বিক্রমশীলা, ওদন্তপুরী, জগদল বিহার
বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মপাল অষ্টম শতে, আজকের ভাগলপুরের কাছাকাছি। বিক্রমশীলায় মূলত তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম পড়ানো হত - এবং সেই সূত্র ধরেই বিক্রমশীলার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভাষার বৌদ্ধ সাহিত্য তিব্বতি ভাষায় অনুদিত হয়।
বিক্রমশীলায় একটি কেন্দ্রিয় বিপুলাকৃতি প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে লাগোয়া ছিল ছটি বিদ্যালয়। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য থাকত বিপুলাকৃতি দ্বার। প্রত্যেক দ্বারে ছিলেন দ্বারপণ্ডিত - তাঁদের সন্তুষ্ট করলে, বিদ্যালয়ে প্রবেশের ছাড়পত্র মিলত - অর্থাৎ ছাত্রদের বেছে বেছে নেওয়া হত - যারা অধিকারী তাঁরাই হতেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র। রত্নাকরশান্তি(এঁকে নিয়ে সে সময়ের বাংলার জ্ঞানচর্চার খুব সুন্দর ছবি এঁকেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশাই) যখন বাংলার বিশ্বশ্রুত পণ্ডিত দ্বারপাল রূপে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, যে সময়ের প্রত্যেক ছয়টি দ্বারের দ্বারপণ্ডিতের একটি তালিকা মিলেছে - তিনি ছিলেন পূর্ব দ্বারে; পশ্চিমের দ্বারে ছিলেন কাশীর বাগীশ্বরকীর্তি; উত্তর দ্বারে -নারোপা বা নাঢপাদ(যেখান থেকে সম্ভবত ন্যাড়ানেড়ি শব্দটা এসেছে, এদের স্ত্রীর নাম হত নাঢী - পরের দিকে বাংলাড় নাড় বা নাড়ি জ্ঞানী শব্দের প্রতিরূপ হিসেবে ব্যবহৃত হত); দক্ষিণ দ্বারে প্রজ্ঞাকর্মতি; প্রথম কেন্দ্রিয় দ্বারে কাশ্মীরের রত্নবজ্র এবং দ্বিতীয় কেন্দ্রিয় দ্বারে গৌড়ের জ্ঞানশ্রীমিত্র।
কি, কখন, কিভাবে পড়ানো হত তা কোনো সূত্র পাওয়া যায় নি। তবে সেসময়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সাধারণত ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, তন্ত্র এবং নানান ধর্মীয় শাস্ত্র পড়ানো হত। বিক্রমশীলায় তিব্বতি বৌদ্ধ শাস্ত্র শিক্ষার সব থেকে বড় ক্ষেত্র ছিল। এখানকার ছাত্ররা তিব্বতের নানান বৌদ্ধ মঠ বা রাজসভায় শিক্ষক বা অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। বিক্রমশীলা উপাধি দিত - এই উপাধি দেওয়া আবার বিক্রমশীলার অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল। তিব্বত সূত্রে যে দুজন ছাত্রের নাম পাওয়া যাচ্ছে - জেতারি আর রত্নবজ্র - তাঁরা এই বিদ্যালয় থেকে উপাধি পেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক, বাংলার রাজার থেকেও শংসাপত্র পান।
বিক্রমশীলার নাম অমর হয়ে থাকবে বাঙ্গালী পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান(জ ৯৮০)এর জন্য। তিনি এক সময় বিক্রমশীলার উপাচার্য(১০৩৪-৩৮)ও হন। তিব্বতী রাজার আমন্ত্রণে তিনি জীবনের শেষ ১৩ বছর তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম(বজ্রযান)এর নানা গ্রন্থ সংস্কৃত থেকে অনুবাদ, বিশ্লেষণ করেন, তিব্বতে আজও তিনি দ্বিতীয় বুদ্ধরূপে পুজিত হন। বিক্রমশীলার অন্য ছাত্রদের মধ্যে বিরোচন রক্ষিত(জ ৭৫০), জেতারি, রত্নাকরশান্তি, জ্ঞানশ্রীমিত্র, রত্নবজ্র এবং বাগীশ্বরকীর্তি অন্যতম, তাঁরা প্রত্যেকেই জ্ঞানী দ্বারী রূপে সময় ব্যয় করেছেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভারত ভ্রমণ কালে হিউএনসাং ভারতের অন্য নানান একালায় এ ধরণের শিক্ষা ক্ষেত্র লক্ষ্য করেছেন। কাশ্মীর ছিল একটি বড় কেন্দ্র জয়েন্দ্রতে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা ক্ষেত্র চলত। তিনি সেখানে বহুকাল