নয়ত প্রকৃতিকে প্রাকৃতিক
সম্পদ হিসেবে ছাপ্পা মেরে তাকে কর্পোরেটদের জন্য আরও বেশিকরে লুঠ, মুনাফার বাজার
তৈরি করা। এর জন্য প্রফুল্ল রায় মশাইকে প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনা বাহিনীকে নানান ভাবে সাহায্য করতে হয় উৎপাদন বাড়িয়ে। তার
উপহারও পেয়েছেন হাত ভরে। অন্যদিকে জগদীশ চন্দ্র পরম
সুহৃদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ১৭ মে, ১৯০১ সালের লন্ডন থেকে লেখা ২৭ সংখ্যার চিঠিতে
(পত্রাবলী, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, দিবাকর সেনের সম্পাদনা, প্রকাশনা বসু বিজ্ঞান
মন্দির) জগদীশ চন্দ্র লিখছেন, ‘...আমার বক্তৃতার কিয়ৎক্ষণ পুর্ব্বে একজন অতি
বিখ্যাত টেলিগ্রাফ কম্পানির ক্রোড়পতি প্রোপ্রাইটর টেলিগ্রাফ করিয়া পাঠাইলেন, দেখা
করিবার দরকার; আমি লিখিলাম সময় নাই, তার উত্তরে পাইলাম আমি নিজেই আসিতেছি,
অল্পক্ষণ মধ্যে স্বয়ং উপস্থিত। হাতে পেটেন্ট ফর্ম। আমাকে বিশেষ অনুরোধ করিলেন,
আপনি আজ বক্তৃতায় সব কথা খুলিয়া বলিবেন না There is money in it – let me take out patent
for you. You do not know what money you are throwing away ইত্যাদি।
আশা I will only take half share
in the profit – I will finance it ইত্যাদি। এই ক্রোড়পতি আর কিছু
লাভ করিবার জন্য আমার নিকট ভিক্ষুকের ন্যায় আসিয়াছে। বন্ধু তুমি যদি এদেশে টাকার
ওপর মায়া দেখিতে – টাকা – টাকা – টাকা - কি ভয়ানক সর্বগ্রাসী লোভ। আমি যদি এই
যাঁতাকলে পড়ি তাহা হইলে উদ্ধার নাই। দেখ আমি যে কাজ লইয়া আছি তাহা বাণিজ্যের
লাভালাভের উপরে মনে করি, আমার জীবনের দিন কমিয়া আসিতেছে, আমার যাহা বলিবার তাহারও
সময় পাই না, আমি অসম্মত হইলাম। কিন্তু সেদিন আমার বক্তৃতা শুনিতে অনেক টেলিগ্রাফ
কম্পানির লোক আসিয়াছিল, তাহারা পারিলে আমার সম্মুখ হইতেই আমার কল লইয়া প্রস্থান
করিত। আমার টেবলে এসিস্টেন্টএর জন্য হাতে লেখা নোট ছিল, তাহা অদৃশ্য হইল।’ ১১
জুলাই, ১৯০১ তারিখের লন্ডন থেকে পাঠানো ৩১ সংখ্যার চিঠিতে লিখছেন, ‘আমরা বহুবাদী
এরূপ কিংবদন্তী আছে। - প্রকৃত বহুবাদী কে এখন বুঝিতে পারিয়াছি। তুমি হিং টিং ছট
লিখিয়া আমাদের দেশবাসীকে গালাগালি দিয়াছ। যদি এদেশের হিং টিং ছট দেখিতে। সম্পূর্ণ
অর্থহীন ঘোর বাগাড়ম্বর – যে বিষয় সর্বাপেক্ষা কম জানে সে বিষয়েই সর্ব্বাপেক্ষা
শব্দাড়ম্বর’।
জগদীশচন্দ্রের দেশজ শিকড় বোঝার আরও একটা দিক, তিনি
একটাও আবিষ্কারকে কুক্ষিগত করেননি। সেই আবিস্কার
পেটেন্টযোগ্য করে ধনী হতে চাননি। তার প্রযুক্তি
ব্যাবহার করে বিশাল আকৃতির শিল্প কারখানা করতে চান নি। জগদীশচন্দ্রের দুই বান্ধবী
সিস্টার নিবেদেতা আর সারা বুল, আমেরিকায় জগদীশচন্দ্রের বিশেষ এক আবিষ্কারের
পেটেন্ট নিয়েছেন। কিন্তু জগদীশচন্দ্র তার
লভ্যাংশ নিতে অস্বীকার করেন (Exasperated by Bose's "quixotic"
approach towards money, two of his lady friends, British-born Margaret Noble
(better known as Sister Nivedita) and American-born Mrs Sara Bull on their own
initiative obtained in 1904 an American patent in Bose's name (for his "
galena single contact-point receiver"). Bose, however, remained unmoved
and refused to encash the patent. The irony of the situation seems to have gone
unnoticed. Here in Nivedita we have a spiritualist advocating the cause of
patents and royalties and a physics professor dismissing the idea. The reason
must be sought in their backgrounds: Nivedita was a product of industrial
Europe while Bose was a child of the orientalised East - J.C. BOSE:
The Inventor Who Wouldn’t Patent -Prof Rajesh Kochhar, http://www.qsl.net/vu2msy/JCBOSE1.htm)। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment