...১৮০৮-১৮১৫
খৃঃ পর্যন্ত উত্তর ভারতের আর্থিক আবস্থা আলোচনা করিয়া বুকানন হ্যামিলটন একখানি বহি
লিখেন। উহা
হইতে কতকগুলি তথ্য আমি উদ্ধৃত করিতেছি।– কৃষির পরেই
সূতাকাটা ও বস্ত্র বয়ন ভরতের জতীয় ব্যবস্থা। সমস্ত কাটুনীই
স্ত্রীলোক এবং জেলার(পটনা সহর ও বিহার জেলা) ডাঃ বুকাননের গণনা মতে তাহাদের সংখ্যা
৩,৩০,৪২৬। ইহাদের
অধিকাংশ কেবল বিকালে কয়েকঘন্টা মাত্র সূতা কাটে এবং প্রত্যেকে গড়ে বার্ষিক ৭ আনা
৮ পাই মূল্যের সূতা কাটে। সুতরাং
এই সমস্ত কাটুনীদের কাটা সূতার মোট মূল্য আনুমানিক(বার্ষিক) ২৩,৬৭,২৭৭। এইভাবে হিসাব
করিলে দেখযায় ইহাদের সূতাকাটার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা তূলার মূল্য ১২,৮৬,২৭২ টাকা
এবং কাটুনীদের মোট লাভ থাকে ১০,৮১,০০৫ টাকা অর্থত প্রত্যেক কটুনীর বার্ষিক লাভ
গড়ে সাড়ে তিন আনা। ...সূতাকাটা ও বস্ত্র বয়ন সীহাবাদ জেলার প্রধান জাতীয় ব্যবসা। এই জেলার
প্রায় ১,৫৯,৫০০ জন স্ত্রীলোক সূতাকাটার কাজে নিযুক্ত আছে এবং তাহাদের উত্পন্ন
সূতার মোট মূল্য বার্ষিক ১২,৫০,০০০ টাকা। ...পূর্ণিয়া জেলা সম্বন্ধে বলা হইয়াছে, - কার্পাস বস্ত্র বয়নরকারীর
সংখ্যা বিস্তার এবং তাহারা গ্রামের লোকেদের ব্যবহারের জন্য মোটা কাপড় বুনে। সূক্ষ্ম
বুনিবার জন্য সাড়ে তিন হাজার তাঁত আছে। তাহাতে ৫,০৬,০০০ টাকা মূল্যের বস্ত্র উত্পন্ন হয় এবং মোট ১,৪৯,০০০ টাকা
লাভ হয় অর্থাত্ প্রত্যেক তাঁতে বার্ষিক গড়ে ৮৭ শিলিং লাভ হয়। মোটা কাপড়
বুনিবার জন্য ১০ হাজার তাঁত নিযুক্ত আছে এবং তাহাদের উত্পন্ন কাপড়ের মূল্য
১০,৮৯,৫০০ এবং মোট ৩,২৪,০০০ টাকা লাভ হয়, অর্থাত প্রত্যেক তাঁতে বার্ষিক গড়ে ৬৫
শিলিং লাভ হয়। রমেশ
দত্ত কৃত ভারতের আর্থিক ইতিহাস গ্রন্থ হইতে এই সমস্ত বিবরণের কিয়দংশ উদ্ধৃত হইয়াছে। তিনি উপসংহারে
বলিয়াছেন – উনবিংশ
শতীব্দীর প্রথম পাদ পর্যন্ত নানা শিল্প কার্যে নিযুক্ত ছিল। লক্ষ লক্ষ
স্ত্রীলোক সূতা কাটিয়া জীবিকার্জন করিত।
এইচ. এইচ.
উইলসন মিল-কৃত ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের পরিশিষ্ট লিখেন। ভরতের বস্ত্র
বয়ন শিল্প কিভাবে ধ্বংস হইয়াছিল তত্সম্বন্ধে ক্ষোভের সঙ্গে তিনি নিম্নলিখিত রূপ
বর্ণনা করিয়ছেনঃ- পরাধীন ভরতবর্ষের উপর প্রভু ব্রিটেন যে অন্যায় করিয়াছে, ইহা
তাহার একটি শোচনীয় দৃষ্টান্ত। কমিশনের সাক্ষ্যে(১৮১৩খৃঃ) বলা হইয়াছে যে, ভারতের কার্পাস ও রেশমের
বস্ত্রদি ইংলন্ডের ঐ শ্রেণীর বস্ত্রজাত অপেক্ষা শতকরা ৫০।৬০ টকা কম মূল্যে বিক্রয়
হইত। সুতরাং
ভারতীয় আমদানী বস্ত্রের উপর শতকরা ৭০।৮০
ভাগ শুল্প বসাইয়া অথবা ঐগুলির আমদানী একেবারে নিষিদ্ধ করিয়া ইংলন্ডের
বস্ত্রজাতে রক্ষার ব্যবস্থা হইল। যদি এইরূপ করা না হইত, যদি এই সমস্ত অতিরিক্ত শুল্ক ও নিষেধ বিধি না হইত,
তবে পেইসলি ও ম্যনচেস্টারের কাপড়-কারখানাগুলি গোড়তেই বন্ধ হইয় যইত এবং বাষ্পীয়
শক্তির দ্বারাও তাহাদিগকে চালানো যাইত না।
No comments:
Post a Comment