তাঁকে কুর্ণিশ। তাঁর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় নিয়ে বাৎচিত হল, সেটা আপনাদের, আমাদের সক্কলের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক।
---
পল্লব বললেন ওই বৈকুণ্ঠ দেখানো আর দর্পনারায়ণ কে শায়েস্তা করেছিলেন বলেই তিনি ভিলেন। খোদ বঙ্কিমচন্দ্র খিস্তি করতে ছাড়েননি।
অথচ ইতিহাস যথাযথ ভাবে অধ্যায়ন করলে দেখা যায়, তিনি ছিলেন সম্ভবত বঙ্গের ইতিহাসে সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক। মাত্র দু হাজার বরকন্দাজ দিয়ে পুরো বঙ্গের ল এন্ড অর্ডার ঠিক রেখেছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রিত ছিল, অরাজকতা হয়নি, সু শাসন ছিল, যুদ্ধ বিগ্রহ হয়নি, দিল্লিতে টাকা পাঠানো কখনো বন্ধ হয়নি, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার সহ অনেক ভাল কাজও হয়েছিল। অন্যায় যে একেবারে করেন নি তা নয়, শতভাগ নিষ্কলুষ লোক অসম্ভব জিনিষ।
আমিও মনে করি বঙ্গের ইতিহাসে ইনি একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব।
আওরঙ্গজেবের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে( যদুবাবুও বাদ যাননি ) । আওরঙ্গজেব কিন্তু নিজের নাতিকে সরিয়ে মুর্শিদকুলি জাফর খাঁ র ওপর ভরসা রেখেছিলেন। বর্ধমানের গন্ডগোলও মিটে গিয়েছিল। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই, পাবলিক হেলথ নিয়ে কাজ করি, সময় জুটলে কিঞ্চিৎ অধ্যায়ন করি আগ্রহ আছে বলে।
পল্লব বললেন, উল্লিখিত ঘটনা রিয়াজুস সালাতিন নামক বঙ্গের ইতিহাস বিষয়ক পুস্তকে বর্ণিত আছে, স্টুয়ার্ট সাহেবের বঙ্গের ইতিহাস পুস্তকেও এসবের উল্লেখ আছে, তবে তিনি রিয়াজুস সালাতিন অনুসরণ করেই লিখেছেন। দুর্ভাগ্য এই যে, এর বাইরে শুধুমাত্র বঙ্গের ইতিহাস নিয়ে রচিত প্রামাণ্য পুস্তক নেই বললেই চলে। সিয়ার ই মুতাখারিন পুস্তকে অনেক ঘটনার উল্লেখ থাকলেও লেখক সম্ভবত নিরপেক্ষ থাকতে পারেন নি, মুর্শিদকুলি র আমলেই লেখকের পরিবারের সঙ্গে বিষয় সম্পত্তি নিয়ে সরকারের গন্ডগোল বাধে, তাই তিনি পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতি অনুরক্ত হন, উল্লিখিত পুস্তক তিনি উৎসর্গ করেছিলেন হেস্টিংস সাহেব কে। তদসত্বেও পুস্তকটি পঠিত হবার দাবি রাখে,আকারে বৃহৎ হলেও।
মুর্শিদকুলি খাঁ নাজিম এবং দিওযান ( এক পর্যায়ে উভয় পদ) হিসেবে দীর্ঘ সময় দ্বায়িত্ব পালন করেছেন, ওই সময়কালে বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উত্থানপতন এর ঘটনা হিন্দুস্তানে ঘটেছে, তিনি দক্ষতার সঙ্গে বঙ্গের পরিস্থিতি সামলেছেন। শোভা সিং আর রহিম খাঁ র বিদ্রোহ বঙ্গদেশকে বেসামাল করে ফেলেছিল, বর্ধমান এর জমিদার খোদ সম্রাটের প্রিয়পাত্র ছিলেন, আওরঙ্গজেবের নিজ স্বাক্ষরিত ফরমান নিয়ে এরা জমিদারি চালাতেন। আজিমুসসান ব্যর্থ হলে মুর্শিদকুলি তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পূর্ববঙ্গের সীতারামের বিদ্রোহও তিনি দমন করেন। বঙ্কিমবাবু অবশ্য তার নভেলে সীতারাম কে গ্লোরীফাই করেছেন।
