ছোটেলোকেরা যে আমোদ করে তাকেই বলে লেটো। ভদ্রলোকের শোণার যোগ্য নয়। এই রায় দিয়েছিলেন আমার ন-কাকা – পাঁচুগোপাল রায় হয়ত বিষন্ন কৌতুকে বিখেছিলেন সুকুমার সেনের নট নাট্য নাটক বইতে নিজের শর্টহ্যান্ডে নেওয়া একটি লেটে পালা সংযোজনের মুখবন্ধে। লেটোরমতই বাংলার নানান প্রান্তজুড়ে ছড়িয়েথাকা আরও অনেক লোকনাটকে পাতে দেওয়ার যোগ্য বলেই মনে করেনি শহুরে পশ্চিম শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবর্ণের সংস্কৃতির জ্যাঠাশাই ন-কাকারা। বহু শত বছর ধরেই শহরের প্রান্তে নিজেদের এক নিজস্ব সমাজবীক্ষা গড়ে তুলে ছিলেন গ্রামীণ প্রচারবিমুখ অথচ সাংস্কৃতিভাবে ঋদ্ধ, চাহিদা-সংস্কৃতির বিরোধী এক যৌথ সংস্কৃতি গড়ে তুলে চাওয়া শিল্পীরা। অথচ সুকুমার সেন মশাই প্রগুক্ত পুস্তকেই বলছেন, খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকে আমাদের দেশে যে ধরনের নাট্যকর্ম পন্ডিতদের অগোচরে একটানা চনে আসছে বলাযায়, তার জের এখোনো পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান ও হুগলির দামোদর উপত্যকায় মুসলমান গুণীদের মধ্যেই সেদিন পর্যন্ত চলে এসেছে। সুকুমারবাবু নিজে বর্ধমানের মানুষ ছিলেন, কিন্তু বর্ধমানের বাইরেও সারা বাংলা জুড়ে এই নাট্য জড়িয়ে রয়েছে শীতের মমতাময় কাঁথারমত। ইংরেজ শাসনের আমল থেকেই শেকড় ছেঁড়া সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধহয়ে ওঠা ইংরেজি শিক্ষিত উচ্চবর্ণ সমাজ পশ্চিমি শেকড় ছেঁড়া সংস্কৃতিতে দীক্ষিত শহুরে বাবুসমাজ নিজের শেকড় খুঁজতে না গিয়ে ভাঁড় শুঁকে মেতে উঠলেন, প্রসেনিয়াম থিয়েটার, চলচ্চিত্রের মুগ্ধতায়। দেশের সংস্কৃতির প্রতি নতুন করে কোনো আগ্রহও গড়ে উঠলনা। বুদ্ধিজীবিদের ধারণা ছিল চৈতন্য উত্তর বাংলার সংস্কৃতির ছিল বন্ধ্যা। সে সময় কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। ব্রিটিশ আর ব্রিটিশের ধামাধরা সংস্কৃতির ইতিহাসের প্রবক্তাদের বক্তব্য ছিল, বাংলা সংস্কৃতিতে অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি। তাই অন্ধকারের তথাকথিত অনির্দেশ্য পথে না ছুটে তারা ছুটে চললেন উজ্জ্বল অথচ ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক রহিত এক আলেয়ার পিছনে। নিজেদের আপাত দৈন্য ঢাকতে বিভিন্ন তথ্যের মসলা ফোড়ন সহযোগে প্রমাণ করার চেষ্টা চলল চৈতন্য উত্তর বাংলা সংস্কৃতিতে সৃষ্টির দৈন্যের নানান তথ্য। এ ধরনের মানুষজনের দাবি, বাংলার প্রণোদিত নবজাগরণের ধারাতেই তাঁরা পুনর্জন্ম প্রদান করলেন বঙ্গসংস্কৃতিকে। এই সেদিন পর্যন্ত কয়েকজন সনাতন বাংলার সংস্কৃতিতে প্রণত উত্সাহী, গবেষক, পন্ডিত ছাড়া গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ছিল না শহুরে হাতেগোণা নবজাগরণে অগ্রদূতেদের। বঙ্গ গ্রামীণ সংস্কৃতির নামে বাঙালি যা পরিচয় পেয়েছে। তা হল, শহুরে অনুসরণ হনুকরণপ্রিয় পিটুলিগোলাসম সংস্কৃতি। শুধু চৈতন্যোত্তর সময়েই নয়, হাজার হাজার বছর ধরেই সমগ্র বাংলা নিজস্ব সংস্কৃতির জারন রসে নিজেকে টিকিয়ে, জারিয়ে রেখেছিল এটাই বাস্তব। এই তত্বের বিরুদ্ধে একটাই প্রশ্ন তোলা যায় যে তিনশে বছর ধরে কোনো সভ্যতা কী সংস্কৃতি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। এর উত্তর পেতে পথে নামলেন একঝাঁক দেশের মাটির প্রতি দায়বদ্ধ এক ঝাঁক মানুষজন। জবাব দিলেন