বসবাস করেন এবং অধ্যয়ন, এবং ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহ করেন। পাঞ্জাবে চিনাপতি, জলন্ধর, যুক্ত প্রদেশে মতিপুর এবং কনৌজ এবং ভদ্রতে বিহার ছিল। তবে উত্তর এবং উত্তর পশ্চিমের যত বিহার তিনি দেখেছিলেন, সেগুলি তাদের ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছিল ততদিনে। কিন্তু ইসলামের বাংলা বিজয়ের আগে পর্যন্ত কিন্তু বাংলায় বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চার ধারা অপ্রতিহিত গতিতে চলছিল - বিশেষ করে ওদন্তপুরী এবং জগদ্দল বিহারে।
ওদন্তপুরী
প্রতিষ্ঠা করেন গোপাল। এখানে যুক্ত ছিলেন রত্নাকরশান্তি, দীপঙ্করশ্রীজ্ঞান অতীশ, শ্রীল রক্ষিত প্রভৃতি বিশ্বশ্রুত পণ্ডিত। বিক্রমশীলায় যাঁরা দ্বারপণ্ডিত রূপে বৃত হতেন, তাঁদের ভিত্তি স্থাপিত হত ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই ১৯ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে নাড়া বেঁধে ১৯ বছর বয়সী দীপঙ্কর জ্ঞানবিশ্বে প্রবেশের অনুমতি লাভ করেন। তিব্বতের রাজা তিব্বতের স্যাম-এতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ওদন্তপুরী বিহারের অনুসরণেই, শান্তরক্ষিতএর পরিকল্পনায়। এখানে একাদশ দ্বাদশ শতে ১০০০ ছাত্র ছিল, মহাবোধিতে ছিল ১০০০, বিক্রমশীলায় ছিল ৩০০০ ছাত্র এবং বিপুল গ্রন্থাগার - এই বিপুল জ্ঞানচর্চার পরিকাঠামো তুর্কি লুঠেরাদের আক্রমনে বিনষ্ট হয়ে যায়।
জগদল
রামপাল দ্বাদশ শতে গঙ্গা আর করতোয়ার মাঝে, বারেন্দ্র ক্ষেত্রে জগদল বিহারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বখতিয়ার ১২০৩ সালে এটি অন্যান্য কেন্দ্রের মত ধ্বংস করে। এই খুব কম সময়ে বিভূতিচন্দ্র, দানশীল, শুভঙ্কর, মোক্ষকরগুপ্তর মত ছাত্র তৈরি করেছিল এই বিহার।
বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ধর্মপাল অষ্টম শতে, আজকের ভাগলপুরের কাছাকাছি। বিক্রমশীলায় মূলত তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম পড়ানো হত - এবং সেই সূত্র ধরেই বিক্রমশীলার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর সংস্কৃত এবং অন্যান্য ভাষার বৌদ্ধ সাহিত্য তিব্বতি ভাষায় অনুদিত হয়।
বিক্রমশীলায় একটি কেন্দ্রিয় বিপুলাকৃতি প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে লাগোয়া ছিল ছটি বিদ্যালয়। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য থাকত বিপুলাকৃতি দ্বার। প্রত্যেক দ্বারে ছিলেন দ্বারপণ্ডিত - তাঁদের সন্তুষ্ট করলে, বিদ্যালয়ে প্রবেশের ছাড়পত্র মিলত - অর্থাৎ ছাত্রদের বেছে বেছে নেওয়া হত - যারা অধিকারী তাঁরাই হতেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র। রত্নাকরশান্তি(এঁকে নিয়ে সে সময়ের বাংলার জ্ঞানচর্চার খুব সুন্দর ছবি এঁকেছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশাই) যখন বাংলার বিশ্বশ্রুত পণ্ডিত দ্বারপাল রূপে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, যে সময়ের প্রত্যেক ছয়টি দ্বারের দ্বারপণ্ডিতের একটি তালিকা মিলেছে - তিনি ছিলেন পূর্ব দ্বারে; পশ্চিমের দ্বারে ছিলেন কাশীর বাগীশ্বরকীর্তি; উত্তর দ্বারে -নারোপা বা নাঢপাদ(যেখান থেকে সম্ভবত ন্যাড়ানেড়ি শব্দটা এসেছে, এদের স্ত্রীর নাম হত নাঢী - পরের দিকে বাংলাড় নাড় বা নাড়ি জ্ঞানী শব্দের প্রতিরূপ হিসেবে ব্যবহৃত হত); দক্ষিণ দ্বারে প্রজ্ঞাকর্মতি; প্রথম কেন্দ্রিয় দ্বারে কাশ্মীরের রত্নবজ্র এবং দ্বিতীয় কেন্দ্রিয় দ্বারে গৌড়ের জ্ঞানশ্রীমিত্র।