মুর্শিদকুলি রাজপরিবারের কেউ ছিলেন না, অতি সামান্য অবস্থা থেকে কঠোর পরিশ্রম করে নিজ যোগ্যতায় উচ্চপদস্থ হন। সম্রাট স্বজনপ্রীতি করেন নি।
মুর্শিদকুলি র প্রশাসনিক ব্যবস্থা এ যুগের প্রশাসকদের জন্যেও অনুকরণীয় হতে পারে। প্রশাসক হিসেবে তার অবস্থান শায়েস্তা খাঁ বা মীর জুমলার উর্দ্ধে।
আমরা লিখলাম, খুবই ব্যতিক্রমী ইতিহাসবোধ।
বাংলার তিন বিখ্যাত নবাবই তাদের হুনর দেখিয়ে গিয়েছে। মুর্শিদকুলি ভিত তৈরি করেছেন স্থিতিশীলতা এনেছেন। তার পরে বেশ বড় টালমাটাল লুঠেরা বর্গীদের হঠিয়েছেন তারপরে পাঁচ বছর বাংলা গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন। বিপুল তাকাভি ঋণ দিয়েছিলেন কৃষিকে গড়তে। সেই ঐতিহ্য সিরাজ পেয়েছিলেন কিন্তু সময় পেলেন না, সুশীলবাবুর বক্তব্য সিংহাসনে ওঠার পরে সিরাজ অন্য মানুষ। ফরাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, দাদুর মত ইংরেজদের দেখতে পারতেন না। যে জন্যে ইংরেজরা পলাশীর আগে ফরাসডাঙ্গা দখল করে, যাতে ফরাসীদের কোমর ভেঙ্গে দেওয়া যায়, পলাশী জয়টা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়। সিরাজ সিংহাসন রাখতে পারলে বিশ্ব ইতিহাসের মোড় ঘোরাটা খুব সহজ হত না।
উত্তরে পল্লব বললেন, অনেকে এদের বাঙালি বিরোধী বলেন, কিন্তু আমার তা মনে হয় না, এরা তো বলতে গেলে বাঙালিতেই পরিণত হয়েছিলেন। সিরাজ সফল হলে হয়ত বঙ্গের ইতিহাস অন্যরকম হত। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের লোকদের আজকের দিন দেখতে হত না।
ওদিকে টিপু সুলতান অনেক চেষ্টা করেও পারলেন না, বিশ্বাসঘাতকতা সর্বত্রই
আমরা বললাম, কে কী বললেন তাতে বাংলার অন্তত কিছুই আসে যায় না। এরা যে সময়ে রাজত্ব করেছেন সে সময় চাষী কারিগর হকার তোল্লাই পেয়েছে বাংলা তোল্লাই পেয়েছে। এবং সেটাই শেষ স্বচ্ছলতার সময় - তারপরে পতন।
সিরাজ সফল হলে বক্সার হত না, বক্সার না হলে দাক্ষিণাত্য জয় হত না এবং শ্রীরঙ্গপত্তনমের টিপুর সঙ্গে যুদ্ধ অবদিই ঘটনা গড়াত না। বাংলার লুঠ আর উদ্বৃত্তে ইওরোপিয় শিল্পায়নের ভর্তুকি যেত না। শুধু দাস ব্যবসার ইয়দ্বৃত্ত দিয়ে শিল্পায়ন হত না।
পল্লব শেষ করলেন, শায়েস্তা খাঁর সময় থেকে মুর্শিদকুলীর টাইম পর্যন্ত ইনফ্লেশন হয়নি বলে চলে।
No comments:
Post a Comment