আমরা গোঁসাইহাট রাভা বস্তি এবং মধ্যনারারথলীর মেচ সমাজ সামগ্রিকভাবে নিজেদের জমিতে তুলো চাষ করব, সুতো কাটছি, এবং সুতো রং(এইটা নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে) করছি, এবং কাপড় বুনছি, তা হলে পরিধেয় তৈরির উপকরণের জন্য একবারও বাজারের ওপর নির্ভর করতে হবে না, বরং সেই উতপাদন বাজারে বিক্রি করতে খোলা বাজারকে ব্যবহার করতে পারব নিজেদের মত করে – রোজগার করব নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে – রক্ষা করতে পারব আমাদের দীর্ঘকালীন বয়ন ঐতিহ্য, নিজেদের মত করে কোন দাতা সংগঠনের অনুদান ছাড়াই, বন্ধুদের সহায়তায়।
এছাড়াও আমরা সংঘকে
এবং ওয়াটাগকে প্রস্তাব দিচ্ছি যদি সম্ভব হয় আমাদের সমাজের বয়ন নকশা নকল আটকাতে
ভৌগোলিক চিহ্ন হিসেবে গোঁসাইহাট বনবস্তির রাভাদের এবং মধ্যনারারথলীর মেচ সমাজের
তৈরি বস্ত্রকে জিআই পঞ্জীকরণ করতে দুই সমাজকে সাহায্য করুক। তাতে সমাজের বুননের
যেমন নিজস্বতা বজায় থাকবে ঠিক তেমনি বড় পুঁজি এই ছোট উতপাদন ধ্বংস করতে যে
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে, সমাজের বয়ন নকশাগুলি ব্যবহার করে ব্যাপক নকল কাপড় তৈরি কাজের
আশ্রয় নেয়, তাও আটকানোর চেষ্টা করা যাবে।
এই প্রস্তাবের পাশে
দাঁড়িয়ে সংঘের এবং কলাবতী মুদ্রার প্রস্তাব এবং আশা ওয়াটাগের সম্মানীয় উপদেষ্টা
দীপঙ্কর দে মহাশয় এবং তার কর্মস্থলের সম্মানীয় সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীরা – যাঁরা
ওয়াটাগ তৈরিতে নিজেদের সামাজিক অবদান পেশ করেছেন অতি দক্ষতায়, যাঁদের একজন
ওয়াটাগের অছিও বটে, যাঁরা এখনকার ব্যবসা ব্যবস্থাপনা পড়েন এবং পড়ান এবং এ বিষয়ে
আসীম দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং অধ্যাপক দে’র নেতৃত্বে এরাই সামাজিক মাইক্রো ব্র্যান্ডিংএর
অন্যতম প্রধান প্রবক্তা - নিশ্চই রাভা এবং মেচ কাপড়ের মাইক্রো ব্রান্ডিং তৈরিতে
সক্রিয় হবেন। তাঁদের অধীত দক্ষতার ছোঁয়ায় গড়ে উঠবে নতুন বাঙলার
প্রাচীনতম সমাজগুলির নিজস্ব দক্ষতায় গয়ে উঠেও রাষ্ট্রিক অসহযোগিতায়, বড় পুঁজির
আক্রমনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অসাধারণ বয়ন ব্যবস্থা, প্রাণ পাবে জঙ্গলে বাস করা বাঙলার দক্ষ
মানবিকতম প্রকৃতির সন্তান।
রাভা সমাজের পক্ষে ওয়াটাগের
এবং সংঘের এবং কলাবতী মুদ্রার এবং আমাদের বন্ধুদের কাছে আরেকটি অনুরোধ, গোঁসাইহাট
রাভা বন বস্তি বাঙলার সুন্দরতম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। রাভা সমাজ একে কারু ভ্রমণ
অঞ্চল হিসেবে খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছি – বিশেষ করে যারা
অন্য ধরণের যায়গা দেখতে চাখতে এবং তার স্বাদ অনুভব করতে চান। তার জন্য গোঁসাইহাট
রাভা বস্তি কোন এক/দুজনের সদস্যের বাড়ির একটি ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার
