আমাদের ডাক ও খনা এ বিষয়ে নীরব নহেন, তাঁহাদের সূত্র
বাঙ্গালার কৃষকগণের মুখে মুখে – পূবে হাঁস(পার্ব্বদিকে জলাশয় – কথায় হংস বিচরণ করিবে), উত্তরে বাঁশ, পশ্চিমে ঘিরে,
দক্ষিণে ছেড়ে, বাড়ী করগে ভেড়ের ভেড়ে। বংশীদাসের পদ্মপুরাণএ তারাপতি নামক কর্ম্মকাররাজের যে লৌহ-গৃহ-নির্ম্মাণের
বর্ণনা আছে, তাহা পড়িলে শিল্প-সমারোহের সহিত পুরাকালে আমাদের হর্ম্মাদি নির্ম্মিত
হইত তাহার একটা আভাষ চোখের সম্মুখে উপস্থিত হয়। ...বংশীদাসের
বর্ণনায় স্থপতিশ্রেষ্ঠ তারাপতির রূপবর্ণনা পড়িলে মনে হয় যে এই জাতীয় লোক যে ভিন্ন
দেশবাসী, তাহার একটা সংস্কার কবির মনে ছিল।
যখন নদী ভীঙনের ভয়ে
পাকাবাড়ী তৈরী করা নিরাপদ বলিয়া বিবেচিত হয় নাই, তখন বঙ্গদেশের স্বাভাবিক
শিল্পানুরাগ খড়ো ঘরেই যথাসাধ্য প্রযুক্ত হইয়াছিল। পূর্ব্বকালে
ময়মনসিংহ, শ্রীহট্ট, ফরিদপুর, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলে এই খড়ো ঘরগুলির জন্য লোকেরা
মুক্ত হস্তে অর্থব্যয় করিতেন। তাঁহাদের স্বভাবিক শিল্প-শক্তির এমন সকল নমুনা এই খড়ো ঘরে প্রদর্শিত হইত
যে, এখনকার দিনে তাহার একটা ধারনা করা শক্ত। পূর্ব্বঙ্গের
গীতিকায় অনেকস্থলে সূক্ষ্ম শিল্পকলা খড়ো মন্ডিত ঘরের উল্লেখ পাওয়া যায়। মলুয়া গীতিকার
নায়ক চাঁদ বিনোদ এবিষয়ে একজন ওস্তাদ ছিলেন। তাঁহার খড়ো ঘরের রচনার কথা সেই গীতে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হইয়াছে। মনসামঙ্গল
কাব্যগুলিতে কোন কোনটিতে সাহু বেনের স্ত্রী অমলার উদায়তারা নামক ঘরের উল্লেখ
দৃষ্ট হয়, তাহার কারুকার্য মণিমুক্তার ঝালর ও সোণার টুনি প্রভৃতির যে বর্ণনা পাওয়া
যায়, তাহাতে মনে হয় যে বাঙালী বণিকের বিশ্ব-ব্যাপক বাণিজ্য ছিল, তথন ঐ সকল খড়ো
ঘরের পাছে অজস্র অর্থ ব্যয় হইত। ...পূর্ব্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার নদুখালি গ্রামে(উক্ত স্থানে থানা ও বি আর
এর ষ্টেশন আছে) স্বর্গীয় ছাওয়ার জান মিঞার বাড়ীতে ওইরূপ একখানি ঘর আছে।
ময়মনসিংহ-এঞ্চলে কোন কোন স্থানে দুই একটি তদ্রুপ ঘর আছে বলিয়া আমরা শুনিয়াছি। ...এখন
পাকাবাড়ী – অন্ততঃ টিনের
ঘর – লোকের আদরণীয় হইয়াছে। খড়ো ঘরের জন্য
কে আর এত শ্রম – অর্থব্যয়
করিবে! ...যেসকল গুণ এদেশের ভূষণ ছিল, যাহা মিগাস্থিনিস, হিউনসাঙ্গ, ফাহায়েন
প্রভৃতি বিদেশী পর্যটকেরা শতমুখে প্রশংসা করিয়াছেন, সেই সত্যবাদিত্ব, সারল্য
ধর্ম্মভয় বাঙলা দেশ হইতে তিরোহিত হইবার মধ্য আসিয়াছে। ৮।১০ হাজার টাকা খরচ করিয়া
অসীম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় ...ছারোয়ার জান মিঞার বাড়ীর কতকটা ধারনা নিন্মলিখিত বিবরণে পাওয়া যাইবে।
No comments:
Post a Comment