কি, কখন, কিভাবে পড়ানো হত তা কোনো সূত্র পাওয়া যায় নি। তবে সেসময়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সাধারণত ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, তন্ত্র এবং নানান ধর্মীয় শাস্ত্র পড়ানো হত। বিক্রমশীলায় তিব্বতি বৌদ্ধ শাস্ত্র শিক্ষার সব থেকে বড় ক্ষেত্র ছিল। এখানকার ছাত্ররা তিব্বতের নানান বৌদ্ধ মঠ বা রাজসভায় শিক্ষক বা অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। বিক্রমশীলা উপাধি দিত - এই উপাধি দেওয়া আবার বিক্রমশীলার অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল। তিব্বত সূত্রে যে দুজন ছাত্রের নাম পাওয়া যাচ্ছে - জেতারি আর রত্নবজ্র - তাঁরা এই বিদ্যালয় থেকে উপাধি পেয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক, বাংলার রাজার থেকেও শংসাপত্র পান।
বিক্রমশীলার নাম অমর হয়ে থাকবে বাঙ্গালী পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান(জ ৯৮০)এর জন্য। তিনি এক সময় বিক্রমশীলার উপাচার্য(১০৩৪-৩৮)ও হন। তিব্বতী রাজার আমন্ত্রণে তিনি জীবনের শেষ ১৩ বছর তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম(বজ্রযান)এর নানা গ্রন্থ সংস্কৃত থেকে অনুবাদ, বিশ্লেষণ করেন, তিব্বতে আজও তিনি দ্বিতীয় বুদ্ধরূপে পুজিত হন। বিক্রমশীলার অন্য ছাত্রদের মধ্যে বিরোচন রক্ষিত(জ ৭৫০), জেতারি, রত্নাকরশান্তি, জ্ঞানশ্রীমিত্র, রত্নবজ্র এবং বাগীশ্বরকীর্তি অন্যতম, তাঁরা প্রত্যেকেই জ্ঞানী দ্বারী রূপে সময় ব্যয় করেছেন তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভারত ভ্রমণ কালে হিউএনসাং ভারতের অন্য নানান একালায় এ ধরণের শিক্ষা ক্ষেত্র লক্ষ্য করেছেন। কাশ্মীর ছিল একটি বড় কেন্দ্র জয়েন্দ্রতে বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা ক্ষেত্র চলত। তিনি সেখানে বহুকাল বসবাস করেন এবং অধ্যয়ন, এবং ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহ করেন। পাঞ্জাবে চিনাপতি, জলন্ধর, যুক্ত প্রদেশে মতিপুর এবং কনৌজ এবং ভদ্রতে বিহার ছিল। তবে উত্তর এবং উত্তর পশ্চিমের যত বিহার তিনি দেখেছিলেন, সেগুলি তাদের ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছিল ততদিনে। কিন্তু ইসলামের বাংলা বিজয়ের আগে পর্যন্ত কিন্তু বাংলায় বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চার ধারা অপ্রতিহিত গতিতে চলছিল - বিশেষ করে ওদন্তপুরী এবং জগদ্দল বিহারে।
ওদন্তপুরী
প্রতিষ্ঠা করেন গোপাল। এখানে যুক্ত ছিলেন রত্নাকরশান্তি, দীপঙ্করশ্রীজ্ঞান অতীশ, শ্রীল রক্ষিত প্রভৃতি বিশ্বশ্রুত পণ্ডিত। বিক্রমশীলায় যাঁরা দ্বারপণ্ডিত রূপে বৃত হতেন, তাঁদের ভিত্তি স্থাপিত হত ওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই ১৯ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের কাছে নাড়া বেঁধে ১৯ বছর বয়সী দীপঙ্কর জ্ঞানবিশ্বে প্রবেশের অনুমতি লাভ করেন। তিব্বতের রাজা তিব্বতের স্যাম-এতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ওদন্তপুরী বিহারের অনুসরণেই, শান্তরক্ষিতএর পরিকল্পনায়। এখানে একাদশ দ্বাদশ শতে ১০০০ ছাত্র ছিল, মহাবোধিতে ছিল ১০০০, বিক্রমশীলায় ছিল ৩০০০ ছাত্র এবং বিপুল গ্রন্থাগার - এই বিপুল জ্ঞানচর্চার পরিকাঠামো তুর্কি লুঠেরাদের আক্রমনে বিনষ্ট হয়ে যায়।
জগদল
রামপাল দ্বাদশ শতে গঙ্গা আর করতোয়ার মাঝে, বারেন্দ্র ক্ষেত্রে জগদল বিহারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বখতিয়ার ১২০৩ সালে এটি অন্যান্য কেন্দ্রের মত ধ্বংস করে। এই খুব কম সময়ে বিভূতিচন্দ্র, দানশীল, শুভঙ্কর, মোক্ষকরগুপ্তর মত ছাত্র তৈরি করেছিল এই বিহার।
No comments:
Post a Comment