১২৩১ বাং সনে
কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত স্ত্রী শিক্ষা বিষয়ক নামক পুস্তক হইতে
হটী বিদ্যালঙ্কার নাম্নী অপর এক মহিলার বৃত্তান্ত উদ্ধৃত করিতেছি – রাঢীয় ব্রাহ্মণ কন্যা হটী বিদ্যালঙ্কার নামে একজন ছিলেন, তিনি বাল্যকালে
আপন আপন গৃহকার্যের অবকাশে পড়াশুনা করিয়া ক্রমে ক্রমে এমন পণ্ডিতা হইলেন, যে সকল
শাস্ত্রের পাঠ দিতেন। পরে
তিনি কাশীতে বাস করিয়া গৌড় দেশের ও সে দেশের অনেককে পড়াইতে পড়াইতে তাঁহার
সুখ্যাতি অতিশয় বাড়িলে সেখানকার সকল লোকে তাঁহাকে অধ্যাপকের ন্যায় নিমন্ত্রণ
করিতেন। এবং
তিনি সভায় আসিয়া সকল লোকের সঙ্গে বিচার করিতেন। এই পুস্তকে আরও
লিখিত আছে, ফরিদপুরের কোটালী পাড়া গ্রামের শ্যামাসুন্দরী নামে এক বৈদিক
ব্রাহ্মণের স্ত্রী ব্যাকরণাদি পাঠ সমাপ্ত করিয়া ন্যায় দর্শণের শেষ পর্য্যন্ত
পড়িয়াছিলেন, ইহা অনেকেই প্রত্যক্ষ দেখিয়াছেন। আর উলা
গ্রামের শরণ সিদ্ধান্ত ভট্টাচার্যের দুই কন্যা বার্ত্তা-বিদ্যা ও ক্ষেত্র-বিদ্যা
শিখিয়া পরে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ পাঠ করিয়া পণ্ডিতা হিয়াছিলেন, ইহা সকলেই জানেন।
আমরা আনন্দময়ী
দেবীর কথা উল্লেখ করিয়াছি, ইঁহার আত্মীয়া গঙ্গামণি দেবীর রচিত অনেক গান বিক্রমপুর
অঞ্চলে প্রচলিত আছে। ইনি
হরিলীলা কাব্য নকল করিয়াছিলেন, ইহার হস্তাক্ষর বড় সুন্দর ছিল। পার্ব্বতী
দাসী নাম্নী আর এক জন মহিলার হস্তাক্ষরের নমুনাও আমরা বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে উদ্ধৃত
করিয়া দিয়াছি। ইনি
একখানি বৈষ্ণব পুঁথি নকল করিয়াছ্লেন, হস্তাক্ষরও মুক্তার ন্যায় সুন্দর ছিল।
ফরিদপুর জেলায় সুন্দরী দেবী নাম্নী এক
ব্রাহ্মণ-রমণী এক শতাব্দী পূর্ব্বের ন্যায় শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য লাভ
করিয়াছিলেন। লঙ সাহেবের ক্যাটালগে ইহার উল্লেখ দৃষ্ট হয়। বৈদ্যবংশীয়া অনেক
রমণী গৃহে বসিয়া চিকিত্সা করিতেন, আমরা জানিতে পারিয়াছি। তাঁহারা আয়ুর্ব্বেদ
পাঠ করিয়া কৃতি হইতেন, কিন্তু গাছছাড়া ও অমোঘ মুষ্টিযোগ সাহায্যে
দুঃসাধ্য ব্যধি আরাম করিতে বেশী পটু ছিলেন। তাহাদের খ্যাতি বহুদূর ব্যাপী হইত এবং তাঁহাদের
গৃহদ্বারে প্রত্যহ বহু রোগীর – বিশেষতঃ মহিলা-রোগীর ভিড়
হইত।
No comments:
Post a Comment