পরিকল্পনা করেছি –যারা এই অঞ্চল ভ্রমণ করতে আসবেন তারা সেই বাড়িতে থাকবেন,
পরম্পরার খাবার খাবেন। গয়েরকাটা ছাড়াও এর
৭৫ কিমির মধ্যে বিভিন্ন জঙ্গল – যেমন বক্সা, চিলাপাতা, গরুমারা ইত্যাদি এবং
ভূটানের ফুন্টসিলিং আর ১০০ কমি গেলে অসাধারণ রসিক বিল দেখতে পারবেন। যদি তারা
শুধুই বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এই জঙ্গল ঘেরা গ্রামে গিয়ে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা বা
হিমালয়ের সৌন্দর্য এবং তার সঙ্গে জঙ্গলে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরার অনুভূতি অর্জন
করতে চান তাহলে গোঁসাইহাট ফরেস্ট বস্তি একমাত্র তাদের গমন এলাকা। অবশ্যই এখানে
যারা আসবেন তাদের রাভা সমাজে অর্থ দেওয়া ছাড়াও তাঁর অধীত কোন জ্ঞান সমাজের সঙ্গে অংশিদারি
করে নিতে হবে। এই ঘোরা শুধু দিন কাটানো ভ্রমণ নয়, এটি দায়িত্বপূর্ণ ভ্রমণের অঙ্গ
করে গড়ে তুলতে চাইছে রাভা সমাজ। কিন্তু এই ভ্রমণ উদ্যমটি কোন লাভজনক ব্যবসা
কর্মরূপে বিবেচিত হবে না – তাহলেই সাধারণ ভ্রমণকারীদের উতপাত বাড়বে – যাদের উৎসাহ
রয়েছে নির্জনতা উপভোগ আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শুধু তাদের জন্যই এই ভাবনা এবং
পরিকল্পনা রূপায়ন।
কলাবতী মুদ্রা এবং
সংঘের পক্ষ থেকে বন্ধুদের কাছে আরো একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব – সৌমিকদা
অসাধারণ দক্ষতায় জড়ো করেছেন দেশের তুলোর বীজ – বড় পুঁজির বিরুদ্ধে লড়াইএর দুরন্ত
হাতিয়ার – তিনি জোগাড় করেছেন দেশি রঙ্গীন তুলোর বীজ – ছাই আর গৈরিক। কিন্তু নীল আর
অন্য রঙ্গের বীজ যা পাওয়া যেত বাংলায় তা আর পাওয়া যায় না – শোনা গিয়েছে তা বলিভিয়া
দেশে পাওয়া যায়। যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তির সেই দেশে কোন যোগাযোগ থেকে থাকে তিনি যেন
বলিভিয়ার রঙ্গিন তুলোর বীজ এদেশে আনতে চেষ্টা করেন। তাতে আমার চাষী, আমাদের বস্ত্র
উতপাদন ব্যবস্থা জোরদার হবে।
আমরা সক্কলে এই
ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহ্য এবং উতপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এই অদম্য, অসম সাহসী,
দক্ষতা সম্পন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যের হাত বাড়াই। এই কাজে যৌথভাবে রাভা,
মেচ সমাজ, কলাবতী মুদ্রা, বঙ্গীয় পারম্পরিক সংঘ বন্ধুদের সাহায্য চাইছি – সম্পদ
সংগ্রহ এবং বুনন আর সামাজিক ভ্রমন কর্মসূচী রূপায়নে।
শহুরে আর জঙ্গলের
মানুষদের প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং যৌথ দক্ষতায় নতুন বাংলা নতুনতমভাবে সেজে উঠবে নতুন
করে নতুন সময়ে।
রাভা সমাজের
পক্ষে সিতিন রাভা ও গনাত রাভা
মেচ সমাজের পক্ষে
রাজীব ঠাকুর ও মধুসূদন ঈশ্বরারী
বঙ্গীয় পারম্পরিক
কারু ও বস্ত্র শিল্পী সংঘের পক্ষে মধুমঙ্গল মালাকার
জয় বাংলা!
জয় পরম্পরার
জ্ঞানের, প্রজ্ঞার, দক্ষতার!!
No comments:
Post a Comment