বাংলার শহুরে বুদ্ধিজীবিরা তখন লজ্জাজনক তুলনায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন। নিজেদের সংস্কৃতির মহীরুহের পশ্চিমের নানান স্রষ্টার সঙ্গে তুলনা করছেন অবহেলে। কেউ বাংলার শেলি, কেউবা বাংলার বায়রন আবার কেউবা বাংলার স্কট, আবার কেউ বাংলার গ্যারিক। তবুও তাঁরা কেউ বাংলার নিজের সংস্কৃতির দিকে তাকিয়েও দেখার প্রয়োজন করলেন না। আরও অভিযোগ উঠল যতটুকু সৃষ্টি হয়েছে এই সময়, তা সবই ধর্মাশ্রয়ী, এমত ইওরোপিয়মত প্রকাশকরেছেন সাহিত্য বিশেষজ্ঞরা। সাংস্কৃতিক কর্ণধারেরা সকলেই ইওরোপবাদী। ইওরোপের সাহিত্য আন্দোলন যেন তাঁদের নিজস্ব আন্দোলন। তাঁরা কেউ বিচার করলেন না লৌকিক ধর্ম আর প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজসভার ধর্মের মধ্যে পার্থক্যের কথা। ধর্মাশ্রিত হলেও ধর্ম সবসময় মানুষের কথা বলেছে, তার দুঃখ, দুর্দশা আর তার থেকে নিরাময়ের কথা বাখান করেছে। বাংলার দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামগঞ্জের গীতিকা, মঙ্গল কাব্য অথবা রামায়ণ বা মহাভারতের অনুবাদে বার বার ফুটে উঠেছে সাধারণের জীবন যন্ত্রণা। দেবতা রয়েছেন কিন্তু তিনি যেন লৌকিক মানুষ। শিবায়ণ কাব্যের শিব আর চ্যংমুড়ি কানি সকলেই যেন লৌকিক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভক্তি যতটা রয়েছে, ভয় ততটা যেন নেই। ষোড়শ শতাব্দের শেষ দিকে বৈষ্ণব ধর্ম যোগী-তান্ত্রিক-সুফিদেরমত অবৈষ্ণব গুহ্য সাধকদের আকর্ষণ করতে শুরু করে, যেখান থেকেই আউল, বাউল, সহজিয়া, সাঁই কর্তাভজা প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উদ্ভব। বহু ভিন্নস্বরের সমারোহে বৈদিকযুগের বহু আগে থেকেই বিংশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত জীবনের জয়গানে বাংলার গ্রামীণেরা মুখর হয়ে উঠেছেন এবং অন্তরের ক্ষুতপিপাসা মিটিয়েছেন।Lokfolk লোকফোক forum of folk লোক tribal আদিবাসী culture সংস্কৃতি of West Bengal পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা. LOKFOLK is Bengal বাংলা India's ভারতের traditional পারম্পরিক knowledge system জ্ঞানভাণ্ডার, history ইতিহাস, Indigenous technology প্রযুক্তি. We have two mass bodies গনসংগঠন Bongiyo Paromporik Kaaru O ও Bastro Shilpi Sangho; Bongiyo Paromporik Aavikaar Shilpi Sangho. Journal পত্রিকা, PARAM, পরম. Picture - KaaliKaach কালিকাচ, Dinajpur দিনাজপুর, Madhumangal মধুমঙ্গল Malakar মালাকার
Monday, March 28, 2011
ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা২
লেবেলসমূহ:
Alkap,
Bengal.,
Folkculture,
আলকাপ,
বাংলা,
লোকনাট্য,
লোকসংস্কৃতি
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment